করোনার কারণে এবার উত্সব হচ্ছে না। ১ জানুয়ারি সবাই বই পাচ্ছেও না। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। করোনা পরিস্থিতি এ অবস্থায় থাকলে ছুটি আরো বাড়তে পারে, এমন ধারণাও পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে কবে শিক্ষার্থীরা বই পাবে, এ নিয়ে নানা প্রশ্ন অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। বিতরণের জন্য এ বছরে সর্বমোট সাড়ে ৩৪ কোটি বই মুদ্রণ করছে সরকার। এর মধ্যে মাধ্যমিকের বই প্রায় ২৪ কোটি ৩৪ লাখ। বাকিটা প্রাথমিক স্তরের। ১ জানুয়ারির আগে মাধ্যমিক স্তরের সব বই না পৌঁছলেও প্রাথমিক স্তরের সব বই-ই পৌঁছে যাবে স্কুলে স্কুলে।
প্রতি বছর গণভবনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের উদ্ধোধন করলেও এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৩১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তুরের বই তুলে দিয়ে এর উদ্ধোধন করা হবে। পরে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বছরের বই তুলে দেওয়া হবে।
তাই উত্সবের মধ্য দিয়ে বই পৌঁছানোর সুযোগ নেই। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা পর্যায়ক্রমে স্কুলে এসে বই নিয়ে যাবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের বই বিতরণের কৌশল ও প্রক্রিয়া একই ধরনের হবে। তিনি বলেন, একেক দিন একেক শ্রেণির বই বিতরণ করা হবে। এর আগে রোল নম্বর অনুযায়ী বইগুলো প্যাকেট করা থাকবে। বই নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের স্কুলে আসার জন্য বলা হবে। এ ক্ষেত্রে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেসব স্কুলে এক শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি এসব ক্ষেত্রে সকাল ও বিকালে আলাদা করে অভিভাবকদের বই নিয়ে যেতে বলা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বিতরণ নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, এনসিটিবির উপজেলা-থানা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত বই পৌঁছানোর দায়িত্ব। বাকি দায়িত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত মাধ্যমিকের ১৩ কোটি এবং প্রাথমিকের ৮ কোটি মিলে ২১ কোটি বই উপজেলা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত পৌঁছানো হয়েছে। বাকি বই পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
তবে মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক বেলাল হোসেনের দাবি কীভাবে বই পৌঁছানো হবে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা এখনো পাননি।
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, এবছর বই উত্সব হবে কি না এবং না হলে কীভাবে শিক্ষার্থীদর হাতে বই পৌঁছানো হবে এ বিষয়ে মাউশির কোনো নির্দেশনা পাইনি। এ বিষয়ে দ্রুত নির্দেশনা দেওয়া উচিত। যদি কোনো নির্দেশনা না আসে তাহলে সামাজিক দূরত্ব মেনে ছোট আকারে হলেও বই উত্সব করার চিন্তা করছি। মাঠ পর্যায়ের একাধিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষকের একই বক্তব্য, স্কুলে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি।
সূত্র জানিয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর স্কুলে বই পৌঁছানোর জন্য ড্রাফট তৈরি করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে এই ড্রাফট অনুমোদন করবে, যাতে দুই মন্ত্রণালয়ের বই পৌঁছানোর প্রক্রিয়া একই ধরনের হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সুস্থ হলেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করছে।
সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ১ জানুয়ারির আগে সব বই পৌঁছবে না। নবম দশম শ্রেণির ১৩টা বইয়ের মধ্যে মূল বই ৮টা। সব বই পৌঁছানো সম্ভব না হলেও এই ৮ বই যথাসময়ে পৌঁছাবে। ব্যাকরণ বইগুলো পরে পৌঁছাবে।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবারে বই উত্সব পালন করা না হলেও প্রতি বছরের মতো এবারও ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তক উদ্বোধন করবেন। করোনার কারণে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রী ও সচিবরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে উপস্থিত হবেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন।