প্রাথমিক শিক্ষায় ‘ইনোভেশন’ আনবে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষায় ‘ইনোভেশন’ আনবে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন

মো. সামিউল হাসান |

জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা নিশ্চিত করা, সেবার মান বৃদ্ধি এবং সেবাকে অধিকতর জনবান্ধব করার জন্য সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জনপ্রশাসনে কাজের গতিশীলতা এবং উদ্ভাবনী দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নাগরিক সেবা দ্রুত ও সহজিকরণের পন্থা উদ্ভাবন ও চর্চার লক্ষ্যে সরকার প্রত্যেক মন্ত্রণালয়/বিভাগ, প্রতিটি অধিদপ্তর/সংস্থা, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে একটি করে ইনোভেশন টিম গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন ৮ এপ্রিল ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা হয়, যা পরবর্তী সমযে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। মন্ত্রণালয়/বিভাগ পর্যায়ে ইনোভেশন টিমের নেতৃত্ব প্রদান করছেন অতিরিক্ত সচিব/যুগ্নসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা যারা চিফ ইনোভেশন অফিসার হিসাবে পরিচিত। অপরদিকে দপ্তর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ইনোভেশন টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইনোভেশন অফিসার। ইনোভেশন টিমের সদস্য সংখ্যা ৫-৬ জন। সে অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশে প্রায় ১০০০ ইনোভেশন টিম গঠিত হয়েছে, যেখানে পাঁচ সহস্রাধিক কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন।

দেশে প্রাথমিক শিক্ষার ইনোভেশন বা উদ্ভাবন একটি বহুল প্রচারিত এবং কাঙ্ক্ষিত ধারণা। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের ‘অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন’ বা এটুআই প্রকল্প কালের সূচনা থেকেই উদ্ভাবন ধারণাটি সম্পৃক্ত। প্রাথমিক শিক্ষায় বিগত কয়েক বছরে এটুআই’র সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ এককভাবেই উদ্ভাবন কার্যক্রম বাস্তবায়নে কাজ করে চলছে। উদ্ভাবনী ধারণা সংগ্রহ ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম এটুআই বাস্তবায়ন পর্বের কিছু বিষয় আছে ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, কিছু বিষয় আছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ-শেখানো কার্যক্রম গতিশীল ও ফলপ্রসূ করার জন্যে, কিছু বিষয় আছে সামগ্রিক প্রাথমিক শিক্ষাকে গতিশীল ও উন্নত করার জন্য।নাগরিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ইনোভেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষায় সেবা প্রদান ও গ্রহণকারী উভয়ই আছেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অংশীজন নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। মানসন্মত ও গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে বিদ্যালয় হতে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় তথা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত কতিপয় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ইনোভেশন বা উদ্ভাবনী ধারণার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় মাঠ পর্যায় হতে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অসংখ্য ইনোভেশন চর্চা হচ্ছে যা প্রাথমিক শিক্ষায় ঈর্ষণীয় সাফল্য এনে দিয়েছে।

