এবারের বন্যায় প্রায় দুই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত এলাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থাও প্রায় লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮১ হাজার ১৭৯টি টিউবওয়েল এবং ৭৩ হাজার ৩৪৩টি ল্যাট্রিন। এ ছাড়া ৩৫৬ কোটি টাকার শস্য, ৬২৭ কোটি টাকা মূল্যের গবাদিপশু, এক লাখ ২৫ হাজার ৫৪ হেক্টর কৃষিজমি এবং ১৬ হাজার ৫৩৭ হেক্টর জমির গাছপালা ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে। বুধবার (১৯ আগস্ট) বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক ভার্চুয়াল সংলাপে এসব তথ্য তুলে ধরে।
'সাম্প্রতিক বন্যা : ক্ষয়ক্ষতি এবং করণীয়' শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বন্যায় ৩৩ জেলার ৫০ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় সরকার যে ত্রাণ সরবরাহ করছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে সরকারের সঙ্গে যুক্ত করা উচিত।
সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান দাবি করেন, বন্যায় ত্রাণ বিতরণে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। কেউ কেউ ত্রাণ পাচ্ছে না- এ কথা মোটেও সঠিক না। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় সরকার সব ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, খাদ্য ও নগদ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। হেল্পলাইন খোলা হয়েছে, যাতে যে কোনো মানুষ প্রয়োজনে ত্রাণ সহায়তা চাইতে পারেন।
বন্যাপ্রবণ এলাকার দুর্গত মানুষের আশ্রয়ের জন্য উঁচু করে বাঁধের মতো 'বে' তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যখন বন্যা হবে, তখন ওই এলাকার বানভাসি মানুষ সেই বে'তে অবস্থান নিতে পারবেন। ওই বে এমন পরিসরে তৈরি
করা হবে, যাতে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুও রাখা যায়।
সংলাপে অংশ নিয়ে পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, আগস্টের ৩০ তারিখ পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকবে। সেটা যদি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড়ায় তাহলে বিপজ্জনক হবে। বন্যা নিয়ে আমরা প্রতি বছর একই কথা বলি। কিন্তু এসব নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই। খালের ওপর কালভার্ট বন্ধ করে সেতু বানাতে হবে। সেতুগুলো এমনভাবে বানাতে হবে, যাতে সেগুলোর নিচ দিয়ে নির্বিঘ্নে নৌকা চলাচল করতে পারে। রাজধানীর বসিলায় বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর এমনভাবে ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে, তার নিচ দিয়ে নৌকা চলছে না। এগুলো ফৌজদারি অপরাধ।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, এবারের বন্যা স্থায়িত্বের দিক থেকে ১৯৮৮ ও ২০০৪ সালের বন্যার মতো। জামালপুর, চাঁদপুর, লালমনিরহাট ও সিরাজগঞ্জ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় যে খাদ্য ও নগদ সহায়তা দিচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই সরকারি সহায়তা বাড়াতে হবে।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বন্যার কারণে অনেক সময় চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যায়। সরকারের সেদিকে নজর রাখতে হবে। বন্যায় কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কী কী জিনিস আমদানি করতে হবে অথবা আমদানি করার প্রয়োজন পড়বে কিনা, সে বিষয়ে পদক্ষেপ আগে থেকেই নিতে হবে।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। এতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোতাহার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট কামরুজ্জামান।