ভারত থেকে কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের তাড়ানোর দাবিতে দেশটির বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাইয়ে গতকাল রোববার মিছিল ও সমাবেশ করেছে লক্ষাধিক মানুষ। ওই রাজ্যের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ‘মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা’দেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের দাবিতে ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে এ জনসভার ডাক দেয়।
সমাবেশ থেকে দলের নেতা রাজ ঠাকরে ঘোষণা করেছেন, ভারত কোনো ধর্মশালা নয়, এখান থেকে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের তাড়িয়েই ছাড়া হবে।
কথিত বাংলাদেশিদের দেশছাড়া করার বিষয়টি ভারতে একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে বেশ কিছুদিন ধরেই। কিন্তু সেই ইস্যুতে এত বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি এই প্রথম।
মুম্বাইয়ের গোরেগাঁওয়ে হিন্দু জিমখানা গ্রাউন্ড থেকে শহরের দক্ষিণ প্রান্তে আজাদ ময়দান পর্যন্ত মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা গতকাল যে বিশাল পদযাত্রার আয়োজন করেছিল, ওই শহরে এত বড় জমায়েত অনেক দিন হয়নি।
বিবিসি মারাঠির সংবাদদাতা ময়ূরেশ বলেন, দলের গেরুয়া পতাকা নিয়ে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক এদিন যেন মুম্বাইকে গেরুয়ায় রাঙিয়ে তুলেছিলেন। অচল হয়ে গিয়েছিল মেরিন ড্রাইভ। আর এই জনসভার প্রধান দাবিই ছিল ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করা বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের তাড়াতে হবে।
উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের ভাইপো রাজ ঠাকরে শিবসেনা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের দল ‘মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা’গড়েছিলেন প্রায় ১৪ বছর আগে। এত দিন মারাঠা জাতীয়তাবাদই ছিল তার প্রধান রাজনৈতিক অস্ত্র, কিন্তু ইদানীং তিনি ভাষণ শুরু করছেন ‘আমার প্রিয় হিন্দু ভাইবোনেরা’ বলে।
কয়েক দিন আগে তিনি নিজের দলের পতাকার রংও পাল্টে নিয়েছেন হিন্দুত্ববাদী ‘ভগওয়া’ বা গেরুয়ায়। আর গতকাল তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তার দল কথিত মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধেই আক্রমণ শাণাবে।
সমাবেশে রাজ ঠাকরে তার ভাষণে বলেন, ভারত কোনো ধর্মশালা নয় যে যেখান থেকে খুশি এসে যে কেউ এখানে বসে যাবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয় জলের মতোই অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ করাও দেশের জন্য একটি মৌলিক ইস্যু। আর সেই জন্যই বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের হটানোর ডাক দেয়া হচ্ছে।
রাজ ঠাকরে বলেন, ব্রিটেন-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়াও তো অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, আর ভারত করলেই সমস্যা? তিনি পরিষ্কার বলে দেন, এই ইস্যুতে তারা অস্ত্র হাতে নিতে রাজি।
মহারাষ্ট্রের নানা প্রান্ত থেকে রাজ ঠাকরের ডাকে যে হাজার হাজার সমর্থক মুম্বাইয়ে জড়ো হয়েছিলেন, তাদেরও মূল বক্তব্য ছিল ভারতের সামনে এখন এই অবৈধ বিদেশিরাই প্রধান বিপদ।
কথিত বাংলাদেশিদের তাড়ানোর ইস্যু একসময় দিল্লিতে বিজেপির বড় রাজনৈতিক হাতিয়ার ছিল। যদিও দিল্লির সাম্প্রতিক নির্বাচনে অবশ্য সেটা তেমন কোনো ইস্যু হয়নি। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরুতে বা পশ্চিম ভারতের মুম্বাইয়ে সেটাকে বড় ইস্যু করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। কর্ণাটকের বিজেপি সরকার যেভাবে বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে বা মুম্বাইয়ে রাজ ঠাকরের দল যেভাবে বাংলাদেশি তাড়ানোর ডাক দিয়ে বিশাল সভা করল, তাতেই সেটা স্পষ্ট।