বছরের পর বছর অনুপস্থিত প্রভাষক, বেতন তোলেন নিয়মিত - দৈনিকশিক্ষা

বছরের পর বছর অনুপস্থিত প্রভাষক, বেতন তোলেন নিয়মিত

নীলফামারী প্রতিনিধি |

নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ সরকারী কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক মাহাবুবা জাহান। কলেজের কোন শিক্ষার্থী তাকে চেনে না। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে তিনি কলেজে আসেন না। ক্লাসও নেন না। বছরের পর বছর কলেজে তিনি অনুপস্থিত। কিন্তু শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার উপস্থিতি বিদ্ধমান! মাস গেলে বেতনও তোলেন ঠিকই।

অভিযোগ উঠেছে উক্ত প্রভাষককে এমন সুবিধা পাইয়ে দিতে খোদ ওই কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ স্বয়ং জড়িত। ঘটনাটি নিয়ে এলাকার অভিভাবকরা দুদক ও নীলফামারী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

লিখিত অভিযোগ ও সরেজমিনে সরকারী কলেজে গিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফের কাছ থেকে জানা যায়, মাহবুবা জামানের বাড়ি রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলায়। তিনি বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন। ২০০১ সালের ১২ জুলাই তিনি কিশোরীগঞ্জ সরকারী কলেজে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। ২০০৩ সালে সরকারী অংশের বেতন পেতে তিনি এমপিওভুক্ত হন। সেই থেকে ওই প্রভাষক কলেজেও আসেন না ক্লাসও নেন না।

তবে ২০০৮ সালে ওই কলেজের সভাপতি নীলফামারী ৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বর্তমানে প্রয়াত কর্নেল (অবঃ) এম মারুফ সাকলাইন। তিনি কলেজ পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর বিষয়টি অবগত হলে ওই প্রভাষকের ৮ মাসের বেতন বন্ধ করে দেন।

অভিযোগ মতে ২০১৪ সালে উক্ত আসনে জাতীয় পার্টির শওকত চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবার পর তিনি কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়ে ওই প্রভাষকের বকেয়াসহ পুনরায় বেতন চালু করে দেন। এতে দেখা যায় ২০১৫ সালের ১৯ অক্টোবর প্রভাষক মাহাবুবা জাহান তার ৮৩৫৬৭১ ইনডেক্স নম্বরে সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখায় তার নামের ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ৩৪০৫৩১৬১ হতে তার বকেয়া বেতনের এক লাখ ২৩ হাজার ২২০ টাকা উত্তোলন করেন। গত ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে ২১ হাজার ৫শ টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোট ১১ লাখ ৪৯ হাজার ৫শ টাকা উত্তোলন করেন। জানা যায় বেসরকারী কিশোরীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজটি ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট জাতীয়করণ হয়। জাতীয়করণের পর কলেজ পরিচালনার কমিটি হতে বাদ পড়েন স্থানীয় সংসদ সদস্য। পুরো কলেজের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অধ্যক্ষের হাতে। ফলে কলেজ জাতীয় করণের পর হতে কলেজের অধ্যক্ষের অনুমতিতেই উক্ত প্রভাষক কলেজের বেতন বাবদ প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকা করে উত্তোলন করে আসছেন। সর্বশেষ দেখা যায় ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে উক্ত প্রভাষক সোনালী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান কিশোরীগঞ্জ সরকারী কলেজের প্রভাষক মাহাবুবা জাহান কখনো দুই মাস কখনো তিন মাস অন্তর অন্তর এসে তার বেতনের টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যান। এতে দেখা যায় ওই প্রভাষক এ পর্যন্ত সরকারী অংশের বেতন ও বোনাস বাবদ প্রায় ১২ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। ওই কলেজে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ২৫০ জন। এরমধ্যে এইচএসসি প্রথম বর্ষে ২৯৫,দ্বিতীয় বর্ষে ২৪৬,ডিগ্রি প্রথম বর্ষে ২০৫,দ্বিতীয় বর্ষে ২৪৩ ও তৃতীয় বর্ষে ২৬১ জন। কলেজের সকল শিক্ষার্থীরা এক বাক্যে বলেছে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক মাহবুবা জাহান বলে একজন আছেন সেটি তারা জানে না। তাকে কোনদিন দেখেনি বা এই নামের কেউ তাদের কোন দিন ক্লাস নেননি। কারণ কলেজে গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ে কোন ক্লাস হয় না।

শিক্ষার্থীরা বলে, 'এখন আমরা জানতে পারছি আমাদের কলেজে মাহাবুবা জাহান নামের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক রয়েছে। কিন্তু তাকে কোনদিন এক নজর দেখতে পেলাম না আমরা।'

এ বিষয়ে মুঠো ফোনে কথা হলে প্রভাষক মাহাবুবা জাহান ঢাকায় থাকার কথা স্বীকার করে বলেন,' ভাই আমি ব্যাস্ত আছি এ বিষয়ে অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়া আপনাদের সঙ্গে আমি কোন কথা বলতে পারবো না।'

কলেজে অনুপস্থিত থাকার পরেও কিভাবে তিনি বেতন পেলেন জানতে চাইলে কিশোরীগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ বলেন, 'ওই শিক্ষিকাকে কলেজে উপস্থিত হওয়ার জন্য পর পর তিনটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো নোটিশের কোন জবাব আসেনি।'

এ বিষয়ে নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, 'এ ব্যাপারে আমি এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অবহিত করবো।'

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043730735778809