প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনন্য উদ্যোগ - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনন্য উদ্যোগ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি |

সারাবছর হাত খরচের টাকা জমিয়ে একসঙ্গে ১ লাখ ১১ হাজার ৪৯০ টাকা পেলো পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের  বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখাসহ তাদের মাঝে সঞ্চয়ী মনোভাব সৃষ্টি করার জন্য টাকা জমানোর ওই অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

স্কুলে যাওয়ার সময় সকল বাবা-মা হাত খরচের জন্য সাধ্যমতো সন্তানদের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন। এই টাকা দিয়ে তারা স্কুলের ধারে দোকান থেকে নানান ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে থাকে। এসব খাবারের বেশির ভাগই মানসম্মত না হওয়ায় অনেক সময় শিশুরা পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন  রোগে আক্রান্ত হয়।

 

কর্তৃপক্ষ পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সপ্তাহের চারদিন হাত খরচের টাকা নিয়ে তা ব্যাংকে জমা রাখেন। আর শিক্ষাবর্ষ শেষে তারা শিক্ষার্থীদের এক বছরের জমানো টাকা এক সঙ্গে ফেরত দেন। এতে করে বিশেষ করে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা এক সঙ্গে কয়েক হাজার করে টাকা পেয়ে তারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি, পোশাক তৈরিসহ অন্যান্য খরচের টাকা নিজেরাই যোগান দিতে পারছে।

গতকাল ওই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ৫১ জন শিক্ষার্থীর হাতে তাদের জমানো এক লাখ ১১ হাজার ৪৯০ টাকা তুলে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১০৫ টাকা ফেরত পায় লৌভন নামের এক শিক্ষার্থী। আদিব ও রোদেলা পায় ৬ হাজার ২২০ টাকা করে। ন্যূনতম দুই হাজার টাকার নিচে পায়নি কোনো শিক্ষার্থী।

টাকা বিতরণের সময় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিন্নাজ আলী, প্রধান শিক্ষক নুর আজমসহ স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থী লৌভন জানায়, আমি স্কুলে আসার সময় বাবা আমাকে খাওয়ার জন্য ১০-২০ টাকা করে দেন। সঙ্গে দুপুরে খাওয়ার জন্য টিফিনও স্কুলে নিয়ে আসি।

স্যারদের কথামতো আমি বাইরের দোকান থেকে কিছু কিনে না খেয়ে ওই টাকা স্যারকে জমা দেই। আজ আমি এক সঙ্গে ১০ হাজার ১০৫ টাকা পেলাম। আমার খুব আনন্দ লাগছে। ওই স্কুলের শিক্ষক আতাউর রহমান জানান, তাদের ক্লাস নেয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থী বলে-স্যার পেট ব্যথা করছে। সকালে পাতলা পায়খানা হয়েছে। ভালো লাগছে না। পড়া হয়নি।

বিষয়টি আমাকে চিন্তায় ফেলে। অনেক চিন্তা করে দেখি তারা স্কুলের বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার জন্যই এই সমস্যা হচ্ছে। তাদের বাইরের খাবার বন্ধ করলে আর এ সমস্যা থাকবে না। বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করার পর সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেই বাড়ি থেকে আনা শিক্ষার্থীদের টাকা আমরা স্কুলে জমা রাখবো।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটিও আমাদের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়। এতে করে শিক্ষার্থীদের টাকা জমা নিলে তারা আর বাইরের খাবার খেতে পারবে না। সেই সঙ্গে তাদের মাঝে সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে উঠবে। প্রাথমিকভাবে গত বছর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমানো শুরু করি। কিন্তু তারা সচেতন না হওয়ায় বছর শেষে জমা হয় মাত্র ১৮ হাজার ৩৭০ টাকা। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে এসেছে সাফল্য।

এবার পঞ্চম শ্রেণির ৫১ জন শিক্ষার্থী সারাবছর জমিয়েছে এক লাখ ১১ হাজার টাকারও বেশি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুর আজম বলেন, সহকারী শিক্ষক আতাউর রহমানের পরামর্শে আমরা পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমানো শুরু করি। আমাদের বিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র। তারা সবাই কম বেশি টাকা জমা করে।

জমাকৃত টাকা থেকে অনেক শিক্ষার্থী খাতা-কলম কেনার টাকাও অগ্রিম নিয়ে যায়। ছুটির দিনেও তারা আমার বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় টাকা নিয়ে আসে। বছর  শেষে একসঙ্গে এই টাকা পেয়ে তারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিসহ অন্যান্য খরচ করতে পারবে। শুধু পঞ্চম শ্রেণিই নয়, আমরা চেষ্টা করছি আগামী বছর আরো অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরকেও এই প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসবো।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিন্নাজ আলী বলেন, মীরগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আমাদের জেলার মধ্যে একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষকদের আন্তরিকতায় এটা সম্ভব হয়েছে। এই স্কুলের ফলাফলও খুব ভালো। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য রয়েছে।

স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমা করে বছর শেষে একসঙ্গে ফেরত দেয়া একটি অনন্য উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী এই টাকা দিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির খরচ যোগাতে পারছে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা জমানোর সিদ্ধান্ত আমাদের আছে। আমাদের মতো অন্য স্কুলও এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারলে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী এতে উপকৃত হবে।

কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063409805297852