ভৈরবে মাদ্রাসাছাত্র জাসিমুর রহমান জাসিমকে (১৩) অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করে কর্নফুলী নদীতে ফেলে দেয়। জাসিম ভৈরবের কমলপুর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার হেফজ ক্লাশের ছাত্র।
অপহরণ ও হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে চট্রগ্রাম খুলশী থানাধীন লালখান বাজার এলাকার আমীন সেন্টার এবাদত থানার ইমাম মো. খোরশেদ আলম মুছা (৩৮) ও যাত্রাবাড়ী তামিরুল মিল্লাদ কামিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণীর ছাত্র মাহমাদুল হাসান সাকিলকে (১৭) বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার গভীর রাতে ভৈরব থানা পুলিশ গ্রেফতার করে।
তাদেরকে গ্রেফতার করার পর তারা দুজনই অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে শুক্রবার ও শনিবার কিশোরগঞ্জ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় বলে জানায় পুলিশ।
তবে মাদ্রাসা ছাত্রের লাশ কর্নফুলী নদী থেকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আজ রবিবার ভৈরব থানা পুলিশ নির্মম ও নিষ্ঠুরতার এই হত্যাকান্ডের ঘটনার বিবরণ দিয়ে এক সংবাদ সন্মেলন করে।
উক্ত সংবাদ সন্মেলনে প্রেস ব্রিফিং দেন কিশোরগন্জের অতিরিক্ত পুলিশ অফিসার রাকিব খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোখলেসুর রহমান, ভিকটিমের মাদ্রাসা ছাত্রের পিতা) পিতা এরফানুল রহমান ও তার আত্মীয় স্বজন, কমলপুর মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগন।
ঘটনার বিবরণে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিব খান জানান, মাদ্রাসার ওই ছাত্র জাসিমুর রহমান জাসিম গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে তার ভৈরবস্থ বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়।
এদিন সে বাসা থেকে বের হয়ে মাদ্রাসায় না গিয়ে রাতেও বাসায় ফিরেনি। তারপর তার পরিবারের সদস্যরা তিনদিন আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন স্থানে খোজাঁখুজির পর ২০ সেপ্টেম্বর তার পিতা ভৈরব থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন।
২১ সেপ্টেম্বর অপরিচিতি একটি মোবাইল নাম্বার থেকে জাসিমের বড় ভাই নাইমুমূলের কাছে একটি ফোন আসে। এই ফোন কলে ২ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করে বলা হয় টাকা না দিলে তাকে হত্যা করা হবে।
এরপর ফোনের কলকারীর বিকাশে কিছু টাকাও দেয়া হয়। কিন্ত টাকা দেয়ার পরও ওই ছাত্রের কোন সন্ধান দেয়নি তারা। তারপর উপায়ন্তর না দেখে ছাত্রের পিতা ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোখলেসুর রহমানকে ঘটনাটি জানিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে (মামলা নাম্বার – ৩১ (৯) ১৭)।
মামলা করার পর পুলিশের তৎপরতা শুরু করে । মুক্তিপন দাবী করা সেই অপরিচিতি মোবাইল নাম্বারে পুলিশ ট্রেকিং করে প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে। এরপর প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মোতাছিম বিল্লাহ সাকিবকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা গ্রামে। তার পিতার নাম মাহমাদুল হাসান সাকিল।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিব খান জানান, বলৎকার করতে না পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ইমাম এই হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা তদন্তে জানতে পেরেছি ওই ইমাম এই ঘটনার আগেও একাধিক ছাত্রকে বলৎকার করেছে। সে আদালতেও এসব কথা স্বীকার করে।
ঘটনার মামলা করার পর ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মোখলেসুর রহমান, এস আই মাজহারুল ইসলামসহ পুলিশের একটি চৌকোস টিম স্বল্প সময়ের মধ্য এই অপহরন ও হত্যার ঘটনাটি উদঘাটন করতে পেরেছে।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোখলেসুর রহমান জানান, ঘটনাটির মামলা হওয়ার পর আমিসহ আমার থানার বেশ কয়েকজন অফিসার দিনরাত পরিশ্রম করে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামীদের গ্রেফতারসহ অপহরণ ও হত্যার ঘটনাটি উদঘাটন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ঘটনাটির আরও তদন্ত হওয়ার পর অপরাধীদেরকে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করব।
