শিক্ষার্থীদের বাবা ও মা উভয়েরই এনআইডির তথ্যদানের বাধ্যবাধকতায় অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর তথ্য এন্ট্রি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। এতে অনেক খুদে শিক্ষার্থীর উপবৃত্তিবঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, ১৬ মে থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির তথ্য এন্ট্রি চলছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল বিভাগের তথ্য অন্তর্ভুক্তি শুরু হয়ে ২২ মে পর্যন্ত চলার কথা ছিলো। কিন্তু শুরুতেই সার্ভার জটিলতা ও এনআইডির সমস্যায় ওই তিন বিভাগের তথ্য অর্ন্তভুক্তির সময় আজ বুধবার (২৫ মে) পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের পরামর্শ, মা বা বাবা যে কোনো একজনের এনআইডি থাকা শিক্ষার্থীদের তথ্য এন্ট্রির সুযোগ দিলে উপবৃত্তিযোগ্য অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে এ সুবিধার আওতায় আনা যেতো।
তবে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলছেন, সব যোগ্য শিক্ষার্থী যাতে উপবৃত্তি পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতেই বাবা ও মা দুজনেরই তথ্য অর্ন্তভুক্ত করতে বলা হয়েছে। প্রথম দফায় তথ্য অন্তর্ভুক্তির পর যেসব শিক্ষার্থীর সব তথ্য নেই তাদের তথ্য কি কারণে নেই তা যাচাই করে দেখবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আংশিক তথ্য থাকা শিক্ষার্থীদের তথ্য পরে আবার এন্ট্রির সুযোগ দেওয়া হতে পারে। যোগ্য কোনো শিক্ষার্থী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না।
কিন্তু ঢাকা জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাবা-মা উভয়ের এনআইডি থাকলেই কেবল এন্ট্রি করা যাচ্ছে। বুধবার এন্ট্রির শেষ দিন। তাই তথ্যের ঘাটতির কারণে যাদের নাম এন্ট্রি করা সম্ভব হচ্ছে না, তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুনরায় তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
শিক্ষকরা বলছেন, বাবা বা মা যে কোনো একজনের এনআইডি থাকা শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তির সুযোগ দেয়া হলে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত হবে এবং অধিকাংশ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাবেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাজধানীর কেরানীগঞ্জের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র হাবিবুর রহমানের বাবা বিদেশে থাকেন। বাড়ীতে বাবার এনআইডির কপি নেই। বিদেশ থেকে আনতেও পারেননি। তাই হাবিবুরের তথ্য আপলোড করা যায়নি। এমন অসংখ্য ছাত্রের তথ্য আপলোড করা যায়নি শুধু এক উপজেলাতেই।
এ বিষয়ে নতুন নিয়মে উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্বে থাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইএমডি বিভাগের পরিচালক বদিয়ার রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, উপবৃত্তির জন্য হলেও যাতে সব শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাতীয় পরিচয়পত্র করে তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। আশা করছি সব শিক্ষার্থীর বাবা-মা এনআইডি করে তাদের সন্তানের উপবৃত্তির জন্য তথ্য দেবেন। আর যদি কোনো শিক্ষার্থীর তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা না হয় সে বিষয়টিও দেখা হবে।
উপবৃত্তির তথ্য অন্তর্ভুক্তির জন্য সব বিভাগে আবারও সুযোগ দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা পলিসি ডিসিশন। এ বিষয়ে বলতে পারছি না। তবে, একটি শিক্ষার্থীও যাতে উপবৃত্তি বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করা হবে।
নতুন সূচি অনুসারে, রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তি চলবে ২৬ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত। আর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তি চলবে ২ জুন থেকে ৮ জুন পর্যন্ত।
এবার নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পাবেন। বিকাশসহ যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টেই তারা উপবৃত্তির টাকা তুলতে পারবেন। উপবৃত্তি কর্মপরিকল্পনা ও বাজেট প্রাক্কলন অনুসারে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও অডিট অনুবিভাগ অধিদপ্তরের রাজস্ব বাজেটের নির্ধারিত কোডে টাকা বরাদ্দ করবে। অধিদপ্তর ত্রৈমাসিক চাহিদা মতো কিস্তিভিত্তিক টাকা অবমুক্ত করবে। অর্থ বিভাগ থেকে সময় সময়ে জারি করা জিটুপি পেমেন্ট পদ্ধতি অনুসারে উপবৃত্তির টাকা বিতরণ করা হবে। জিটুপি পেমেন্ট পদ্ধতির সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সমন্বিত ডিজিটাল পদ্ধতির সমন্বয় করা হবে।