বাংলাদেশে কোচিংনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব - দৈনিকশিক্ষা

বাংলাদেশে কোচিংনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষাঙ্গন থেকে চলে গেছে কোচিং সেন্টারে। শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে যেতে শুরু করেছে। কোনো কিছুই ঠেকাতে পারছে না কোচিং সেন্টারগুলোর অপ্রতিরোধ্য যাত্রা। ফলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হয়েছে কোচিং সেন্টারগুলোর হাতের পুতুল। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন রাবাত রেজা খান।

যত্রতত্র গড়ে তোলা হচ্ছে কোচিং সেন্টার। ঢাকা শহরে এমন একটি এলাকা পাওয়া যাবে না, যেখানে একটিও কোচিং সেন্টার নেই। শত শত কোচিং সেন্টারে ভরে উঠেছে মহানগরীর চার পাশ। এমনকি জেলা শহরগুলোতেও আগের চেয়ে অনেক বেশি কোচিং সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। পিইসি পরীক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা পর্যন্ত সব পর্যায়ে কোচিং সেন্টারগুলোর রমরমা ব্যবসা হয়। সকালবেলা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কোচিং সেন্টারগুলোর বিরতিহীন পাঠদান চলে।

কোচিং সেন্টারগুলোতে কী পড়ানো হচ্ছে? আর আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরাই বা কী শিখছে? অভিভাবক সমাজই বা কেন কোচিং সেন্টারে তাদের সন্তানদের নিয়ে যাচ্ছে? সবকিছুর উত্তর মনে হয় ভালো নম্বর এবং একটি ভালো গ্রেড পাওয়ার জন্য। ভালো গ্রেড কি জীবনের সব? পৃথিবীতে এমন অনেক বিখ্যাত মানুষ আছেন, যাদের কোনো ভালো ডিগ্রি নেই কিন্তু মানুষের কাছে পরম পূজনীয়।

আমাদের দেশে কোচিং সেন্টারনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার প্রভাব ও কুফল সুদূরপ্রসারি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দিন দিন সততা, নৈতিকতা, মূল্যবোধের চর্চা ইত্যাদি উধাও হয়ে যাচ্ছে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে। পরীক্ষা ও নম্বরের পেছনে ছুটতে ছুটতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রোবটে পরিণত হচ্ছে। শেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে বিতৃষ্ণা বাড়ছে শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি।

এক বুক অভিমান নিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সকাল শুরু করে। সারা দিন স্কুল, ক্লাস, পরীক্ষা, একটার পর একটা কোচিং ক্লাস করতে করতে বিধ্বস্ত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। মানসিক ট্রমা ও কোচিং সেন্টারের বিভীষিকা নিয়ে ভুগতে থাকে অসহায় শিক্ষার্থীরা। যে বয়সে শিশুদের হাতে থাকার কথা নাটাই-ঘুড়ি, সেই বয়সে শিশুদের কাঁধে থাকে ব্যাগের বোঝা। এই বোঝা টানতে টানতে শিশু শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা কেবল একটি ভালো গ্রেডের আশায় কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে শত শত মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছে। না বুঝে মুখস্থ করছে গাইড বই। ফলে পিইসি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষায় ভালো করছে। কিন্তু তাদের ভিত্তি ঠিক হচ্ছে না। শিক্ষার খুঁটিনাটি সাধারণ বিষয়গুলো তারা আয়ত্ত করতে পারছে না। তাদের শেখার মধ্যে বিরাট ফাঁক থেকে যাচ্ছে। প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জিত হচ্ছে না।

এমন শিক্ষার্থী দেখেছি, জেএসসিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েও নবম শ্রেণির রসায়নে পাশ মার্ক তুলতে পারছে না। কোচিং সেন্টারগুলো শিক্ষার্থীদের এমন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে যে, এই সিস্টেম থেকে বের হওয়াই মুশকিল।

শহরাঞ্চলের তুলনায় মফস্বল এলাকা ও গ্রামাঞ্চলে কোচিং সেন্টারের সংখ্যা তুলনামূলক কম। তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভ করতে হয়। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ইচ্ছামতো পড়াশোনা করে, খেলাধুলা করে, নিজের মতো শেখে। দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে তারাই বেশি ভালো করে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দেওয়ার আগেই ৮৬ শতাংশ শিশু শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারে যাচ্ছে। ভাবতে পারেন কী ভয়াবহ অবস্থা? কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা যেখানে হেসে-খেলে আনন্দের সঙ্গে শেখার কথা, সেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক ডোমেইনের ওপর সরাসরি আঘাত। ছোটো ছোটো শিক্ষার্থীরা এক বুক অভিমান নিয়ে একটার পর একটা কোচিং সেন্টারে ছুটছে। স্কুলের হোমওয়ার্ক, কোচিং সেন্টারের হোমওয়ার্ক সবকিছু মিলিয়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে শিশু শিক্ষার্থীরা।

কিন্তু বাস্তবে কী শিক্ষা দিচ্ছে কোচিং সেন্টারগুলো? কোচিং সেন্টার থেকে শিক্ষার ভিত্তি ঠিকমতো হচ্ছে কি? কোচিং সেন্টার থেকে সততা, মূল্যবোধ, নৈতিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, পারস্পরিক সহযোগিতা, সমাজ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা ইত্যাদি সামাজিক গুণাবলি শিক্ষা দিচ্ছে কি? নাকি শুধু পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করছে—এটা ভাবার এখনই মোক্ষম সময়।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00364089012146