ইনোভেশন চর্চা নিয়ে সেবা প্রদানকারীদের অনেকের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন ইনোভেশন (Innovation) বলতে নতুন কোনো কিছু আবিষ্কার করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আবার অনেকেই ইনোভেশন বলতে শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার করে সেবা প্রদানের বিষয়টি চিন্তা করেন। কেউ কেউ ইনোভেশন বাস্তবায়নে অনেক অর্থের প্রয়োজন হবে, এমন ধারণা পোষণ করে ইনোভেটিভ বা উদ্ভাবনী চিন্তা চেতনা করা থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখেন। নাগরিক সেবায় উদ্ভাবন বা ইনোভেশন বলতে মূলত কোনো প্রতিষ্ঠান হতে যে সকল সেবা দীর্ঘদিন দেয়া হচ্ছে। মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এমনভাবে সেবা দেবেন যেনো সেবাগ্রহীতা পূর্বের তুলানায় বিনা হয়রানিতে অতি অল্প সময়ে, অল্প খরচে ও কম যাতায়াত করে সেবা গ্রহণ করতে পারেন। অপরদিকে, সেবা প্রদানকারীর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও পূর্বের তুলনায় কম খরচ, কম সময় লাগবে এবং সেবা প্রদানের প্রক্রিয়াটি টেকসই হবে। এক্ষেত্রে মশা মারতে কামান দাগা অবস্থার সৃষ্টি হলে কাজটি ইনোভেটিভ হবে না। বাংলাদেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে নাগরিক সেবায় উদ্ভাবনের ধারণাটি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে গ্রহণ করা হয়।  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট হতে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম কর্মকর্তাদের নিকট হতে তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনী ধারণা (Innovative Ideas) প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ জনানো হয়। পত্রে পাবলিক সেক্টরে উদ্ভাবন (Innovation) বা নতুন প্রবর্তন বলতে সেবার মানোন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে আরো দক্ষতার সঙ্গে কাজ করাকে বোঝানো হয়েছে। নাগরিকদের বিড়ম্বনা ও ব্যয় হ্রাস এবং তুলনামূলকভাবে কম সময়ে একটি সেবা প্দান নিশ্চিত করা। ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কোনো সমস্যার গতানুগতিক বা রুটিন সমাধানের পরিবর্তে বিকল্প বা নতুন সমাধান বের করা, যা জনগণের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং যার মাধ্যমে-পদ্ধতিগত জটিলতা কমবে;  সেবার মানোন্নয়ন ঘটবে; কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা বাড়বে এবং জনগণের জন্য তা অধিক ফলপ্রসূ হবে । 

সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মেধা, প্রজ্ঞা ও উদ্ভাবনী ধারণাসমূহকে সরকার জনকল্যাণে লাগাতে চায়। এজন্য উদ্ভাবনী ধারণাটি বাস্তবায়নযোগ্য করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। যেমন-প্রস্তাবিত উদ্ভাবনী ধারণাটি সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বা উন্নতি সাধন করবে; প্রস্তাবিত উদ্ভাবনী ধারণাটি সেবা গ্রহীতা শ্রেণির চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে এবং প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনবে; প্রস্তাবিত উদ্ভাবনী ধারণাটি স্থানীয় সমস্যা হ্রাসকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করবে; উদ্ভাবনী ধারণাটি সফল হলে সমজাতীয় অন্য কোনো ক্ষেত্রে বাস্তবায়নযোগ্য হবে এবং অন্যান্য নীতিনির্ধারণী তা মডেল হিসেবে অর্জন করবে। প্রাথমিক শিক্ষায় সহকারী শিক্ষক হতে শুরু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের উদ্ভাবনী ধারণাসমূহ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এবং ব্যাপক সফলতা আসায় প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটছে। 

লেখক : মো. সামিউল হাসান, ইন্সট্রাক্টর (কম্পিউটার সায়েন্স), প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (পিটিআই), গাইবান্ধা 

 

ইউএনওর স্ত্রীর অধিকার চান শিক্ষিকা - dainik shiksha ইউএনওর স্ত্রীর অধিকার চান শিক্ষিকা শিক্ষকরা দেরিতে কলেজে এলে বেতন কাটা - dainik shiksha শিক্ষকরা দেরিতে কলেজে এলে বেতন কাটা যৌন হয়রানির দায়ে ঢাবি শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত - dainik shiksha যৌন হয়রানির দায়ে ঢাবি শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত তিনদিনের ছুটিতে রাজধানীর সড়ক ফাঁকা - dainik shiksha তিনদিনের ছুটিতে রাজধানীর সড়ক ফাঁকা রাবিতে হলে থাকা অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সিট ছাড়ার নির্দেশ - dainik shiksha রাবিতে হলে থাকা অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সিট ছাড়ার নির্দেশ প্রস্তুত হচ্ছে নির্বাচনী ইশতেহার, হবে স্মার্ট বাংলাদেশ - dainik shiksha প্রস্তুত হচ্ছে নির্বাচনী ইশতেহার, হবে স্মার্ট বাংলাদেশ যৌন হয়রানির দায়ে ঢাবি শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত - dainik shiksha যৌন হয়রানির দায়ে ঢাবি শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত দেশে ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা, চার ধরনেই কার্যকর - dainik shiksha দেশে ডেঙ্গু টিকার সফল পরীক্ষা, চার ধরনেই কার্যকর please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034379959106445