ফলাফলই কি মেধা যাচাইয়ের একমাত্র মাপকাঠি? - দৈনিকশিক্ষা

ফলাফলই কি মেধা যাচাইয়ের একমাত্র মাপকাঠি?

মো. জুয়েল মৃধা |

আমাদের দেশে একটা ভুল ধারণা আছে, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলেই মেধাবী বা ছাত্র হিসাবে ভালো। কিন্তু বাস্তবিক ব্যাপারটা এমন না। কারণ ভিন্ন ভিন্ন বিষয় কাজ করার জন্য, ভিন্ন ভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজ করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মেধা ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়। যা শুধু পরীক্ষার ফলাফল দ্বারা পরিমাপ করা সম্ভব হয় না। যে ভালো ডিজাইনার হতে চায় তার মার্কেটিং-এর জ্ঞান না থাকলেও চলবে, আবার যে ম্যানেজমেন্টে ভালো তার জন্য মেকানিজমের জ্ঞান না থাকলেও চলবে। অনেক সময় দেখা যায় পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা, খাতায় লিখে ভরে ফেলা, গ্রেডের বন্যায় ভাসিয়ে ফেলা ছাত্রটি কর্মক্ষেত্রে গিয়ে একটা সাধারণ সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে কাঁপাকাঁপি করে। যা কখনও তার কাছ থেকে কাম্য নয়।

আমার ধারণা মেধা হচ্ছে ক্ষমতার পরিমাপ। আর পরীক্ষা হচ্ছে সেই জ্ঞান কতটুকু ব্যবহার হচ্ছে বা কাজে লাগছে তার পরিমাপ। যদিও আমরা পরীক্ষার ফলাফলকে মেধার পরিচায়ক বা মাপকাঠি হিসাবে মনে করি। কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে শুধু পরীক্ষার ফলাফল আমাদের মেধার সঠিক পরিমাপ করতে পারে না বা জ্ঞানের সঠিক প্রতিফলন ঘটাতে পারে না।

অন্যভাবে বলা যেতে পারে যেমন: দুইজন ব্যক্তিকে এক কিলোমিটার পথ দৌড়ে অতিক্রম করার জন্য একঘণ্টা সময় দেওয়া হলো। দুইজন ব্যক্তিই এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে একঘণ্টা সময় নেয়। কিন্তু এখানে তাদের দক্ষতার সঠিক পরিমাপ করা যাবে না । কেননা একজন ব্যক্তি হয়তো এই পথটুকু পাড়ি দিতে তার সবটুকু শক্তি ব্যবহার করছে। আর অপর ব্যক্তি হয়তো তার অর্ধেক শক্তি ব্যবহার করেছেন।

আবার অনেক সময় দেখা যায় একজন ভালো ছাত্র কোনো কারণে ভালো পরীক্ষা দিতে পারেনি। তাই তার পরীক্ষার ফলাফলও ভালো হয়নি। যার কারণে আমরা বলতে পারি না যে সে মেধাবী না। আবার অনেক সময় দেখা যায় ক্লাসের পিছনের বেঞ্চের ছাত্রটা বা বরাবর পিছনের সারির ফলাফল করা ছাত্রটাও কর্মক্ষেত্রে অনেক ভালো করেন। আর এটার কারণ হচ্ছে বিদ্যালয়ের গতবাঁধা পড়ালেখা তাদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। যার কারণে সেখানে তারা ভালো ফলাফল দেখাতে পারেনি। এছাড়াও আর একটা কারণ আছে একটা ছেলে/মেয়ে কি বিষয়ে পড়বে সেটা তার পরিবারই ঠিক করে দেয়। সে কোনো বিষয় ভালো বুঝে বা পড়তে আগ্রহী সেটা তারা না বুঝেই তাদের উপর একটা বিষয় চাপিয়ে দেয়। যার কারণে তারা অকালে ঝরে পড়ে।

আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় দেখা যায়। বিগত বারো বছর পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করা ছাত্রটাও ভালো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান না। যার ফলে তার বিগত বারো বছরের করা ভালো ফলাফল মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আবার যারা বরাবরই খারাপ ফলাফল করতো তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। তার মানে যারা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলো তারা মেধাবী আর যারা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাননি তারা মেধাবী না। আমার কাছে এমনটা মনে হয় না। কেননা যে এক ঘণ্টার পরীক্ষার মাধ্যমে বিগত বারো বছরের ফলাফল মূল্যহীন হয়ে পড়ে। সেটা দিয়ে কারো সঠিকভাবে মেধা যাচাই করা যায় না। আসলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একটা ধাপ পার হয়ে যাওয়ার পর পূর্ববর্তী ধাপের খুব একটা মূল্য থাকে না। কেননা এইচএসসি পাস করার পর কেউ বলে না তোমার এসএসসিতে ফলাফল কি ছিল, আবার তেমনি ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির হওয়ার পর কেউ জানতে চায় না তোমার এইচএসসিতে ফলাফল কেমন ছিল। তেমনি করে ভালো একটি চাকরি থাকলে বা কর্মক্ষেত্রে ভালো অবস্থান থাকলে কেউ জানতে চায় না তুমি কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছ। কেননা সবাই বর্তমান অবস্থা দিয়ে মেধা যাচাই বা দক্ষতা যাচাই করে থাকে। আবার অনেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে মেধা বা দক্ষতা যাচাই করে থাকেন।

অথচ মোটামুটি একটা বিদ্যালয় বা কলেজ থেকে পড়ে আসা ছেলেটাও ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পান। আবার নরমাল একটা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে পড়া ছাত্রটাও কর্মক্ষেত্রে সফল হয়ে থাকেন। তাই একটা পরীক্ষার ফলাফল আমাদের মেধা যাচাইয়ের একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না বলে আমি মনে করি।

আমরা সব কিছুই অর্জন করতে পারি, যেটা আমরা চাই বা যেটা আমাদের স্বপ্ন। কিন্তু তার জন্য একটু আগুন দরকার, একটা স্পার্ক দরকার। মন থেকে চাইলে কোনো কিছু অসম্ভব না। আর এই প্রতিভাগুলো আমাদের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। যারা সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারেন তারাই জীবনে সফল হতে পারেন। আমরা প্রত্যেকেই নিজের ব্যর্থতার জন্য দায়ী। কেননা এখন আমি যে অবস্থায় আছি সেটা আমার অতীতের কর্মের ফল। আর ভবিষ্যত্-এ আমি যে অবস্থায় অবতীর্ণ হবো সেটা হবে আমার বর্তমান কর্মের ফল। সহজ ভাষায় বলতে গেলে গরিব হয়ে জন্মগ্রহণ করাটা দোষের না, কিন্তু গরিব হয়ে মৃত্যুবরণ করাটা দোষের। কেননা আমরা চাইলেই আমাদের অবস্থার উন্নতি করতে পারি। তাই বলা যায় আসলে শুধু পরীক্ষা ফলাফল কারো মেধার পরিমাপ করতে পারে না। তবে তাই বলে যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন নেই এমনটা নয়। আমাদের সফল হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে। তাই আমরা সবাই স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হবো। শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা রাখবো না।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033698081970215