নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে আল নুর ও লিনউড মসজিদে হামলার ঘটনায় তিন বাংলাদেশিসহ ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন বাংলাদেশির পরিচয় নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবদুস সামাদ নিহত হয়েছেন। ছেলেসহ এই দম্পতি নামাজে গিয়েছিলেন। হামলার পর থেকে ছেলে নিখোঁজ। সামাদ নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত নিউজিল্যান্ডে থাকতেন অধ্যাপক সামাদ। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার মধুরহাইল্লা গ্রামে। তার অপর ছেলে বাংলাদেশে থাকেন বলে একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে নিশ্চিত করেছেন। হামলায় নিহত অপর নারীর নাম হোসনা। তার স্বামীর নাম ফরিদ।
বাংলাদেশের অনারারি কনসাল ইঞ্জিনিয়ার শফিকুর রহমান এর আগে জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আট বাংলাদেশিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছ থেকে খবর পেয়েছেন তিনি। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় আল নুর ও লিনউড মসজিদে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) স্থানীয় সময় বেলা দেড়টার দিকে মসজিদে নামাজ শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে একজন বন্দুকধারী সিজদায় থাকা মুসল্লিদের ওপর গুলি ছুড়লে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইনডিপেনডেন্ট ইউকে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ দুই মসজিদে হামলায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আল নুর মসজিদে গুলি শুরু হলে তারা প্রাণ বাঁচাতে সেখানে থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। মসজিদের বাইরে রক্তাক্ত লোকজনকে পড়ে থাকতে দেখার কথাও জানান তারা।
এদিকে নিউজিল্যান্ডের আল নুর মসজিদে জুমার নামাজের সময় গোলাগুলির ঘটনায় অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ জানিয়েছেন, দলের সদস্যরা সবাই নিরাপদে হোটেলে ফিরেছেন। গোলাগুলির ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড তৃতীয় টেস্টটি বাতিল করা হয়েছে। শনিবার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে ওই ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল।
খালেদ মাসুদ জানান, ম্যাচের আগে শুক্রবার সকালে ওই মাঠে অনুশীলন করেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা। সেখান থেকে তাদের কয়েকজন কাছের ওই মসজিদে গিয়েছিলেন জুমার নামাজ পড়তে। তবে কোনো বিপদ হয়নি। সবাই নিরাপদে ফিরে এসেছে।
নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, হ্যাগলি পার্কের পাশে ডিনস এভিনিউয়ের ওই মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে এসেছিলেন কয়েকশ মুসলমান। মিলিটারি ধাঁচের ক্যামোফ্লাজড পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি অটোমেটিক রাইফেল হাতে ওই মসজিদে ঢোকে এবং প্রায় ২০ মিনিট ধরে গুলি চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে বলেছেন।
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের খবরে বলা হয়েছে, আল নুরে যখন গোলাগুলি শুরু হয়, তার পরপরই মসজিদে পৌঁছেছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। তারা দ্রুত সেখান থেকে সরে যান।
এক্সপ্রেস নামের একটি স্থানীয় গণমাধ্যমের অনলাইনে বলা হয়েছে, হামলাকারীকে শনাক্ত করা গেছে। ২৮ বছর বয়সী একজন শ্বেতাঙ্গ। তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন। দুই বছর ধরে তিনি এ হামলার পরিকল্পনা করছেন। হামলাকারী জানিয়েছেন, ইউরোপের দেশগুলোতে বিদেশি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তিনি এ হামলার পরিকল্পনা করেছেন।