বরিশাল বিভাগের বরগুনায় মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি স্কুলের সংখ্যা দুটি। এর একটি বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। চলতি বছর ওই স্কুলের দিবা শাখায় ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় ১২০ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়ে মাত্র চারটি। প্রভাতি শাখায় ১৯৯ জন আবেদন করলে সেখান থেকে কিছু শিক্ষার্থী এনেও প্রভাতি শাখায় মাত্র ৫০ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা সম্ভব হয়েছে। সরকারি স্কুলে ভর্তির এ করুণ দশার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেল স্কুলটির ভয়াবহ শিক্ষক সংকটের কথা।
প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকের ৫২টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫ জন। স্কুলটির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বেও আছেন একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজহারুল হক জানান, শিক্ষক সংকটের জন্য কয়েক বছর আগে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মাত্র ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে দুটি শিফটে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান আর সম্ভব না হওয়ায় একটি শিফট বাতিলেরও চিন্তাভাবনা চলছে।
একই অবস্থা বরগুনা সরকারি বালক বিদ্যালয়ের। এখানে ৫১ শিক্ষক পদের বিপরীতে আছেন ২২ জন। শিক্ষক সংকটের সুযোগে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা এ দুটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে কোচিং সেন্টারের আদলে কমপক্ষে ১৫টি অনুমোদনহীন স্কুল স্থাপিত হয়েছে। তারা বাগিয়ে নিচ্ছে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চলের (মাউশি) আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় সদর বরিশালে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত নতুন দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। নগরের কাউনিয়ার শহীদ আরজু মনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (বিদ্যালয়) মো. এবাদুল ইসলাম।
তিনি জানান, বরিশালে একমাত্র জেলা স্কুলেই স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছেন। তবে চারটি প্রতিষ্ঠানেই সহকারী শিক্ষক পদগুলো প্রায় পরিপূর্ণ। এ কর্মকর্তার মতে, শিক্ষকরা প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে যেতে না চাওয়ায় সেখানে শিক্ষক সংকট সবচেয়ে বেশি। ভোলার চারটি স্কুলের সব কয়টি চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। পিরোজপুরের ছয়টি স্কুলের একটিতে শুধু স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছেন। ঝালকাঠিতে দুটি স্কুলের একটিতেও প্রধান শিক্ষক নেই। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহকারী শিক্ষকও আছেন সৃষ্ট পদের অর্ধেক।
শিক্ষক সংকটের কথা স্বীকার করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বরিশাল অঞ্চলের (মাউশি) পরিচালক প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, বরিশাল বিভাগের ২২টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ভয়াবহ। স্কুলগুলোতে গড়ে ৩৮ শতাংশ শিক্ষক নেই। তবে বরিশাল নগরের দুটি স্কুল বাদ দিলে এ সংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি হবে। এ ছাড়া বিভাগের মাত্র দুটি স্কুলে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক আছে।
তিনি আরো বলেন, চলতি সপ্তাহে মাউশির পরিচালককে (মাধ্যমিক) এ বিষয়ে লিখিত তথ্য দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষক নিয়োগ এবং পদোন্নতি বন্ধ থাকায় এ জটের সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকা, বিশেষ করে ভোলার দৌলতখান, পিরোজপুরের কাউখালী ও বরগুনার স্কুলগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ।