সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। সেই মানুষের সঙ্গে অন্য কোনো সৃষ্টি কিংবা মানুষেরই পার্থক্য গড়ে দেয় শিক্ষা। উত্তম ব্যক্তিরূপে গড়ে তোলার জন্য, সুনাগরিক রূপে রাষ্ট্রে ভূমিকা রাখার জন্য শিক্ষা যে অপরিহার্য, সে বির্তকের অবসান ঘটেছে অনেক আগেই। সর্বজনীন শিক্ষারূপে বর্তমান অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের উন্নতির দাবি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রেও প্রাথমিক শিক্ষার ভিতটুকু মজবুত করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই অত্যন্ত সচেতনভাবে এ কাজটি করা হচ্ছে।
২০১৮ খ্রিস্টাব্দে ভেবে দেখার দরকার রয়েছে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা সঠিক পথে কি এগুচ্ছে? সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এ শিক্ষার চ্যালেঞ্জসমূহকে আমরা কি মোকাবিলা করতে সক্ষম? আবার অনেকেই বলছেন প্রাথমিক শিক্ষার আমূল পরিবর্তন দরকার। তাহলে আমরা কি কোনো নতুন নীতি অনুসরণ করব? প্রশ্নের উত্তরগুলো দেবার জন্যই এই লেখা।
স্বপ্নের মধ্যে বিচরণ না করে বাস্তবতার আলোকে নীতি গ্রহণই উত্তম এবং কার্যকর। আমরা ২০৪১ খ্রিস্টাব্দে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি। এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষাকেও উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড় করাতে হবে। আমরা সাহস দেখিয়েছি সারা বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ করার। অবকাঠামো, শিক্ষক নিয়োগ, শ্রেণিকক্ষ সজ্জিতকরণ, নৈতিকতা শিক্ষাদান, প্রাক প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ চালু, মিড ডে মিল চালু করাসহ অন্যান্য বিষয় ধীরে ধীরে সংযোজন করা হচ্ছে।
বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই মনে হচ্ছে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েই ক্লান্ত। কেউ শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে, কেউ শিক্ষাগ্রহণ করতে গিয়ে। অনেক অভিভাবক অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠেন কিংবা হাল ছেড়ে দিতে চান নিজের সন্তানকে নিয়ে। তাঁদের ভাবনা—প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি কোনোরকমভাবে পেরোলেই চলে। ২০ কিংবা ২৪ বছর পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণের জন্য মানবিক কিংবা আর্থিকভাবে প্রস্তুত নন। আমরা ২০৪১ খ্রিস্টাব্দে উন্নত বাংলাদেশ চাচ্ছি। এজন্য আমাদের অবশ্যই প্রতিটি শিক্ষার্থীর সময়কাল বাড়ানো দরকার; অন্যথায় সুনাগরিক, দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
এক্ষেত্রে অভিভাবকদের একদিকে যেমন ধৈর্যের পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হতে হবে, একইভাবে শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষকদের মান ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। বিষয়টিকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। অনেকক্ষেত্রে শিক্ষকের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে অবহেলা, অনীহা শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়বিমুখ করছে। আবার অভিভাবকদের সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। প্রতিটি অভিভাবককে অনুধাবন করতে হবে শিক্ষাই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং লাভজনক বিনিয়োগ। এ বিনিয়োগের মাধ্যমে অভিভাবক, পরিবার, গ্রাম, দেশ থেকে শুরু করে সমগ্র পৃথিবী সমৃদ্ধ হবে।
গণিতের হিসাব খুবই সহজ। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোই হবে সকল স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু। এর জন্য প্রাক-প্রাথমিক প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রিক গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে সুস্থরূপে গড়ে তুলতে হবে। তাদের দেশপ্রেম থাকবে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে। প্রাথমিক বিদ্যালয় হবে সকল আলোর কেন্দ্রবিন্দু। আঁধার দূর করতে প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকবে সজাগ। নিয়ম কিংবা শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে তারা হবে আপসহীন। শিশুরা হবে নিষ্পাপ, বড় হবে স্বপ্ন দেখতে দেখতে। বড় হবার পর শুধু দায়িত্ব থাকবে স্বপ্ন পূরণ করার। আর কিছুই দরকার নেই—শুধু আমাদের শিশুদের স্বপ্ন দেখানোর স্থান হোক প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্বপ্ন রুখবার সাধ্য কারো থাকবে না।
নরসিংদী