ভয়াবহ বায়ু দূষণ ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে। এ জন্য সেখানে সব স্কুল, কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ২১ শে নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ। তবে এক্ষেত্রে পরিবহন ও প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোকে ছাড় দেয়া হয়েছে। ওই শহরে অবস্থিত ১১টি কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৫টিকে সচল রাখার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
দিওয়ালি উৎসবের পরে দিল্লির বাতাসে বিষাক্ততা ছেয়ে গেছে। যেসব ধুুলিকণা ও ক্ষতিকর কণা মানুষের ফুসফুসকে অকেজো করে দিতে পারে তার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে অসম্ভব রকম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব কণার নিরাপত্তা বিষয়ক নির্দেশনায় পিএম২.৫ নির্ধারণ করে দিয়েছে।
কিন্তু দিল্লিতে এর মাত্রা অনেক বেশি। বিশেষ করে মঙ্গলবার শহরের কোনো কোনো অঞ্চলে বাতাসের গুণগত মানের সূচক ৪০০ বা এর খুব কাছাকাছি রেকর্ড করা হয়েছে। এই অবস্থাকে ইংরেজিতে ‘সেভার’ বা ভয়াবহ হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। বাতাসের গুণগত মানের সূচক একিউআইতে শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত মাত্রাকে ভাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৫১ থেকে ১০০ পর্যন্ত মাত্রাকে সন্তোষজনক হিসেবে ধরা হয়।
দিল্লিতে আছে বিভিন্ন শিল্প। চলাচল করে অসংখ্য গাড়ি। এসব থেকে নির্গত হয় কার্বন ডাই অক্সাইডসহ নানা রকম ক্ষতিকর কণা। তার সঙ্গে আছে ধুলোবালি। আর আবহাওয়ার ধরণের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী হলো দিল্লি। সেখানে প্রধানত শীতকালে বাতাস বেশি বিষাক্ত হয়ে পড়ে। এ সময়ে আশপাশের রাজ্যগুলোতে কৃষক ফসল ঘরে তোলার পর ক্ষেতে পড়ে থাকা অবশিষ্টাংশ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। তা থেকে যে ধোয়া আর ধুলিকণা আকাশে উঠে যায়, তা দিল্লির আকাশে মেঘের মতো আস্তরণ সৃষ্টি করে। পাশাপশি আছে দিওয়ালি উৎসব। এ সময় লাখ লাখ আতশবাড়ি পোড়ানো হয়। এসব মিলে বাতাসের গুণগত মানকে আরো খারাপ করে তুলছে। বাতাসে এ সময় গতি নেই বললেই চলে। ফলে এসব দূষণ দূরে সরে যেতে পারে না। শহরের ওপরে মেঘের মতো নিম্নস্তরে ভাসতে থাকে।
এ বছর দূষণ এমন কঠিন আকার ধারণ করেছে যে, সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে সতর্কতা দিতে উদ্বুদ্ধ হন। কোর্ট থেকে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে এবং জরুরি ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়। এ বিষয়ে আদালতে শুনানির পর বৈঠকে বসে দিল্লির কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট। তা থেকেই জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। তারা স্কুল, কলেজ বন্ধ সহ দিল্লিতে, প্রতিবেশী রাজ্য উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও রাজস্থানে আগামী ২১ শে নভেম্বর পর্যন্ত কোনো ট্রাক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের পরিবহন এক্ষেত্রে নির্দেশের আওতামুক্ত থাকবে। এই প্যানেল দিল্লি এবং অন্য রাজ্যগুলোকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শতকরা কমপক্ষে ৫০ ভাগ কর্মীকে বাসায় থেকে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে।