প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষা বাদ দিয়ে সিলেবাস কমান - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষা বাদ দিয়ে সিলেবাস কমান

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে এই করোনাকালে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীরাও। শিশু শ্রেণি থেকে মাস্টার্স, পিএইচডি পর্যন্ত কমবেশি সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঘরে অবরুদ্ধ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে কিংবা অফলাইনে নিজে নিজে পড়াশোনা করে ক্ষতিপূরণের কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু মুশকিলে পড়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থী। চলতি শিক্ষাবছরে তারা হয়তো আর মাত্র চার মাস সময় পাবে। সাধারণ অবস্থায় গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও রমজানের ছুটি মিলিয়ে তাদের দেড় মাস চলে যায়। কিন্তু সেই ছুটির আগেই তারা জানত ছুটিতে কী করতে হবে। কিন্তু এ বছর সে সুযোগটা হয়নি। রোববার (১৭ মে) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, সংবাদমাধ্যমে জানা গেল, সরকার ঈদের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার চিন্তা করছে। আরও বলা হয়েছে, বর্তমান ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দুই ধরনের ভাবনা আছে। একটা হলো সিলেবাস কমিয়ে শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বরে শেষ করা। অন্যটি হলো সিলেবাস না কমিয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টেনে নেওয়া। এই সংবাদ থেকে মনে হচ্ছে, স্কুল খোলার পরপরই যাবতীয় পরীক্ষা নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হবে। এমনিতে জুন মাসে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা হওয়ার কথা, এবার হয়তো স্কুলগুলো আগস্টে হলেও এই পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবে যদি না তাদের নিবৃত্ত করা হয়। কারণ, আমাদের দেশে শিক্ষার আরেক নাম হলো পরীক্ষা। কী পড়া বাকি রয়ে গেল, সে বিষয়ে কিছু না করে পরীক্ষায় কী আসবে, তা নিয়ে শুরু হয়ে যাবে হইহল্লা।

প্রাথমিকের কথাই ধরা যাক। প্রতিবছর জুলাই–আগস্ট মাস থেকে প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয় তাদের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পেছনে বাড়তি সময় ব্যয় করে। উদ্দেশ্য তাদের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল ভালো করা। আমি দেখেছি অনেক বিদ্যালয় জুন-জুলাই মাসের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির সিলেবাস শেষ করে সমাপনী পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে। এই সময় অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা কম নজর পায়। এ বছর যেহেতু ইতিমধ্যে সাড়ে চার মাস চলে গেছে, কাজেই খোলার সঙ্গে সঙ্গে স্কুলগুলো পিএসসি পরীক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতি এড়ানোর একমাত্র উপায় হলো এ বছরের ষাণ্মাসিক ও পিএসসি উভয় পরীক্ষা বাতিল করা। এতে শিশুশিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে না। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও চলতি শিক্ষাবর্ষের সিলেবাস কমিয়ে দিতে পারবে। যদি ষাণ্মাসিক ও পিএসসি পরীক্ষা না হয়, তাহলে স্কুলগুলো শিক্ষাবর্ষে বেশ কিছু বাড়তি দিন পাবে এবং পঞ্চম শ্রেণিসহ সব শ্রেণির পরীক্ষা নভেম্বরের বদলে ডিসেম্বরে নিতে পারবে। যেহেতু বাড়তি চাপ থেকে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েই মুক্ত থাকবে, কাজেই শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে শিক্ষাবর্ষের বাকি সময় পড়াশোনা করে নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। এ কথা ইবতেদায়ি মাদ্রাসার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

অন্যদিকে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা আয়োজনের জন্য বিপুল অর্থ, শ্রম ও সময় সাশ্রয় হবে। মনে রাখা দরকার, দেশজুড়ে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা অনুষ্ঠান একটি বড় কর্মযজ্ঞ। পিএসসি পরীক্ষা না হলে বিশেষ কোনো ক্ষতি হবে না। কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পিএসসি পরীক্ষার ফলাফল অনুসারে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয় না। পিএসসি পরীক্ষার মূল লক্ষ্য প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার চিত্র খুঁজে পাওয়া। যেহেতু ২০২১ সালে জাতীয় শিক্ষার্থী অভীক্ষা (এনএসএ) হওয়ার কথা রয়েছে, কাজেই তাতেও কোনো সমস্যা হবে না।

একই পরিস্থিতির উদ্ভব হবে মাধ্যমিক পর্যায়ে জেএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে। জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় নভেম্বরের প্রথমে। ফলে, এমনিতেই অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবর্ষ দশ মাসের। এ বছর এই পরীক্ষা নিতে হলে তা হবে শিক্ষার্থীদের জন্য জুলুম। এর বদলে চলতি বছর জেএসএসি পরীক্ষা স্থগিত করে সব বিদ্যালয় নিজ নিজ শিক্ষার্থীর বার্ষিক পরীক্ষা নিতে পারে। সেই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নবম শ্রেণির বিভাগ নির্বাচনের কাজটি সম্পন্ন করতে পারে। তাতে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা অন্যদের সঙ্গে ডিসেম্বর মাসে সম্পন্ন করা যাবে। এভাবে ষাণ্মাসিক, প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষা বাদ দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

আমার ধারণা, চলতি শিক্ষাবর্ষ ডিসেম্বরেই শেষ করা যাবে। শুধু প্রত্যেক শ্রেণিতে কিছু বিষয়ের সিলেবাস থেকে কমাতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের তেমন ক্ষতি হবে না। কারণ, শিক্ষাক্রমের সর্পিলাকার বৈশিষ্ট্য। একটা বিষয় একটা শ্রেণিতে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে উচ্চতর শ্রেণিতে বিকশিত হয়। উদাহরণ হিসাবে, গণিতের সংখ্যাপাতনের কার্যক্রম চতুর্থ শ্রেণিতে শেষ হয় কিন্তু সাধারণ চার নিয়মের কার্যক্রম পঞ্চম শ্রেণিতেও চলমান থাকে। প্রায় সব বিষয়ে এই সর্পিলাকার পদ্ধতি রয়েছে। এই বিষয় খেয়াল রাখলেই হবে।

মনে রাখা দরকার, করোনা আমাদের একার সমস্যা নয়। সারা বিশ্বের স্কুলগুলো এই সমস্যায় পড়েছে। যেসব দেশের শিক্ষাবর্ষ জুন-জুলাই মাসে শেষ হয়, তারা কী করেছে, সে খোঁজ নেওয়া যেতে পারে। বেশির ভাগ দেশ শিশুশিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম করেনি। যাদের শিক্ষাবর্ষ শেষ হয়েছে, তারা তাদের শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দিয়েছে। অভিভাবকদের জন্য অধীত সময়ের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে একটা অগ্রগতির বিবরণ দেবে বলেছে। স্কুল খোলার পর যেসব প্রোগ্রাম তারা নিচ্ছে সেখানে পড়ালেখার চেয়েও বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে সামাজিক দূরত্বসহ দুর্যোগ মোকাবিলার নানা বিষয়ে। নজর দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশের ওপর। কারণ, অনেক শিক্ষার্থীই এই সময়ে প্রিয়জনকে হারিয়েছে।

আমরা যতই অনলাইনের কথা বলি না কেন, বিদ্যালয়ের বিকল্প বাসা নয়। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে শুধু পড়ে না। সেখানে সে শেখে কীভাবে বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে হয়, বড়দের সম্মান করতে হয়, ছোটদের স্নেহ করতে হয়। জেনে নেয় বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে এবং বিদ্যালয়ে গিয়ে তাকে কী কী নিয়ম মানতে হয়। শিশুর ঠিকভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বিদ্যালয় খোলার পর শিক্ষার্থীদের করণীয় নির্ধারণ করার সময় আমরা যেন এসব কথা মনে রাখি।

মুনির হাসান : বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক।

আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0076348781585693