দেশের ৮৪ শতাংশ মানুষ বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে আগ্রহী। তবে ৫২ শতাংশ মানুষ এই মুহূর্তে টিকা নিতে আগ্রহী নন। টিকার কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস অপেক্ষা করে টিকা নিতে চান তারা। অন্যদিকে কার্যক্রম চালু হওয়ার পর ৩২ শতাংশ লোক টিকা নিতে আগ্রহী। ১৬ শতাংশ কখনোই টিকা নিতে চান না।
'কভিড-১৯ টিকার প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ' শীর্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার ওয়েবিনারের আয়োজন করে জরিপের প্রাথমিক ফলাফল জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ।
তিনি জানান, কভিড ১৯ টিকা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি, গ্রহণযোগ্যতা এবং চাহিদা নিয়ে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অর্থায়নে ১০ থেকে ২৫ জানুয়ারি এ জরিপ চালানো হয়। দেশের ৮টি বিভাগের ৮টি জেলা ও ১৬টি উপজেলা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসমাগম বেশি হয়- এমন জায়গায় সিস্টেমেটিক দৈবচয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে তিন হাজার ৫৬০ জনের ওপর জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া জরিপে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় থানাগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়, বিনামূলে দেওয়া হলে দেশের ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী। তবে সবাই এই মুহূর্তে টিকা নিতে চান না। যারা এই মুহূর্তে নিতে চায় না তাদের ৫৪ শতাংশ টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ৩৪ শতাংশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে শঙ্কিত এবং ১২ শতাংশের মাঝে আমদানি করা টিকার গুণগত মান নিয়ে সন্দেহ আছে। যারা একেবারেই নিতে চান না, তারা টিকার মান ও কার্যকারিতা এবং বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে অর্থের বিনিময়ে ৬৬ শতাংশ টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বয়স্কদের (৬০ বছর ও তদূর্ধ্ব) মাঝে টিকার ব্যাপারে উৎসাহ কিছুটা কম (৭৮ শতাংশ)। এটাও দেখা গেছে, যাদের পরিবারে লোকজন আক্রান্ত হয়েছিল, তাদের মাঝে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম।
জরিপে দেখা যায়, শহরের চেয়ে গ্রামের লোকদের মাঝে টিকা নেওয়ার আগ্রহ বেশি। তবে টিকাদান কর্মসূচি চালুর সঙ্গে সঙ্গে টিকা নেওয়ার আগ্রহ বিষয়ে গ্রাম ও শহরের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। বিভাগগুলোর মধ্যে রংপুরে টিকা নেওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। তবে বিনামূল্যে দেওয়া না হলে এই সংখ্যা অর্ধেকেরও কম। কিন্তু ঢাকা শহরে টিকা নেওয়ার আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম (৭২ শতাংশ)।
ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, টিকা সরকারিভাবে দেওয়া উচিত। প্রাইভেটের কাছে এখন তা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে সংশয় আছে, তা দূর করতে হবে। অ্যাপসের মাধ্যমে টিকার রেজিস্ট্রেশনে জটিলতা আছে। যেহেতু এনআইডির মাধ্যমে টিকা নিতে হচ্ছে, সেখানে অ্যাপসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন পড়ছে না। এনআইডি দেখিয়ে সরাসরিই টিকা দেওয়া যেতে পারে। অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, টিকা কার্যক্রম শুরু হলে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে আমরা আরও একটি গবেষণা করব।
গবেষণা দলে অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ ছাড়াও সরকার নিয়োজিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা দলের সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডজাংকট ফ্যাকাল্টির ড. মোফাখার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. নাসরিন সুলতানা, একই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল যুক্ত ছিলেন।