বই বিতরণ উত্সব : আলোকিত মানুষ গড়ার সোপান - দৈনিকশিক্ষা

বই বিতরণ উত্সব : আলোকিত মানুষ গড়ার সোপান

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বইপ্রাপ্তি যে অনাবিল আনন্দের উপলক্ষ হতে পারে সেটা অনুধাবন করা যায় পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উত্সবে। প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি বই বিতরণ উত্সব হয়ে থাকে। ঐ দিন শিক্ষার্থীরা ২/১টি নতুন বই বুকে চেপে রেখে দৌড়াদৌড়ি করে যে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, তা চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। যে আনন্দ অভাবনীয় ও অতুলনীয়। একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হিসেবে কর্মকালীন অভিজ্ঞতা সে কথাই আমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

এক সময় ছিল যখন পূর্বতন শিক্ষার্থীদের থেকে পুরনো, ময়লা, ছেঁড়া, আধা ছেঁড়া—এ ধরনের পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহ করে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করানো হতো। আমি যদি শৈশব ও কৈশোরে ফিরে তাকাই তাহলে স্মরণ করতে পারি বছরের প্রথম ভাগেই পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করার উদ্দেশ্যে সিনিয়র আপুদের কাছ থেকে পুরনো, অনেকাংশে জরাজীর্ণ বই সংগ্রহ করতাম। বিনামূল্যে নতুন বইয়ের কথা হয়তো চিন্তাই করা যেত না। পরবর্তী সময়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু করতে দেখা গেল। পহেলা জানুয়ারি বই বিতরণ করার তো প্রশ্নই ছিল না। বছর শুরুর ২/৩ মাস পর নতুন বই বিতরণ করা হতো; তাও আবার অর্ধেক নতুন বই ও অর্ধেক পুরনো বই। অর্থাত্ একটি শ্রেণিতে ৬টি বই থাকলে ৩টি নতুন বই ও ৩টি পুরাতন বই দেওয়া হতো। এখন বছরের শেষ প্রান্তে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার পর পরই শিক্ষার্থীদের কল্পনায় ভাসতে থাকে নতুন বছরের প্রথম দিনটি। এ দিন তারা নতুন চকচকে রঙিন বইগুলো হাতে পাবে। আর নতুন বইয়ের গন্ধ কার না ভালো লাগে! সব মিলিয়ে ঐ দিনটি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই একটি উত্সবমুখর রূপ ধারণ করে।

প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় অন্যতম কার্যক্রম বিনামূল্য বই বিতরণ। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়। লেখাপড়ায় শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণে সাদা কালো বইয়ের পরিবর্তে রঙিন বই সরবরাহ করা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা অনেক সময় বই না থাকার কারণে বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে নিরুত্সাহিত হয়, নিয়মিত উপস্থিত হয় না ও এক সময় দেখা যায় তারা ঝরে পড়ে। বর্তমানে আমরা অবশ্যই বলতে পারি, প্রায় শতভাগ ভর্তি সম্পন্ন হয়েছে, উপস্থিতি বেড়েছে ও অনেকাংশে ঝরে পড়া কমেছে। পাঠ্যপুস্তকগুলোতে বিষয়বস্তুর বাহুল্য না থাকায় শিক্ষার্থীরা বোঝা না ভেবে সহজেই পাঠগুলো আয়ত্ত করতে পারছে। তাদের ধারণ ক্ষমতা বাড়ছে ও শিখন স্থায়ীরূপ নিচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকগুলোতে আকর্ষণীয় রঙিন চিত্র ব্যবহার করায় শিক্ষকরা পাঠটিকে সহজ করে উপস্থাপন করতে পারছেন। এর ইতিবাচক প্রভাব ছাত্রছাত্রীদের মাঝে দেখা যায়। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায় শতভাগ পাসের কাছাকাছি। এটা আমাদের সাফল্য ও অর্জন। এছাড়াও বিনামূল্যে বছরের প্রথম দিনেই পাঠ্যপুস্তক হাতে তুলে দেবার মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে; যেমন প্রমিত উচ্চারণ শেখানো, প্রতিদিন কমপক্ষে একটি করে বাংলা ও ইংরেজি শব্দ শেখা, বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত বক্তৃতা দেওয়ানো ইত্যাদি।

বিনামূল্যে বই বিতরণ কর্মসূচিকে একটি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত করা যায়। আমরা জানি—জীবন, সমাজ, জাতি এবং বিশ্বকে সুখময় করে তুলতে পুস্তকের ভূমিকা অপরিসীম। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয়, একটি ভালো বই আত্মশুদ্ধির শ্রেষ্ঠ উপায় আর আমাদের আত্মশুদ্ধির চর্চা শুরু হোক কোমল শিশুকাল থেকেই। এই শুদ্ধ শিক্ষার্থীই হবে আমাদের দেশের ভবিষ্যত্। তারাই সৌম্য, সুন্দর, প্রশান্ত, মঙ্গলময় ও আলোকিত দেশ তথা পৃথিবী গড়ে তুলবে।

নরসিংদী

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049440860748291