বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হলো ১৬২ শিশুকে - দৈনিকশিক্ষা

বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হলো ১৬২ শিশুকে

পঙ্কজ দে |

জমিজমার মালিকানা নিয়ে বিরোধ থাকায় বিদ্যালয় থেকে অমানবিকভাবে বের করে দেওয়া হলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। তারা যাতে মাঠে বসেও পরীক্ষা দিতে না পারে সে জন্য কলেজছাত্রদের ফুটবল দিয়ে মাঠে খেলতে নির্দেশ দেন অধ্যক্ষ। বৈশাখের এই প্রখর রোদে মাঠে ঠাঁই না পেয়ে স্কুলের পেছনে সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে বসে পরীক্ষা দিয়েছে ১৬২ শিশু শিক্ষার্থী। এ সময় কয়েক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে।  সোমবার (২৩ এপ্রিল) সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মংলারগাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এই নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়। 

জানা যায়, দোয়ারাবাজার ডিগ্রি কলেজের সঙ্গে জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে এ বিদ্যালয়ের। ১৯৯৪ সালে মংলারগাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ৩৩ শতক জমি দানপত্র রেজিস্ট্রি করে দেন একই গ্রামের ঠাকুর চান দাসের ছেলে সারদা কান্তি দাস। প্রায় তিন বছর পাঠদানের পর বিদ্যালয়টি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়। ঘর না থাকায় পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকে। এ সময় ওই বিদ্যালয়ের জমি খালি থাকায় সে জমিতেই দোয়ারাবাজার ডিগ্রি কলেজের ৪  তলা ভবন নির্মিত হয়। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে দোয়ারাবাজার কলেজের টিনশেড ঘরটি। ২০০৭ সালে আবার দোয়ারাবাজার কলেজের পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরে মংলারগাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সম্প্রতি এ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, দাতা সারদা কান্তি দাস বিদ্যালয়কে যে জমি দানপত্র করে দিয়েছিলেন, সেটি পরবর্তী সময়ে কলেজকে দানপত্র করে দিয়েছেন। বিষয়টি জেনে স্কুল কর্তৃপক্ষ দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যান। ইউএনও স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানান, মংলারগাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় রয়েছে। সেখানে ১১৫ শতক জমি রয়েছে। তা জেনে গত বৃহস্পতিবার মংলারগাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য জমি বন্দোবস্তের আবেদন করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জেনে দোয়ারাবাজার কলেজের অধ্যক্ষ ক্ষিপ্ত হন। তিনি ওই দিনই বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড খুলে ওই ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন। গতকাল বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ১৬২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হলে কলেজ অধ্যক্ষ একরামুল হক শিক্ষার্থীদের ঘরে ঢুকতে না দিয়ে তাড়িয়ে দেন। পরে প্রখর রোদে খোলা আকাশের নিচে পরীক্ষা দিয়েছে শিশু শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সোনিয়া, প্রথম শ্রেণির চিত্ত দাস ও জগাই দাস অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুবী রানী দাস বলেন, ১৯৯৪ সালে সারদা কান্তি দাসের দান করা ৩৩ শতাংশ জমিতে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কয়েক বছর পর স্কুলঘর ঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৭ সাল থেকে চার শিক্ষক নিয়ে আবারও কলেজের পরিত্যক্ত ঘরে নিয়মিত পাঠদান শুরু হয়। ২০১০ ও ২০১৩ সালে বেসরকারি স্কুলগুলো সরকারিকরণের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে না পারায় এ স্কুলটি জাতীয়করণ হয়নি। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন হয় যে ঘরে স্কুল কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করছি, এই ঘর নিজেরা ৬০ হাজার টাকা দিয়ে ঠিকঠাক করিয়েছি। এখন স্কুলটি সরকারিকরণের জন্য দানপত্র দলিলের নকল বের করেছি। দলিল বের করার পর দেখলাম যে জমি স্কুলের, সেখানে কলেজের ভবন হয়েছে। আমরা এ নিয়ে ইউএনওর কাছে গেলে আবেদন করার কথা বলেন। ওই আবেদনের পরই কলেজ অধ্যক্ষ ক্ষুব্ধ হয়ে স্কুলের সাইনবোর্ড খুলে ঘরে তালা লাগিয়ে দেন।

মংলারগাঁওয়ের সাবেক ইউপি সদস্য এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক তাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের জমিতে এখন দোয়ারাবাজার কলেজ; আমরা তাতে অখুশি নই। কিন্তু পরিত্যক্ত অর্পিত জমিতেও স্কুল পরিচালনায় কলেজ অধ্যক্ষ বাধা দিচ্ছেন। সোমবার পরীক্ষা দিতে আসা শিশুদের তিনি স্কুলে ঢুকতে দেননি। তিনি অমানবিক আচরণ করেছেন। শিক্ষার্থীরা মাঠে বসে পরীক্ষা দিতে চাইলে কলেজের শিক্ষার্থীদের ফুটবল দিয়ে মাঠে খেলতে ছেড়ে দেন তিনি। এক পর্যায়ে স্কুলের পেছনে শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা হলে ওখানেও তিনি ফুটবল দিয়ে কলেজের ছাত্রদের পাঠিয়ে দেন। শেষে মংলারগাঁও-কলেজমুখী সড়কে কাঠফাটা রোদে বসে পরীক্ষা দিতে গিয়ে কয়েক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমরা এমন অমানবিক ঘটনার বিচার চাই।

দোয়ারাবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল খালেক বলেন, পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ খুবই দুঃখজনক। বাচ্চারা মাঠে বসেও পরীক্ষা দিতে পারেনি।

মংলারগাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও বিদ্যালয়ের ভূমিদাতা সারদা কান্তি দাস বলেন, দোয়ারাবাজার ডিগ্রি কলেজে এবং মংলারগাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জমি দান করেছি। মংলারগাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুরু হওয়ার কয়েক বছর পর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কলেজ অধ্যক্ষ ওই জমি কলেজের নামে লিখে দেওয়ার অনুরোধ করায় আমি দানপত্র দলিল করে দিই। এখন সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান করলেই ভালো হয়।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে দোয়রাবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ একরামুল হক বলেন, মংলারগাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কলেজের জমিতে কোনো স্কুল ঘর কখনোই ছিল না, এখনও নেই। ওই বিদ্যালয়ের শিশুরা কোথায় পরীক্ষা দিয়েছে, তাও তার জানা নেই। 

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, মংলারগাঁও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হয়ে আসছিল দোয়ারাবাজার কলেজের একটি টিনশেড ঘরে, যেখানে ওই ঘরটি রয়েছে। সেটি অর্পিত সম্পত্তি। সে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল কলেজকে। তারাই লিজের টাকা পরিশোধ করে। বৃহস্পতিবার মংলারগাঁও বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ জমি বন্দোবস্তের আবেদন করে। বন্দোবস্ত বাতিল করে আবার দিতে হলে যাচাই-বাছাই করতে হবে। কলেজ কর্র্তৃপক্ষ সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় আপাতত পাশের নৈনগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে বলা হয়েছে। 

সূত্র: সমকাল

সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0075321197509766