বঙ্গবন্ধু বিশ্বে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথিকৃৎ - দৈনিকশিক্ষা

বঙ্গবন্ধু বিশ্বে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পথিকৃৎ

দেলোয়ার জাহিদ |

বাংলাদেশের গর্বিত পথ চলায় ইউনেস্কোর চালু করা ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর ক্রিয়েটিভ ইকোনমি’ এসময়ে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত চতুর্থ শিল্পবিপ্লব তথা প্রযুক্তিগত বিপ্লবের উদ্দেশ্য অর্জনের পথিকৃৎ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ভবিষ্যতের উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যার্জনে।

ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। স্বাধীনতোত্তর বাংলাদেশে মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট আজ পরিণত হয়েছে  ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে। যখন স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে, তখন দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে তুলনা করার সময় এসেছে। গত দু'দশকে এর বিকাশ দ্রুততর হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। বিশ্বায়িত অর্থনীতির মূলধারায় পরিচালিত হচ্ছে পুঁজির আধিপত্য অর্থাৎ মুনাফা অৰ্জন । বাংলাদেশ এখন বিশ্ব অর্থনীতি এবং বাজারের সাথে অঙ্গীভূত। এখানে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটছে উৎপাদনসহ অর্থনৈতিক তৎপরতার সমন্বিত কৌশলে ।

ইউনেস্কোর উদ্যোগে বিশ্বে প্রথমবারের মতো সৃজনশীল অর্থনীতিতে অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে যে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে এর  কৃতিত্ব যাবে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের নামে সংস্কারবাদী তৎপরতার ওপর । তার  দ্বিতীয় বিপ্লবের উদ্দেশ্য ছিল সম্পদের সুষম বণ্টন, বৈষম্য দূর, দখল, লুণ্ঠন, কালো টাকার আধিপত্য রোধ জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গুণ ও মানসম্মত শিক্ষা, গবেষণা, কৃষি উন্নয়ণ এবং কর্মসংস্থান। দ্বিতীয় বিপ্লব নামক তত্ত্বের অধীনে সংস্কারবাদী ধারণায় ছিলো একটি  সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র যা অর্জনের জন্য বাকশাল গঠন করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু'র দ্বিতীয় বিপ্লব নিয়ে বোদ্ধা মহলে এখন নেই কোনো আলোচনা, নেই  কোনো গবেষণা। কোথায় যেন হারিয়ে  গেছে সে বিপ্লব। এ নিয়ে যেন একটি ভীতির সংস্কৃতি কাজ করছে। 

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে সত্যি, তবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন এখনো অধরাই  রয়ে গেছে। জীবনযাত্রার প্রত্যাশিত মান অর্জিত হয়নি,  রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, ও অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে রাষ্ট্রে আজো গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি। 

একটি দেশের প্রকৃত উন্নয়নের মাপকাঠি হলো শিক্ষা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আমরা শিক্ষার পরিমাণগত সাফল্যেই  তৃপ্ত, কিন্তু এর বিশ্বমানে উন্নীত করা ও গুণগত পরিবর্তনের  কোনো উদ্যোগ নেই। শীঘ্রই জনসাধারণের মাঝে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সম্পর্কে স্বচ্ছ ও পরিপূর্ণ ধারণা তুলে ধরতে  উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। কারণ বিশ্ব  শ্রমবাজারের উপযোগী  দক্ষ মানবসম্পদ গড়া ও ব্যবসা বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে প্রস্তুতি নেওয়া অতি জরুরি । দেশে বিদেশে চাকরির বাজারের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা পদ্ধতির কোনো মিল নেই। সিলেবাস ও পাঠদান চলছে মান্ধাতা আমলের শিক্ষন পদ্ধতি দিয়ে দেশে নেই কোনো নেই কোনো সৃজনশীল গবেষণা।

স্মৃতির পাতায় জ্বলজ্বলে হয়ে আছে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর। ত্রিশ লক্ষাধিক প্রাণ আর দুই লক্ষাধিক মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করি। এর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নিজের জীবন উৎসর্গ করে ধাপে ধাপে স্বাধিকার সংগ্রামের দিকে অগ্রসর হন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে,  ততদিন মানুষের হৃদয়ে এ মহান নেতার সংগ্রামী গৌরবগাথা অমলিন থাকবে। বঙ্গবন্ধু একজন মহামানব, মানুষের প্রতি ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ছিল যার হৃদয়। নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের অমোঘ এক আকর্ষণ ছিল বঙ্গবন্ধুর মধ্যে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একটি দুর্দান্ত বিজয় অর্জন করেছিল ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে। সে সময় দেশে ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও  অস্থিরতার মুখে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর  শেখ মুজিবুর রহমান দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং বাকশাল গঠন করেন।  একে তিনি  ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

সারাদেশ তখন দুর্ভিক্ষ চলছে। কর্নেল তাহের একটি গোপন সশস্ত্র বিপ্লবী-গণবাহিনী তৈরি করে প্রতিটি সেনানিবাসে গড়ে তোলেন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা। সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি ক্যাডাররা ১৯৭২-৭৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বুর্জোয়া শোষক শ্রেণি নিধনের নামে কমপক্ষে ৪ হাজার ৯২৫টি গুপ্তহত্যা চালায় । সে  সময়টাতেই  জুলফিকার আলীর ভুট্টোর পরামর্শে ‘মুসলিম বাংলা’ কায়েমের লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ, পিডিপিসহ বেশির ভাগ ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দল তৎপরতা শুরু করে। 

বাংলাদেশ  খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও আজও নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা  সম্ভব হয়নি। ফরমালিন  ও ভেজালযুক্ত খাবার খেয়ে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে মরণব্যাধি ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ, যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন ।

দেশে ক্রমাগত বিভাজনের রাজনীতি চর্চার ফলে এখনো কোনো জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি হয়নি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দুর্নীতি দমন এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের  পটভুমিতে  আত্মত্যাগের  মহিমায় মহত্তর বিজয় অর্জনের প্রত্যাশা করতে হবে ।


দেলোয়ার  জাহিদ : সাবেক রিসার্চ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা, (সেন্ট পলস কলেজ), কানাডা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কানাডা ইউনিট কমান্ড নির্বাহী, প্রাবন্ধিক ও রেড ডিয়ার, (আলবার্টা) নিবাসী

আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038270950317383