বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা এখনো বই পায়নি - দৈনিকশিক্ষা

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা এখনো বই পায়নি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি |

বন্যায় ১ হাজার ৪১১টি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রায় সাড়ে ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নষ্ট হয়ে গেছে বই-খাতা, বিদ্যালয় ভবন, আসবাবপত্র ও ল্যাবের যন্ত্রপাতি। বন্যার পরে সুনামগঞ্জ বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে বই-খাতা, ল্যাবের যন্ত্রপাতি। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জয়নগর বাজার হাজী গনি বক্স উচ্চবিদ্যালয়ে।

‘আমার বাংলা বই পানিতে ভাইসসা গেছেগি। আম্মায় বাকি বই হখল হুকাইয়া দিছইন। ওখন বই নাই। স্যারে খইছন দিবা। এক মাস অইযার (হয়েছে) বাংলা পড়ি না। বই না তাখায় আমার মামাতো ভাই সাকিবুল হাসান, বইন বৃষ্টি আক্তার ও লাগাবাড়ির কবির হোসেন ইশকুলে আয় না। আমি এখলা এখলা আই। না আইলে আম্মায় মারইন।’ কথাগুলো সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সোনাপুর ভেদেপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাগরিকা আক্তারের।

সাগরিকা যখন বন্যায় বই হারানো কথা বলছিল, তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারিক ও তারিবা আক্তারের মা প্রদিনা খাতুন। তিনিও বলেন, ‘বন্যায় আমরার ঘরের হখলতা ভাসাইয়া নিছেগি। বাচ্চারার বই না তাখায় স্কুলে আইতে চায় না। ওখন নিজে দইরা লইয়া আইছি। স্যারে খইছন বই আইলে দিবা।’

শুধু সাগরিকা, সাকিব, বৃষ্টি, তারিক ও তারিবাই নয়; এই অবস্থা সুনামগঞ্জ জেলার ১ হাজার ৪৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর। দুই দফা ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ির পাশাপাশি বই-খাতা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে তাদের। অনেকের স্কুলড্রেসও হারিয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরাও। দেখা দিয়েছে ঝরে পড়ার আশঙ্কাও।

এসএসসি পরীক্ষার্থী, দশম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন জেলা থেকে বই সংগ্রহ করে দেওয়া হলেও এখনো বই পায়নি ষষ্ঠ,সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বন্যায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র, দরজা-জানালা নষ্ট হয়ে গেছে। দেবে গেছে ফ্লোর। অনেক প্রতিষ্ঠানের সামনে-পেছনের মাটিও সরে গেছে। টানা চার দিন সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিন ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।

হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, ‘সুনামগঞ্জে এখন হাহাকার চলছে। ধনী-গরিব সবার একই অবস্থা। শিশুদের বই-খাতা কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই মানুষের। ফলে যেসব শিক্ষার্থীর বই-খাতা, স্কুলড্রেস বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের অনেকে ইতিমধ্যে ঝরে পড়তে শুরু করছে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার ১ হাজার ২৯৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ধর্মপাশায় ১৯৪, ছাতকে ১৮৫, জগন্নাথপুরে ১৫৮, জামালগঞ্জে ১২৬, তাহিরপুরে ১৩৪, দিরাইয়ে ৯৩, বিশ্বম্ভরপুরে ৫০, শান্তিগঞ্জে ৯৭, শাল্লায় ৪৯, দোয়ারাবাজারে ১০৪ ও সুনামগঞ্জ সদরে ১০৬টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকেরিন মিয়া জানান, ‘স্কুলে কোমরপানি ছিল। বারান্দার ফ্লোর দেবে গেছে। ঢালাইও উঠে গেছে। টয়লেট, ওয়াশব্লক নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০ সেট বইও প্রয়োজন। আমরা চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি জেলা শিক্ষা অফিসে।’

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সোনাপুর ভেদেপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান বিজিত কুমার রায় জানান, ‘আমার স্কুলের ২৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫০ জনের বই নষ্ট হয়েছে। আসবাবপত্রসহ প্রায় ৬ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি। তবে এখনো বইসহ কিছুই পাইনি। জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, শিগগিরই বইসহ সবকিছু দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন বিদ্যালয়ে থাকা পুরোনো বই দিয়ে কিছুটা ম্যানেজ করা হয়েছে। বাকি বইগুলোর জন্য চাহিদাপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠিয়েছি। এখনো আসেনি। কবে আসবে সেটাও জানি না।’

১৮ জুলাই সিলেটে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেছিলেন, ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের হতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। তাহলে এখনো কেন বই আসেনি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী তো মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দেখেন। প্রাথমিক দেখেন প্রতিমন্ত্রী মহোদয়। আশা করি, তাড়াতাড়িই বইপত্র আসবে।’

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.018234014511108