প্রাথমিক শিক্ষা: ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলাই পড়তে পারে না - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষা: ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলাই পড়তে পারে না

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৯৮ শতাংশ হলেও এই শিশুরা কতোটা মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলাই পড়তে পারেনা। ইংরেজি ও গণিতে দুর্বলতা তার চাইতেও বেশি। 

"কিছু বাচ্চা অক্ষরই চিনে না"
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই অন্তঃসারশূন্য পাঠের কথা জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নতুন বসতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আকলিমা সুলতানা। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর)  বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সানজানা চৌধুরী।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি নিয়মানুযায়ী শিশুদের বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তি করতে হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ওই শ্রেণীতে পরার দক্ষতা শিশুটির নেই।

"আমরা হয়তো বয়স দেখে একটা বাচ্চাকে ক্লাস থ্রি-তে ভর্তি করলাম, কিন্তু পরে দেখা যায় যে তারা বাংলা ইংরেজি রিডিং পড়তে পারেনা। কিছু বাচ্চা অক্ষরই চিনেনা। এজন্য আমরাও তাদের পড়াতে পারিনা, কিছু বোঝোতে পারিনা। এটা তো আমাদের জন্যও দুর্ভোগ।" বলেন মিসেস সুলতানা।

এর কারণ হিসেবে তিনি জানান এই শিশুদের কখনোই বাড়িতে আলাদাভাবে যত্ন করা হয়না।

একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী রয়েছে, তাদের সবার প্রতি আলাদা আলাদাভাবে নজর দেয়া রীতিমত অসম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মিসেস সুলতানা বলেন, "আমাদের একেকটা ক্লাসে মনে করেন ৫০জন ৬০জন ছাত্র ছাত্রী। এতোজন শিক্ষার্থীদের ধরে ধরে বোঝানো তো সম্ভবনা। একটি শিশুর বাসাতেও কিছু প্র্যাকটিস করতে হয়, পড়তে হয়, হোমওয়ার্ক করতে হয় সেই সাপোর্টটা তারা পায়না। কারণ অনেক বাচ্চার বাবা-মা পড়াশোনা জানেন না।"


"গ্রামের পাকা পায়খানা বানানোর কাজটাও প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা করেন"


দুর্বল শিক্ষার্থীদের কাছে পঠন প্রক্রিয়া সহজ করে তুলতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষকের সেই প্রশিক্ষণ নিয়মিত হয়না। মিসেস সুলতানারও সর্বশেষ প্রশিক্ষণ হয়েছিল ২০১৪ সালে। তাও প্রশ্নপত্র নিয়ে।

এরমধ্যে বিষয়ভিত্তিক তার আর কোন প্রশিক্ষণ হয়নি।

এই শিক্ষিকার মতো বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষকের বছরের পর বছর কোন ধরণের প্রশিক্ষণ হয়না।


বাংলাদেশে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের এই হার এশিয়ায় মধ্যে সবচেয়ে কম। ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে।

একে তো শিক্ষার্থীদের অনুপাতে প্রয়োজনীয় দক্ষ শিক্ষকের অভাব। তারমধ্যে যে ক'জন আছেন তারাও তাদের পুরো সময় পাঠদানে দিতে পারেন না।

সব মিলিয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব শেখ ইকরামুল কবির।

"সরকারের এমন কোন কাজ নাই যেমন ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভোটগ্রহণ এমনকি গ্রামের পাকা পায়খানা বানানোর কাজটাও প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা করেন। এবং এই সব কাজ স্কুল খোলা থাকার সময় হয়। ফলে শিক্ষকদের যতো শিক্ষা ঘণ্টা পাঠদান করানোর কথা ততোক্ষণ তারা পাঠদান করাতে পারছেনা।" বলেন মিঃ কবির।

শিক্ষকদের অল্প বেতন, সেইসঙ্গে মর্যাদাও কম হওয়ায় এই পেশার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

