ক্যাম্পাসে ইদানীং একটা শব্দ বেশি শোনা যায় সেটা হলো- ‘বহিরাগত’। বিশেষ করে ডাকসু হওয়ার পর তা আরো বেশি শোনা যাচ্ছে, ডাকসুর ক্ষমতা বলে একটা কথা আছে না!
সাধারণত হলগুলোতে শোনা যায় ১ম বর্ষ থেকে শুরু করে অনেক সিনিয়র শিক্ষার্থীও অভিযোগ তুলে যে, বহিরাগত কিংবা অছাত্রদের সিট দখল করার কারণে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত সিট পায় না। যার জন্যে তৈরি হয়েছে আবাসন সংকট। বিশেষ করে ছেলেদের হলগুলোতে এ সমস্যাটা প্রকট। আবাসন সংকটের কারণেই জন্ম হয়েছে গণরুম নামক বিভীষিকা কিংবা বারান্দা ব্যবস্থার মতো ভয়ংকর চিত্র। যেখানে বৃষ্টি দেখে সাধারণ মানুষের খুশি হওয়ার কথা সেখানে বারান্দাবাসীদের তখন গুনতে হয় কখন বৃষ্টি শেষ হবে। বৃষ্টিটা স্রেফ একটা অভিশাপ। অনেকেই বলে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে গিয়েও নাকি সিট পাওয়া যায় না। সব বিসিএস কিংবা চাকরির বই, আর সেই বই পড়ুয়া দিয়ে ভর্তি। অনেকে বলে লাইব্রেরি ভবন ১০তলা করা হোক। আর যাই বলা হোক সব সমস্যার মূলে ঐ বহিরাগত, অছাত্ররাই।
আসুন, এখন একটু হিসেব মিলিয়ে দেখি এই বহিরাগত কিংবা অছাত্রগুলো কারা! কাদের আমরা অছাত্র বলি। ধরুন আপনি এখন তৃতীয় বর্ষের শেষের দিকে, মাত্র কোনো এলাকার ভাই ধরে লবিং করে রুমে একটা সিট পেলেন। ভাবলেন এবার পড়াশোনা করে ফাটিয়ে দিবেন। এটা ভাবতে ভাবতে, নিজেকে গুছাতেই অনার্স শেষ! তারপর মাস্টার্স তো মাত্র ১.৫ বছর। ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত! সিজিপিএও তেমন ভালো না। মাস্টার্স শেষ! এখন আপনিও বহিরাগত কিংবা অছাত্র! কারণ আপনার বৈধতা শেষ। কিন্তু কথা হলো আপনি হলে আপনার সিটে থাকলেন কত বছর! ১+১.৫=২.৫ বছর! যেখানে আপনার মিনিমাম ৫.৫ বছর থাকার কথা। তাহলে কি আপনি আপনার সিট ছাড়তে চাইবেন? নাকি অধিকার আদায় করে ছাড়বেন! মানে হলেই থেকে যাবেন!
মূলত সমস্যাটা শুরু হয় এখান থেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা হলে থাকে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তাদের এক-তৃতীয়াংশরই বাইরে থাকার সামর্থ্য নেই। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো যে শিক্ষা জীবনটা শুরু করার কথা ছিলো ৩ বছর আগে, সেটা শুরু হলো ৩ বছর পর। আপনি ৩ বছর পর শুরু করেছেন বলে তো আর সময় অপেক্ষায় থাকবে না। সময় তো আপনাকে সাবেক বানিয়েই দিবে।
এদিকে ফ্যামিলির চাপ, চাকরি নিতে হবে, আরো কত চাপ! এদিক দিয়ে জুনিয়ররা আপনাকে অবৈধ সিট দখলদারি বলে গালি দিচ্ছে!
এখন প্রশ্ন হলো- এ দায়ভার কার? বহিরাগত বা অছাত্র কারা? কেন তারা অবৈধ সিট দখলদারি?
এ প্রশ্নগুলোর উত্তর যখন আমরা খুঁজে পাবো এবং সঠিক পন্থায় সমাধান করতে পারবো তখনি দূর হবে হলের আবাসন সংকট, দূর হবে বহিরাগত, মুছে যাবে অছাত্রের সিল।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যে: ইত্তেফাক