প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকের মেধাবৃত্তি : একটি প্রস্তাবনা - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকের মেধাবৃত্তি : একটি প্রস্তাবনা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। কোনো জাতির উচ্চশিক্ষা কতখানি উন্নত হবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে সেই জাতির প্রাথমিক শিক্ষার ওপর। কোনো দালানের ভিত্তি দুর্বল হলে যেমন বহুতল অট্টালিকা দুর্বল, ভঙ্গুর ও ক্ষণস্থায়ী হয়, তেমনই শিক্ষার ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষা দুর্বল হলে তা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে বাধ্য।

বস্তুত ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার গতি ঊর্ধমুখীই ছিল। ১৮৫৪ সালে চার্লস উডের শিক্ষা প্রস্তাব ছিল ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক বাংলার শিক্ষাব্যবস্থায় আধুনিকায়নের প্রথম পদক্ষেপ। শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার ও প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার জন্য লর্ড কার্জনের ১৯১০ সালে উপস্থাপিত বিলটি আইন পরিষদে খারিজ হলেও পৌর এলাকায় প্রথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার একটি বিল পাশ হয়।

১৯৩০ সালে বেঙ্গল প্রাথমিক শিক্ষা আইন প্রণীত হয়। উইলিয়াম অ্যাডাম আধুনিক প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তনে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও প্রাথমিক বৃত্তির প্রচলনসহ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়।

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষককে সরকারীকরণের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষায় গতির সঞ্চার করেন।

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার আদর্শের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এবং ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষককে জাতীয়করণ করেন। ২০১৯ সাল থেকে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা, ‘ভিশন-২০২১ অর্জনের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় ইন্টারনেট সংযোগ ও কম্পিউটার বিতরণ প্রভৃতিসহ হাজারো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার।

এ নাতিদীর্ঘ ইতিহাসে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারে সম্মুখপানে এগিয়ে চলার ধারাবাহিকতাই পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর থেকে দীর্ঘ প্রায় আঠারো মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের (বিশেষ করে প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকের) যে ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তা তাদের সারা জীবনেও পূরণ হওয়ার নয়।

উদ্ভূত পরিস্থিতি এই স্বল্প পরিসরে বলতে গেলে প্রথমেই আসে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার কথা। পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের একটি উৎকৃষ্ট পন্থা হলো প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। এটি শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোনিবেশ, উৎসাহ ও উদ্দীপনা এবং উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে একটি চমৎকার প্রেরণাও বটে। আর্থিকভাবে অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এ বৃত্তিব্যবস্থাপনা একটি আশীর্বাদস্বরূপ।

২০০৯ সালের পূর্ব পর্যন্ত প্রতিবছর বার্ষিক পরীক্ষার পর আলাদাভাবে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। প্রতিটি থানায় কোটার ভিত্তিতে একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে ধন্য হতো। পিইসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে এর ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির জন্য বাছাই করে পিইসি পরীক্ষার কয়েক মাস পর বৃত্তিপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হতো।

একইভাবে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে মেধার মূল্যায়ন করা হতো। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ বৃত্তিব্যবস্থাপনা শিক্ষাক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ২০২০ ও ২০২১ সাল-এ দুবছর ধরে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেল। তাদের এ বঞ্চনা পূরণ হবে না সারা জীবনেও।

অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাম্প্রতিক ঘোষণায় আশার আলো ফুটে উঠেছে। শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন নিয়ে একটি গণমাধ্যমের ফেসবুক লাইভে সংযুক্ত হয়ে তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষাক্রমের পরিবর্তনের কারণে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা না থাকলেও বৃত্তি ও সনদের ব্যবস্থা থাকবে।’

প্রস্তাবনা : করোনাকালীন দুই বছরের প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিকের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন ও অনুপ্রেরণা প্রদানের মহান উদ্দেশ্য সামনে রেখে কোনোভাবে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা যায় কি না, তা ভেবে দেখা যেতে পারে। এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে মেধার মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত এ দুই বছরের মেধাবী শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা নীতিনির্ধারকদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবেন বলে আমার বিশ্বাস।

লেখক :  মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রধান শিক্ষক, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল, ঢাকা

শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003838062286377