বাংলা হোক সব ভাষার গর্ব - দৈনিকশিক্ষা

বাংলা হোক সব ভাষার গর্ব

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অতি সম্প্রতি ইউনেসকোর জরিপে পৃথিবীর মধুরতম ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা। বাংলা ভাষায় প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলা ভাষায় রচিত আমাদের জাতীয় সংগীত পৃথিবীর মধুরতম সংগীতের একটি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৯ উপলক্ষে বিশ্বের ৪৯টি ভাষায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত প্রকাশ করেছে বেলারুশের একটি প্রকাশনা সংস্থা। সিয়েরা লিওন বাংলা ভাষাকে তাদের দেশে দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। আশা করা যায়, জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে শিগগিরই বাংলা স্বীকৃতি পাবে। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষের প্রথম ভাষা বা মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা ভাষা মাতৃভাষার দিক থেকে চতুর্থ এবং জনসংখ্যার বিচারে সপ্তম অবস্থানে। বাংলাভাষী মানুষের প্রধান আবাসভূমি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা হলেও ওড়িশা, আসাম, বিহারসহ আরো কয়েকটি প্রদেশের মানুষ বাংলা ভাষার চর্চা করে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, মালয়েশিয়াসহ ইউরোপের অনেক দেশে অসংখ্য বাংলাভাষী মানুষ বাস করে। বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, কানাডাসহ আরো কয়েকটি দেশ থেকে বাংলা ভাষায় একাধিক সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলা ভাষায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের টেলিভিশন ও বেতারে। ইউরোপ, আফ্রিকাসহ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করছে বাংলাদেশের সেনা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ফলে সেখানেও বাংলা ভাষা চর্চা হচ্ছে নানাভাবে।

বর্তমানে বাংলা একাডেমির ব্যাবহারিক বাংলা অভিধানে শব্দসংখ্যা ৭৩ হাজার ২৭৯টি। বাংলা একাডেমির বিবর্তনমূলক অভিধানে শব্দের সংখ্যা প্রায় সোয়া লাখ। বাংলা ভাষায় বর্তমানে ব্যবহৃত অনেক নতুন এবং কৃতঋণ শব্দ অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে আধুনিক বাংলা অভিধান। বাংলা একাডেমির অভিধানই আছে ২৪টির বেশি। রয়েছে বাংলা ভাষাবিষয়ক অন্যান্য গ্রন্থ।

ভাষা একটি গতিশীল ব্যাপার। ইতিহাস, সভ্যতা, সমাজ, সংস্কৃতি, সাহিত্য কিংবা রাজনীতির মতো ভাষাও তার নির্দিষ্ট গতিপথে চলে। তাতে জোর খাটানো চলে না। কালের পরিক্রমায় অন্য অনেক কিছুর মতো ভাষার ব্যবহারেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে।

অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি, তথ্য-প্রযুক্তি, বিশ্বায়ন ও পরিবেশগত প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, শিক্ষিত—সব শ্রেণিকেই প্রতিনিয়ত নতুন শব্দের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গণমাধ্যমের প্রসার দূরকে নিয়ে এসেছে কাছে। জিপিএস, ই-মেইল, এসএমএস, সিম, সেলফি প্রভৃতি শব্দ এখন বাংলা ভাষার অচ্ছেদ্য অঙ্গ। আধুনিক বাংলা অভিধানে শব্দ চয়নের সময় এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তথাপি ভাব প্রকাশের জন্য তৈরি হচ্ছে আনকোরা নতুন শব্দ-বাক্য। মৌখিকভাবে প্রয়োগে এসব শব্দ-বাক্যের যোগ্যতাহানি নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও লিখিতরূপে এগুলোর প্রয়োগে ভাষার ব্যাকরণ বা নিয়ম-নীতির কোনো তোয়াক্কা থাকছে না। নিয়মানুসারে শব্দশৈলীর ন্যূনতম বিধিও অক্ষুণ্ন থাকছে না।

