বন্ধ হচ্ছে মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স - দৈনিকশিক্ষা

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডবন্ধ হচ্ছে মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি এ-সংক্রান্ত সুপারিশ করেছে। ওই সুপারিশ কার্যকর হলে চলতি বছর থেকেই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় থাকা ওই দুটি কোর্স বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর এককভাবে ওই কোর্সগুলো পরিচালনার সুযোগ পাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সদ্য সাবেক সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ওই কোর্স দুটি পরিচালনা নিয়ে সমস্যার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছিল। তার নির্দেশ অনুযায়ী সমস্যা সমাধানে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে একটি যৌক্তিক বিষয়ে উপনীত হতে পেরেছে।

সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মেডিকেল টেকনোলজি কোর্সটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। এরপর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স পরিচালনা শুরু করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিচালিত টেকনোলজি কোর্সে শুধু বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ থাকলেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ওই কোর্সে সব বিভাগের শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেতেন। কারিগরি বোর্ডের ওই কোর্স চালুর শুরুতেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় তখন তা আমলে নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

জটিলতা নিরসনে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে 'ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্টের' মাধ্যমে ওই কোর্স পরিচালনার সুপারিশ করে। কিন্তু সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। এরপর ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতায় পাস করা টেকনোলজিস্টরাই শুধু আবেদন করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়। এতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা ওই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করলে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০১৬  খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে 'ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট' বাস্তবায়নের আদেশ দেন। ওই জটিলতার মধ্যেই ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড টেকনোলজিস্টের পাশাপাশি নার্সিং কোর্সও পরিচালনা শুরু করে।

এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এরপর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গড়ায়। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৭ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আট সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিপিটি শাখার অতিরিক্ত সচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের সচিব ওই কমিটিতে ছিলেন। কমিটি গত ২ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।

কমিটির সুপারিশে যা আছে : কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স বন্ধে সুপারিশ করে

কমিটি। একই সঙ্গে আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী, মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং সংক্রান্ত সব ধরনের শিক্ষা 'ওয়ান আমব্রেলা কনেসেপ্টের' আওতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালনার সুপারিশ করে কমিটি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আধীনে থাকা মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়। ওই তালিকা পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদন বাতিল এবং পরবর্তী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ ও নার্সিং কাউন্সিলে নিবন্ধন অন্তর্ভুক্তকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি ও নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশ বাস্তবায়নে পাঁচ সদস্যের একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সংশ্নিষ্ট শাখার একজন উপসচিব রয়েছেন।

সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে শেখ ইউসুফ হারুন যোগদান করেছেন। তিনি আগে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। তার সময়েই বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৯৬টি প্রতিষ্ঠানে মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানে নতুন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করতে মানা করা হয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এতে দূর হবে বলে জানান সচিব।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065288543701172