প্রাথমিক স্তরে মূল্যায়ন কীভাবে জ্ঞান অর্জনে সফলতা আনতে পারে - দৈনিকশিক্ষা

প্রাথমিক স্তরে মূল্যায়ন কীভাবে জ্ঞান অর্জনে সফলতা আনতে পারে

মো. সিদ্দিকুর রহমান |
Siddiq sir
মো. সিদ্দিকুর রহমান

দৈনিক শিক্ষায় “পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বন্ধের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন হোক” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পরই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী তাৎক্ষণিক পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।

মন্ত্রীকে এদেশের শিশু শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সুধী সমাজের পক্ষ থেকে অভিনন্দন। কারো কারো মতে কঠোর শাসন ও পরীক্ষা ছাড়া শিশু শিক্ষার্থীর জ্ঞান অর্জন বিকাশ সাধন সম্ভব নয়। এ ধারণা সেকালের। লেখা পড়া ও পরীক্ষার ভীতি ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন শিশু মনোবিজ্ঞানীরা।

শিশুরা আনন্দদায়ক পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণে সুযোগ পেলে সে শিক্ষা হবে অত্যন্ত ফলপ্রসু। তাই একনাগাড়ে ক্লাসের পরিবর্তে ফাঁকে ফাঁকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি খেলাধুলা, অঙ্কন, বিতর্ক অনুষ্ঠান সন্নিবেশিত করা হলে সে শিক্ষা হবে আনন্দদায়ক ও অধিকতর কার্যকর।

পাঠের প্রয়োজনে দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করা বাৎসরিক পরিকল্পনা অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। মৌলিক একাডেমীর প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন না করে সকল শ্রেণির জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রশ্নপুস্তিকা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। প্রশ্নপুস্তিকা যাতে শিক্ষার্থীর সকল জ্ঞান যাচাই হয় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

এ প্রশ্নপুস্তিকা অনুসরণ করে শিক্ষক প্রতিদিন পাঠের মাঝে বা শেষে, অধ্যায় বা গল্প পাঠের শেষে মৌখিক বা লিখিত মূল্যায়ন করবেন। দুর্বল বা অনুপস্থিত শিশুর ক্ষেত্রে বিশেষ পাঠ দিয়ে কাঙ্খিত যোগ্যতা অর্জন করাবেন। পাঠ্যবই হতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। পাঠ্যবই বহির্ভূত সকল প্রশ্ন, রচনা প্যারাগ্রাফ মুক্ত থাকতে হবে। বহুনির্বাচনী প্রশ্নের আধিক্য হ্রাস ও শিশুকে নিজে নিজে পাঠ্য বই দেখে প্রশ্ন তৈরি ও উত্তর লেখার সুযোগ থাকতে হবে।

বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক, ফটোস্ট্যাট মেশিন ও অন্যান্য সুযোগ থাকতে হবে। ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণায় নোট, গাইড, কোচিং সেন্টার/সেন্টারের ব্যাপকতা কিছুটা হলেও কমবে। অভিভাবকদের শিশুকে নিয়ে কোচিং সেন্টারে দৌড়াদৌড়ি, পাঠ্যবইয়ের বহির্ভূত প্রশ্ন, রচনা প্যারাগ্রাফের খোঁজে একাধিক প্রকাশনীর বই কেনা থেকে মুক্তি পাবে বলে বিশ্বাস।

বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি অনেকটা হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসার মতো। ডিগ্রীবিহীন ডাক্তার যেমন লক্ষণ দেখে বা শুনে ঔষধ দিয়ে থাকেন। বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিও অধ্যায় বা পুরো বই থেকে কতিপয় প্রশ্ন দিয়ে শিক্ষার্থীর জ্ঞান যাচাই করা হয়। হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসায় যেমন অনেকক্ষেত্রে ফলদয় হয়না বরং ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দেয়।

তদরুপ বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিও জিপিএ-৫ পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি তথা নানা ক্ষেত্রে হোঁচট খেতে দেখেছি। ঔষধ খেয়ে অসুস্থ থাকা যেমন প্রকৃত চিকিৎসা নয়। তেমনি জ্ঞান অর্জন ছাড়া পাশ কোনো কার্যকর শিক্ষা নয়। দেহের সকল অঙ্গ পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসার পরিপূর্ণতা পেয়ে রোগী যেমন সুস্থ জীবন যাপন লাভ করতে পারে। শিক্ষার্থীও তেমনি তার সার্বিক কর্মকা- পরীক্ষা নেওয়া মাধ্যমে আদর্শ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থা শুধু লিখিতভাবে খানিকটা জ্ঞান যাচাই করা হয়। স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রশ্ন পুস্তিকার মাধ্যমে লিখিত মূল্যায়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীর বাহ্যিক জ্ঞান যাচাই করতে হবে। যেমন রিডিং স্কিল, বিদ্যালয়ে সময় মত আগমন, প্রস্থান, নখ, চুল দাঁত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ। বাথরুম ব্যবহার, জাতীয় দিবসের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, নিয়মিত সমাবেশে যোগদান, জাতীয় ইতিহাস তথা বাঙালি সংষ্কৃতি ও নিজধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান ও ধর্ম পালন, নিজের সিটের সামনে বা পিছনে কাগজ বা অন্য কোনো আবর্জনা পরিষ্কার থাকে কিনা যাচাই, নিজের কাজ নিজে করে কিনা, পাঠ্যবইয়ের বাইরে পত্র-পত্রিকা, গল্পের বই পড়ার অভ্যাস গঠন।

এক কথায় শিক্ষার্থী লিখিত মূল্যায়নের পাশাপাশি সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অন্যান্য সকল গুণাবলি অর্জনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কার্যকর পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার এক্ষেত্রে সকল চ্যালেঞ্জগুলো দূর করতে হবে। পর্যাপ্ত শিক্ষক, শিক্ষকদের ১ম শ্রেণির মর্যাদা, বেতন কাঠামো, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকসহ মূল্যায়নের জন্য ফটোস্ট্যাট মেশিন, কাগজ সহ সমুদয় ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীর সার্বিক মূল্যায়নে ব্যর্থ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

শিক্ষার্থীর শিক্ষা বা মূল্যায়ন ব্যবস্থা বিঘ্ন বা অসহযোগিতা সৃষ্টিকারী যত বড় ক্ষমতাসীন বা কর্মকর্তাই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। আগামী প্রজন্ম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আদর্শ মূল্যায়ন ব্যবস্থার বিকল্প নেই। বাণিজ্যিকভিত্তিক পরীক্ষা ব্যবস্থার মৃত্যু ঘটুক। মেধাবৃত্তি দেওয়ার নামে যাতে পূর্বের ন্যায় পঞ্চম শ্রেণির থানা/উপজেলাভিত্তিক পরীক্ষায় নোট, গাইড, কোচিং ব্যবসার সম্প্রসারিত না হয় সেদিকে সকলকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

শিক্ষাবিদ, শিশু মনোবিজ্ঞানী, সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা দলমত নির্বিশেষে সকলে আদর্শ মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিয়ে ভাববেন। সকলের ভাবনার মাধ্যমে শিশু শিক্ষা ব্যবস্থা শিগগির ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ প্রত্যাশা করছি।

লেখক: আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম।

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040669441223145