স্বীকার্য যে ব্যাকরণবিদ বা ভাষাবিজ্ঞানীরাও এসব নিয়ম-নীতির বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করছেন না। প্রচারমাধ্যম ও নেটওয়ার্কের আওতায় অন্তর্ভুক্ত মানুষগুলোর ইংলিশ-বাংলিশ ব্যবহার চোখে পড়ছে খুব বেশি। খুব দ্রুত মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ভুল, উদ্ভট শব্দের ব্যবহার চলছে অহরহ। ফেসবুক, টুইটার ও প্রযুক্তিগত অন্যান্য বার্তায় এজাতীয় উদ্ভট শব্দের ব্যবহার অত্যধিক। সাম্প্রতিক সময়ে উদীয়মান কিছু লেখকের প্রবন্ধ-গল্প-উপন্যাস পড়েও মনে হয়, বাংলায় যথাযথ অনুশব্দ-প্রতিশব্দের দীনতায় তারা ভাষার লিপ্যন্তরীকরণ করছেন বা ইংরেজি শব্দ বাংলায় বসিয়ে দিচ্ছেন। বাংলা-ইংরেজি মিশ্রিত পঙিক্তই যেন তাদের ভাব প্রকাশের অতি যোগ্য মানদণ্ড। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ, চলচ্চিত্র-নাটক, গল্প-উপন্যাস, কবিতা-কাব্যগ্রন্থ, প্রবন্ধ-সংকলন, সাময়িকীর শিরোনামও লেখা হচ্ছে প্রতিবর্ণীকৃতভাবে।

অভিধানে উল্লিখিত ও প্রচলিত উপযোগী শব্দ বাদ দিয়ে প্রয়োগ হচ্ছে আনকোরা অনুপযুক্ত শব্দ-বাক্য। এ ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাপ্রীতি বা বাংলার জন্য নিষ্ঠা, এমনকি ভাষান্তরের কোনো প্রয়োজনীয়তাও অনেককে স্পর্শ করছে না। উপরন্তু প্রতিবর্ণীকৃত শব্দের সঙ্গে বাংলার ‘ই’, ‘ঈ’, ‘উ’-কার বসিয়ে যত্রতত্র পরিবর্তন করা হচ্ছে শব্দের উচ্চারণ। ফলে ব্যত্যয় ঘটছে অর্থের। একই শব্দের বিভিন্নরূপ প্রয়োগ ঘটছে মাত্রাতিরিক্ত। নিয়ম-নীতির বাইরে তৈরি হচ্ছে নতুন শব্দ-বাক্য; যার বেশির ভাগই ঘটছে বাংলা+ইংরেজি ও ইংরেজি+বাংলা শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে। তাদের ব্যবহৃত শব্দগুলোও অনেক সময় বোঝা কঠিন।

একসময় বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দ ঢোকানোর প্রবণতা যেমন একটা বিশেষ গোষ্ঠীর ছিল, তেমনি আরবি, ফারসি শব্দ ঢোকানোর প্রবণতাও অন্য গোষ্ঠীর মধ্যে দেখা গেছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ, বিশেষ করে ইংরেজি শব্দ-বাক্য ঢোকানোর প্রবণতাকে সে ধারায় ব্যাখ্যা করা সমীচীন হবে না। বরং এ প্রবণতাকে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের প্রতি উদাসীনতা বা ভাষার প্রতি নিষ্ঠাহীনতা বলাটা অধিক শ্রেয় হবে। বর্তমানে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার অনেক সমৃদ্ধ। একটু আন্তরিকতা আর একটু ভাষাপ্রেমই পারে বিদেশি ভাষার শব্দ-বাক্য পরিহার করতে। আচার-আচরণে, কথায়-লেখায়, কারণে-অকারণে চকচকে-তকতকে বাংলা ভাষা ব্যবহার করলেই আমাদের ভাষা হবে সব ভাষার গর্ব। একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ হবে মহিমান্বিত।

লেখক : ড. মুহম্মদ মনিরুল হক, প্রাবন্ধিক।

শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067598819732666