প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানের সময় নিয়ে বৈষম্য - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানের সময় নিয়ে বৈষম্য

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২০২০ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটির তালিকা ও পাঠদানের সময়সূচি প্রকাশ করা হয় গত ২৬ ডিসেম্বর। প্রকাশিত তালিকায় বিদ্যালয়ের ছুটি আগের চেয়ে ১০দিন বাড়িয়ে ৮৫দিন করা হয়েছে। একইসাথে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানের সময় নির্ধারণ করা হয়। ছুটির তালিকায় এক শিফটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানের সময় ৯টা হতে ৩টা ১৫ মিনিট এবং ২ শিফটের বিদ্যালয়ের পাঠদানের ৯টা হতে ৪টা পর্যন্ত করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই রকম পাঠদানের সময় নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও পাঠদানের সময় দুই রকম করার বিষয়টি সমালোচিত হয়েছে। একইসাথে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা করার দাবি তুলেছেন শিক্ষকরা। 

প্রকাশিত ছুটির তালিকা অনুযায়ী, ২০২০ শিক্ষাবর্ষে এক শিফটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩ টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ও দুই শিফটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পরিচালিত হবে। তবে, প্রতি বৃহস্পতিবার এক শিফটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২ টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত ও দুই শিফটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত পরিচালিত হবে।

শিক্ষকরা নির্ধারিত পাঠদানের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, একই সাথে নিয়োগ পেয়ে ও একই স্কেলে বেতন পেলেও কেউ ৩টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কাজ করবে, আবার কাউকে ৪টা পর্যন্ত কাজ করতে হবে যা মেনে নেয়া যায় না। এটা কি বৈষম্য নয়? প্রশ্ন তোলেন তারা। শিক্ষকরা বলেন, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষকদের বৈষম্যে রাখা যাবে না। শিক্ষকরা এখনো তাদের কাঙ্খিত বেতন পায়নি। শিক্ষকরা আরও বলেন, একই গ্রেডে বেতন পেয়ে কোন শিক্ষক ৩টা ১৫ মিনিটে কাজ শেষ করবেন কেউ বিকেল ৪টায়। এটা অবশ্যই বৈষম্য। আর ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে রাখাও শিক্ষকদের জন্য চ্যালেঞ্জিং।  

শিক্ষকরা আরও বলেন, সরকার শিশুদের পড়ার চাপ কমিয়ে খেলাধুলার মাধ্যমে আনন্দময় শিক্ষার কথা বলছে। অপরদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট সময় সূচি বিকেল ৪টা পর্যন্ত করছে। যেখানে সর্বমহল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা তথা শিক্ষার বৈষম্য দূর করতে বলা হয়েছে। কিন্তু গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কিছু কর্মকর্তা এ ধরণের বৈষম্য বারবার সৃষ্টি করে শিক্ষকদের দুই বা ততোধিক ভাগে বিভক্ত করার অপচেষ্টা করছে। 

প্রাথমিকের নতুন এই সময়সূচি বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। সমিতির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত করার দাবি জানাচ্ছি। একই দেশে একই সাথে নিয়োগ পেয়ে কেউ ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত কাজ করবে, আবার কেউ ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত কাজ করবে তা মেনে নেয়া যায় না। এ সময় সূচি পরিবর্তন বা বাতিল করে বৈষম্য দূর করা না হলে প্রাথমিকের সময়সূচী পরিবর্তনের দাবিতেও আন্দোলনে নামবে শিক্ষকরা।

এদিকে প্রাথমিক দুই রকম সময় সূচি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রবীণ শিক্ষক নেতা ও বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বৈষম্য পছন্দ করতেন না। তিনি সারাজীবন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষায় বৈষম্য দূর করতে বর্তমান সরকার বদ্ধ পরিকর। তবুও, প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অনেকটা প্রাথমিক শিক্ষায় বৈষম্য সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের যেসব কর্মকর্তা এভাবে বারবার বৈষম্য সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, তাদের চিন্হিত করতে হবে। 

এদিকে প্রাথমিকের পাঠদানের সময় কমানোর দাবি জানিয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির নেতারা।  গত ২৮ ডিসেম্বর আয়োজিত এক সভায় সমিতির শিক্ষক নেতরা বলেন,  বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে। আর শেষ হয় বিকাল সোয়া ৪টায়। বিদ্যালয়ে পাঠদানের সময় বেশি হওয়ায় কোমলমতি শিশুদের বেশি সময়ে বিদ্যালয়ে ধরে রাখা যায় না। ফলে দিন দিন শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই, বিদ্যালয়ের পাঠদানের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকলে ৩টা পর্যন্ত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান শিক্ষক নেতারা। 

নতুন এই সময়সূচী নিয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ এই সূচীতে খুশি হলেও অধিকাংশই খুশি নন। অভিভাবকদের দাবি, প্রাথমিক বিদ্যালয় হচ্ছে কোমলমতি শিশুদের জন্য আর এখানে এই শিশুদের যদি এই সময়সূচীর মধ্যে বিদ্যালয়ে আবদ্ধ করে রাখা হয় তাহলে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটা অসম্ভব। কেননা এই বয়সী শিশুদের বইয়ে আবদ্ধ করে না রেখে খেলাধুলা বিনোদনের মধ্যে রাখলেই বেশি শিখবে এবং মানসিক বিকাশ ঘটবে।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.007282018661499