বাংলাদেশে ব্যবসায় শিক্ষা প্রত্যাশা ও বাস্তবতা - দৈনিকশিক্ষা

বাংলাদেশে ব্যবসায় শিক্ষা প্রত্যাশা ও বাস্তবতা

মো. আব্দুল হামিদ |

রোববার (২৮ এপ্রিল) বণিক বার্তায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়।

বাংলাদেশে বর্তমানে ‘বিজনেস’ খুব জনপ্রিয় এক ডিসিপ্লিন, বিশেষত উচ্চশিক্ষায়। বুঝেই হোক বা না বুঝে, প্রবল বেগে আমরা এ স্রোতে শামিল হচ্ছি। কিন্তু সামগ্রিক চিত্র থেকে এ ধারণা জন্মে যে ব্যবসায় শিক্ষার লক্ষ্য, প্রত্যাশা ও দর্শন সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা যথেষ্ট মাত্রায় উদাসীন রয়েছি। কারণ প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিজনেস গ্র্যাজুয়েট তৈরি হলেও, তারা আসলে কতটা মার্কেট উপযোগী হচ্ছে, কোথায় ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে কিংবা আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কী ধরনের ভ্যালু অ্যাডিশন অত্যাবশ্যক, পুরো শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় সেগুলো খুব একটা বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না। ফলে আগামীতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শিক্ষাবিমুখ হওয়া কিংবা মার্কেট কারেকশনের প্রভাবে বিদ্যমান ‘শিক্ষা ব্যবসা’য় ধস নামার সম্ভাবনা কি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়? আর সেটা হলে সংশ্লিষ্ট বিশাল আয়োজনগুলো জৌলুস হারাবে না তো? এমন অসংখ্য ভাবনা থেকেই নিবন্ধটির উদ্ভব।

গত শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত এ দেশে আলাদাভাবে ‘বিজনেস’ পড়ার চল ছিল না। অর্থনীতির একাংশ হিসেবে বাণিজ্যবিষয়ক কিছু কোর্স পড়ানো হতো। ষাটের দশকে খুব কাছাকাছি সময়ে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কমার্স নামে আলাদা ডিসিপ্লিন চালু হয়, যেখানে বিকম ও এমকম ডিগ্রি দেয়া হতো। সত্তরের দশকে কমার্স ভেঙে হিসাব-বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা নামে দুটি ধারা চালু হয়। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে অ্যাকাউন্টিং থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং এবং ম্যানেজমেন্ট থেকে মার্কেটিং বিভাগের পথচলা শুরু হয়। তখন কারিকুলামে কিছুটা পরিবর্তন এনে বিকম থেকে বিবিএস (ব্যাচেলর অব বিজনেস স্টাডিজ) এবং এমকমের পরিবর্তে এমবিএস ডিগ্রি চালু করা হয়। 

এর পর বেশ দ্রুত বাণিজ্য শিক্ষার প্রসার ঘটে, এমনকি জনপ্রিয় হতে থাকে। ফলে বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। শিল্পোন্নত দেশের আদলে এখানেও বিবিএ ও এমবিএ প্রোগ্রাম চালু করা হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৮ সালে ‘স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ চালুর মাধ্যমে এ ধারায় যুক্ত হয়। পরবর্তীকালে দেশে প্রতিষ্ঠিত সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ ও এমবিএ প্রোগ্রাম চালু করাটা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। তাছাড়া ইভনিং এমবিএ চালুর ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দেয়। বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন ছুটির দিনগুলো বয়স্ক নারী-পুরুষদের পদচারণায় মুখর থাকছে, এমনকি গভীর রাত পর্যন্ত। ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় বিজনেস ফ্যাকাল্টিতে দুই শিফট চালুর প্রস্তাবও মাঝে মধ্যে উচ্চারিত হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত চলছে বিজনেস ফ্যাকাল্টিকে কেন্দ্র করে।     

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ম্যানেজমেন্টের অঙ্গ হিসেবে এইচআরএম, এমআইএস ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস পড়ানো হচ্ছে। মার্কেটিং থেকে উদ্ভব হয়েছে হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অ্যাকাউন্টিংয়েরও নাম বদলে করা হয়েছে এআইএস। ফিন্যান্স থেকে ব্যাংকিং বেশ আগেই আলাদা হয়েছে বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স নামে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে। এগুলো চলমান প্রক্রিয়া, বিশ্বায়নের যুগে এ ধারা অব্যাহত থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংখ্যায় বাড়লেও গ্র্যাজুয়েটদের গুণগত মান কেমন হচ্ছে, সেটাই হলো ভাবনার বিষয়। 

এ দেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এখনো ‘স্বপ্ন দেখে’ মূলত ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। এর বাইরে কোনো বিষয়ই তারা স্বপ্ন নিয়ে পড়ে না। আমাদের ফ্যাকাল্টিতে প্রতি বছর অত্যন্ত মেধাবী ছেলেমেয়ে পাই। কিন্তু সত্যিটা হলো, এ বিভাগে চান্স পাওয়ার আগে তারা অধিকাংশই (বিশেষত সায়েন্স ও আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ডের) বিজনেস পড়ার কথা কল্পনাও করেনি। তাহলে অন্য কিছু পড়ার স্বপ্নে বিভোর একজন শিক্ষার্থী হঠাৎ কেন বিবিএ পড়তে আসছে? কারণ মার্কেটে (নিয়োগকর্তাদের কাছে) এখনো এ ডিগ্রিটার ইমেজ (গ্রহণযোগ্যতা) বেশ ভালো। এটা পড়লে সহজেই চাকরি পাওয়া যায়, এ ভাবনা অভিভাবকদের সহজেই প্রভাবিত করছে।

অনেক ছাত্রছাত্রীই প্রচণ্ড ভীতি, অনীহা এমনকি নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে বিবিএ পড়া শুরু করে। অনেকটা সেটেল্ড ম্যারেজের মতো। পরবর্তীকালে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী মজা পায়; চেষ্টা করে সংশ্লিষ্ট জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে। কিন্তু সত্যিকার কত ভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যে ‘উদ্যোক্তা’ হওয়ার বা ব্যবসায়িক পরিবেশে আজীবন কাজ করার মতো ‘ভালো লাগা’ সৃষ্টি হয়, সে প্রশ্নটা প্রায়ই অনুচ্চারিত থেকে যাচ্ছে। নিজের একটা সৃজনশীল ধারণা বাস্তবায়নের জন্য পাগলের মতো ছুটতে ঠিক কয়জন বিজনেস গ্র্যাজুয়েটকে দেখা যায়? যদি অন্যান্য বিভাগের মতো হাতেগোনা কিছু কোর্স পড়ে, গত্বাঁধা পরীক্ষা দিয়ে গতানুগতিক সার্টিফিকেটধারী গ্র্যাজুয়েটই হবে, তাহলে ‘বিজনেস ডিগ্রি’র এত কদর থাকার যৌক্তিকতা শিগগিরই কি প্রশ্নের মুখে পড়বে না?

আমরা মুখে স্বীকার করি বা না করি, বাস্তবে ব্যবসায় শিক্ষাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দীর্ঘমেয়াদে সেগুলো টিকে থাকার জন্য সাধারণ মানের গ্র্যাজুয়েট উৎপাদনই কি যথেষ্ট? তাছাড়া যার ব্র্যান্ড ইমেজ ভালো, তার দায়বোধও বেশি। সেক্ষেত্রে ব্যবসায় শিক্ষার সঙ্গে জড়িতরা নিজেদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তেমন কি ভ্যালু অ্যাড করতে পারছেন, যা দিয়ে বিবিএ পড়ুয়ারা অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের থেকে স্পষ্টভাবে স্বাতন্ত্রিক হবে? যদি তা না হয়, মোহভঙ্গ হতে খুব বেশিদিন লাগবে কি? 

ব্যবসায় শিক্ষার্থীদের সবসময় শেখানো হয় মার্কেটের চাহিদা মোতাবেক পণ্য উৎপাদন ও বণ্টন করতে। কিন্তু ব্যবসায় শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা (বিশেষত নীতিনির্ধারকরা) কি সেই কাজটা দক্ষতার সঙ্গে করছেন? বিবিএ প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া একজন শিক্ষার্থীকে যদি কাঁচামাল হিসেবে গণ্য করি, শেষ সেমিস্টারের মধ্যে তাকে চূড়ান্ত পণ্যে পরিণত করার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা কি বিনিয়োগ করছি? শিক্ষার্থীর নিজস্ব ভাবনা, তাদের মা-বাবার প্রত্যাশা এবং চাকরিদাতাদের চাওয়াকে বিবেচনায় নিয়ে কি আমরা তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ তত্পর রয়েছি? উত্তর মোটেই অজানা নয়।

মাঝে মধ্যে কিছু দৃশ্য দেখে হতভম্ভ হয়ে যাই। ইভনিং এমবিএ ক্লাসে বিভিন্ন ব্যাংকের রিজিওনাল বা এরিয়া ম্যানেজার পর্যায়ের লোকজন শিক্ষার্থীর আসনে বসা থাকেন। অথচ সেখানে সদ্য পাস করা একজন লেকচারারকে পাঠানো হয় ‘ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স’ বিষয়ে জ্ঞান দিতে! সেই শিক্ষকের অনেক ব্যাখ্যা বা উদাহরণ শুনে হয়তো শিক্ষার্থীদের হাসি চেপে রাখতে কষ্ট হয়। কারণ জ্ঞানদানকারী হয়তো কখনই একটি ব্যাংক বা বীমা কোম্পানির সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাননি। ফলে বিদেশী লেখকদের বইয়ে পড়া কিছু তত্ত্বকথা তোতা পাখির মতো আওড়ালে শিক্ষার্থীর বিদ্যমান জ্ঞানে ঠিক কতটুকু ভ্যালু অ্যাড হয়, তা ভাবনার বিষয় বটে।

এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে সেই শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে যাচ্ছেন কেন? কারণ তাদের একটা কাগজ (সার্টিফিকেট) দরকার। কিন্তু এ রকম কাগজের প্রয়োজনীয়তা আগামী কয়েক বছরে শেষ হয়ে যাবে। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে বিজনেস পড়া শিক্ষার্থীরা যখন নীতিনির্ধারণে চলে আসবে, তখন আর এমন বারোয়ারি এমবিএ শিক্ষার্থী থাকবে না। কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠান স্বতন্ত্র ইমেজ গড়তে সক্ষম হয়েছে, তাদের হয়তো সমস্যা হবে না। কিন্তু তখন অধিকাংশ বিজনেস স্কুলের (বিশেষত ইভনিং প্রোগ্রাম) পরিণতি কী হবে? সত্যিকারের ভ্যালু অ্যাড করতে ব্যর্থ হলে এ ‘নাইট স্কুল’গুলো টিকে থাকতে পারবে তো? 

সম্প্রতি নামকরা এক বিজনেস স্কুলে বেড়াতে গিয়ে সেখানকার শিক্ষক ও ছাত্রের অনুপাত শুনে খুবই বিস্মিত হলাম। দায়িত্বশীল পর্যায়ের একজনকে বললাম, তাহলে আপনারা শিক্ষক নিচ্ছেন না কেন? তিনি বললেন, বর্তমানে যারা আছেন, তারা চান না নতুন শিক্ষক আসুক! অর্থাৎ ইভনিং এমবিএ বা অন্যান্য প্রোগ্রাম থেকে যে অতিরিক্ত আয় হয়, তা হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে তারা অনেক বেশি চাপ নিচ্ছেন; তবুও শিক্ষক সংখ্যা বাড়াতে চাইছেন না! 

এখন কথা হলো, এভাবে চললে দীর্ঘমেয়াদে কি সেবার মান ঠিক রাখা সম্ভব? ব্যবসায় বিষয়ে পড়াচ্ছি অথচ ব্যবসায়ের মূলনীতি ‘ক্রেতার সন্তুষ্টি’ বিষয়ে উদাসীন থাকছি, ব্যাপারটা কেমন না? লক্ষণীয় বিষয় হলো, ব্যবসায় শিক্ষা প্রদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সপ্তাহের সাতদিনই সক্রিয় (কর্মরত) থাকছেন! সপ্তাহে এক বা দুদিন বিশ্রাম দরকার আছে বলেই তো কর্তৃপক্ষ আমাদের ছুটি দিচ্ছে। কিন্তু আমরা সেটা ভোগ না করে সপ্তাহজুড়ে শিডিউল রাখছি। তাতে আমরা সবসময়ই ক্লান্ত থাকছি। সপ্তাহের শুরু আর শেষের দিনের মধ্যে পার্থক্য করা যাচ্ছে না; কোনো রকমে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। এভাবে ঠিক কতদিন চলা সম্ভব, বিশেষত উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে? 

বর্তমানে বিবিএ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বলব, সমস্যা থাকবেই। নিজেদের গরজেই বাস্তবতা বুঝে সামনে এগোতে হবে। দিন শেষে তথাকথিত উচ্চ সিজিপিএ তোমাকে খুব একটা সাহায্য করতে পারবে না। আমার পরিচিত কয়েক হাজার বিজনেস গ্র্যাজুয়েটকে মোটাদাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। উচ্চ সিজিপিএধারীদের মধ্যে যারা সৌভাগ্যক্রমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা বা সরকারি চাকরিতে সুযোগ পেয়েছে, যেহেতু তাদের (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) পারফরম্যান্স দ্বারা উন্নতি-অবনতি নির্ধারণ হয় না, তারা মোটামুটিভাবে টিকে আছে। কিন্তু যারা সেটা পারেনি, তাদের অধিকাংশই কর্মক্ষেত্রে ভালো করতে পারছে না। কারণ জিপিএ নামক সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে গিয়ে তারা জীবনের জন্য দরকারি অসংখ্য দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে!

আরেকটা গোষ্ঠী হলো, অতিশয় উদাসীন গ্রুপ। মা-বাবা, শিক্ষক, অভিভাবক যে যা-ই বলুক, তারা ছাত্রজীবনে নিজের প্যাশনের পেছনে ছুটে অথবা কিছুই না করে দিনগুলো কাটিয়েছে। অসংখ্য কোর্সে ড্রপ বা ফেল করার কারণে একসময় তারা নিজেদের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। ফলে তারা বাস্তব জীবনে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা কোনোভাবে সরকারি চাকরিতে ঢুকে গেছে, তারা বেঁচে গেছে। অন্যেরা মোটেই ভালো নেই। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব করার মতো ফ্যাকাল্টির ছাত্র ছিল সেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না।

অবশিষ্ট গোষ্ঠীটা হলো মোটামুটি সিজিপিএধারী। তারা ক্লাস-পরীক্ষাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করত। কোনো কোর্সে সমস্যা হলে বিচলিত না হয়ে পরবর্তীতে উতরে গেছে। মেস, হল, ক্যাম্পাসে অনেকের বন্ধু হয়েছে। খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবদান রাখতে চেষ্টা করেছে। ক্যাম্পাসের আড্ডায় তাদের উপস্থিতি অন্যদের প্রশান্তির কারণ হয়েছে। ডিপার্টমেন্টের যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজনে তারা সর্বোচ্চটা দিতে চেষ্টা করেছে। সত্যি কথা বলতে কি, বাস্তব জীবনে এরাই সবচেয়ে ভালো করছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পাঁচটা বছর শুধু দুর্বোধ্য কিছু বিষয় মাথা ঠুকে মুখস্থ করতে যারা ব্যয় করেছে, কর্মজীবনে তারা মোটেই ভালো নেই। তাই একজন বিজনেস গ্র্যাজুয়েট শুধু সিজিপিএর পেছনে ছুটবে না। জীবনের জন্য দরকারি অসংখ্য দক্ষতার প্রতিও সমানভাবে মনোযোগী হবে, সেটাই প্রত্যাশা।

পরিশেষে বলব, সারা জীবন অন্যের চাকরি করা একজন বিজনেস গ্র্যাজুয়েটের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। অবশ্যই এক্সিট প্ল্যান থাকতে হবে। কর্মজীবনের শুরুতে সংগত কারণেই চাকরি করতে হবে। কারণ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু তাত্ত্বিক কিছু জ্ঞান দেয়, যার ওপর ভর করে নিজে কিছু করতে গেলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই পাঁচ-সাত বা দশ বছর চাকরি করবে শেখার জন্য। যত ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে, ততই সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পাবে। একটা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার যোগ্যতা অর্জনে এটা খুবই দরকার।

এ সময়ে অন্তত তিনটা কাজ করবে যতটা সম্ভব সঞ্চয় করা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনার গুণাবলি অর্জনে মনোযোগী হওয়া। এরপর সুবিধাজনক সময়ে নিজের স্বপ্নের কাজটা শুরু করতে হবে। শুরুতে আর্থসামাজিক নানা বাধা আসবে (আমার বন্ধুদের অভিজ্ঞতা সেটাই বলে), কিন্তু লেগে থাকলে সফলতা পাওয়া যাবেই। আর সেটা করা সম্ভব হলে তবেই বিজনেস পড়াটা হবে তাত্পর্যময়; আমাদের গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে আমরাও হব ভীষণভাবে গর্বিত। 

 লেখক: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের পিএইচডি ফেলো

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় - dainik shiksha অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032680034637451