এসব কারণে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া একজন শিক্ষার্থীর যে পরিমাণ জ্ঞান থাকা দরকার তার অর্ধেকও তারা অর্জন করতে পারেনা।


দুর্বল শিক্ষার্থীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ


এমন অবস্থায় শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রাথমিকের প্রতিটি দুর্বল শিক্ষার্থীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়ার জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বিশ্বব্যাংক এবং ইউনেস্কোর প্রতিবেদনগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী বছরের মধ্যে শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি দুর্বল শিক্ষার্থীদের সবল করে তোলার বিশেষ উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আকরাম আল হোসেন।

এতো কম সময়ে এবং এতো সীমাবদ্ধতার মধ্যে তারা এই লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে অর্জন করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মিঃ হোসেন বহুমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেয়ার কথা জানান।

"প্রথমত আমাদের স্কুলগুলোর শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবাইকে বলা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার মান তদারকি করতে। আমাদের লক্ষ্য দুর্বল স্কুল এবং দুর্বল শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করা। এবং বিশেষ মনোযোগের মাধ্যমে তাদের সবল করে তোলা।" বলেন মিঃ হোসেন।

এজন্য প্রাথমিক ও প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েক হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষকতার বাইরে তাদের যেন বাড়তি কাজ করতে না হয় সেদিকটাও মনিটর করা হবে বলে জানান তিনি।

"প্রতিটি স্কুলে গণিত অলিম্পিয়াড চালুর ব্যাপারেও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া শিশুদের রিডিং ও রাইটিং এর উন্নয়নে 'ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড' কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। যেখানে প্রতিটি শিশুকে একদিন একটা ইংরেজি শব্দ এবং একটি বাংলা শব্দ শেখানো হবে।"

সব মিলিয়ে ২০২০ সাল নাগাদ প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিটি শিশুকে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে বলে আশাবাদী মিঃ হোসেন।

 

সরকারের মনযোগ সংখ্যায়, মানের দিকে নয়

বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় দুই কোটি ১৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে ২০২০ সালের মধ্যে মান সম্মত শিক্ষা দেয়া রাতারাতি সম্ভব নয় বলে মনে করেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

কেননা প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্য জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রবর্তন করা হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই।

এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের সমন্বয়হীনতার সেইসঙ্গে বিনিয়োগের অভাবকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন

এছাড়া শ্রেণীকক্ষে গুণগত পাঠের বিষয়টি শিক্ষকের দক্ষতার ওপর নির্ভর করলেও সেই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

"সরকার সবার জন্য শিক্ষা বিষয়টার দিকে লক্ষ্য রাখতে গিয়ে শুধু সংখ্যার দিকে মনযোগ দিয়েছে। সংখ্যা কিন্তু আমরা অর্জন করতে পেরেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুরা কতোটা জ্ঞান অর্জন করল, সেটার দিকে দৃষ্টি দেয়া।"

এজন্য শিক্ষার্থীদের বয়স উপযোগী পাঠ্যক্রম সাজানোর পাশাপাশি তাদের উপযোগী শিক্ষা উপকরণ প্রতিটি স্কুলের প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে সরবরাহ করা জরুরি বলে তিনি জানান।

যার জন্য মোটা অংকের বিনিয়োগ প্রয়োজন। কিন্তু পুরো এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ জিডিপির হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে সবচেয়ে কম।

এই খাতে বিনিয়োগ না করলে, শিক্ষকদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে না তুললে, সর্বোপরি প্রাথমিক শিক্ষার আধুনিকায়ন করা না হলে মানোন্নয়ন সম্ভব হবেনা বলে জানান মিসেস চৌধুরী।

এবারের এসডিজি প্রকল্পের লক্ষ্য শুধু শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ানো নয় বরং তাদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা।

এতো সীমাবদ্ধতার মধ্যে সরকার কীভাবে সেই লক্ষ্য অর্জন করবে সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040438175201416