বাংলাদেশে দূরশিক্ষণ ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা - দৈনিকশিক্ষা

বাংলাদেশে দূরশিক্ষণ ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা

ড. এম এ মাননান |

দূরশিক্ষণ। নামটি শুনলেই মনে হতো এক সময়, কাছের শিক্ষণেই কূল-কিনারা পাওয়া যায় না, আবার দূর থেকে শিক্ষণ! দূর থেকে কীভাবে শিক্ষালাভ করা যায়? স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকের মুখোমুখি বসে শিক্ষা নিতে গিয়ে কত ঝক্কি পোহাতে হয়; সেখানে শিক্ষকের কাছে না গিয়ে কী শিখবো, কীভাবে শিখবো? এসব চিন্তা ছিল, এখনও আছে অনেকের মধ্যে। অধ্যাপক ওয়াল্টার পেরির মধ্যেও ছিল। ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ (ব্রিটিশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য) পেরি কিন্তু এ রকম চিন্তা মনে থাকার পরও থেমে থাকেননি। তিনি পৃথিবীর প্রথম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে দূরশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষায় বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আওতায় আনা যায় এবং তাদের জ্ঞান-অর্জনের স্পৃহাকে আরও বেগবান করা যায়। তিনি যদি আজ বেঁচে থাকতেন, দেখতে পেতেন সারা দুনিয়ায় ষাটটির বেশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কতো লক্ষ শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জনের আকুলতাকে মূল্য দিয়ে তাদের সেবা করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে যখন নব্বই-এর দশকে হাঁটিহাঁটি পা পা করে এগোচ্ছিলো দূরশিক্ষণের একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি, তখনও অনেকে উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই দেখেছিল এ উদ্যোগকে। সময়ের বিবর্তনে প্রতিষ্ঠানটি এখন শক্ত পায়ের উপর দাঁড়িয়ে। শুধু দেশের সীমানাতেই সেবা দিচ্ছে ছয় লক্ষের কাছাকাছি শিক্ষার্থীকে। এখন দেশের সীমানার বাইরেও পা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথমে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াতে এবং একই সাথে যাবে আরব আমিরাতে। এর পরের টার্গেট মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে রয়েছে কয়েক লক্ষ বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মী। প্রযুক্তির অভাবনীয় প্রসার এখন সাহস যোগাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে সীমানা পেরিয়ে সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে পা বাড়াতে। প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। আজ ২১ অক্টোবর এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ২৬ বছরে পদার্পণ করলো। ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিগত বছরে জাঁকজমকের সাথে পালন করেছে রজতজয়ন্তী। পাঁচটি সমাবর্তনের মাধ্যমে উত্সাহিত করেছে কয়েক লক্ষ ডিগ্রিধারী গ্র্যাজুয়েটদের। এ পর্যন্ত বাইশ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী শিক্ষা সমাপ্ত করেছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

গাজীপুরে ৩৫ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস। বিশালকায় প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’। পাশেই গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব অডিটোরিয়াম ও ট্রেনিং কমপ্লেক্স। ক্যাম্পাসের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে বিশালকায় মিডিয়া সেন্টার ও মক ভিলেজ (কৃত্রিম গ্রাম)। সকল একাডেমিক প্রোগ্রামের রেডিও-টেলিভিশন অনুষ্ঠান তৈরি, ওয়েব রেডিও, ওয়েব টেলিভিশন, ইন্টারনেটভিত্তিক শিক্ষা প্রোগ্রাম তৈরির এক মহান কর্মযজ্ঞ চলছে এ মিডিয়া সেন্টারে। প্রধান কার্যালয়ে ১১টি প্রশাসনিক বিভাগ, একটি ই- লার্নিং সেন্টার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণা কেন্দ্রসহ বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রশাসনিক বিভাগের মধ্যে রয়েছে মিডিয়া বিভাগ, কম্পিউটার বিভাগ, প্রকাশনা মুদ্রণ ও বিতরণ বিভাগ এবং স্টুডেন্ট সাপোর্ট সার্ভিসেস বিভাগ। মিডিয়া বিভাগ টেলিভিশন ও বেতার অনুষ্ঠান তৈরি এবং প্রকাশনা মুদ্রণ ও বিতরণ বিভাগ পাঠ্যপুস্তক তৈরি ও বিতরণ করে থাকে। স্টুডেন্ট সাপোর্ট সার্ভিসেস বিভাগ শিক্ষার্থী সেবায় নিয়োজিত। বিনামূল্যে ৪০০’র অধিক বিষয়ের প্রায় ১,২৬,৩৮,৮০০  পাঠ্যবই মুদ্রণ করে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রেরণ করা হয় প্রতিবছর।

আগে থেকে চালু আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের পাশাপাশি চালু করা হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর সৈনিকদের জন্য প্রয়োজনভিত্তিক সিলেবাসের মাধ্যমে এসএসসি এবং এইচএসসি প্রোগ্রাম। সম্প্রতি চালু হয়েছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন আলট্রা সাউন্ড প্রোগ্রাম, মাস্টার অব পাবলিক হেলথ এবং মাস্টার্স ইন ডিজএবিলিটি ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম। এসব প্রোগ্রামের শিক্ষার্থী হতে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক ডাক্তার ও ফিজিওথেরাপিস্ট। অচিরেই চালু হতে যাচ্ছে ডিপ্লোমা ইন ফার্মেসি, প্রাইমারি হেল্থ কেয়ার, মাস্টার্স ইন সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুর্যাল লাইভলিহুড, মাস্টার অব বিজনেস স্টাডিজ, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা-ইন-হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা-ইন-সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট। ভাষা শিক্ষা কোর্সের মধ্যে চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। চীনের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সহযোগিতার ফলে এ প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঠ গ্রহণে উত্সাহ দেখা দিয়েছে। ই-লার্নিং সেন্টারে নিয়মিতভাবে শিক্ষকদের ই-এডুকেশনে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ওপেন এডুকেশন রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে দূর পাঠে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। ইউজিসির সহায়তায় Quality Assurance Cell  প্রতিষ্ঠা  করা হয়েছে।

১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র, ৮০টি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং প্রায় ১৬০০টি স্টাডি সেন্টারে ৫৩টি শিক্ষা প্রোগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান রয়েছে। সার্টিফিকেট লেভেল থেকে শুরু করে এমফিল, পি.এইচডি পর্যন্ত শিক্ষাদান করছে বিশ্ববিদ্যালয়। সাশ্রয়ী অর্থে শিক্ষার্থীরা সময়মত পড়ালেখার মধ্য দিয়ে এখানে তাদের কোর্স সমাপ্ত করতে পারছে। চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা করে কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দিয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। সে জন্য দেশের লাখো শিক্ষার্থীর প্রিয় প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।

 

লেখক : উপাচার্য, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033941268920898