মোমি চাকমার বয়স ছয় বছর। সবেমাত্র বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেছে। সে বাবার কাছে বায়না ধরেছে শহরের বিদ্যালয়ে পড়বে। আরও কত বায়না শিশুটির। কিন্তু মোমির বাবা রিটন চাকমার সে সামর্থ্য নেই।
রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়নের সরকারিকৃত দুলুছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিটন চাকমা। তিনি ছোট্ট শিশু মোমির বাবা। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ৩ বছর ধরে বিনা বেতনে বিদ্যালয়ে পাঠদান করলেও উপজেলা শিক্ষা বিভাগের গাফিলতির কারণে রিটন চাকমার চাকরি সরকারিকরণ হয়নি। তার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির। তাই শিশুসন্তান মোমি ও স্ত্রী নিয়ে চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন রিটন চাকমা।
জানা গেছে, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে মে মাসে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ যাচাই কমিটির এক সভায় দুলুছড়ি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত প্রধান শিক্ষক রিটন চাকমাকে সরকারিকরণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় তাকে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিদের্শ অনুযায়ী সম্প্রতি সরকারিকৃত বিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষকদের তথ্য যাচাই-বাছাই উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেখা যায়, দুলুছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রিটন চাকমার স্থলে জনৈক অনুপম চাকমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনুপম চাকমা বর্তমানে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
শিক্ষক রিটন চাকমা বলেন, খেয়ে-না খেয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে পাঠদান করেছি। অথচ আমার চাকরিটাই সরকারিকরণ হলো না। আমি এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অনিল চাকমা বলেন, রিটন চাকমা বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে শিক্ষায় পাড়াবাসীকে আশার আলো দেখিয়ে যাচ্ছেন। তার নামটি সরকারিকরণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো না, এটা চরম অন্যায়।
দুমদুম্যা ইউপি চেয়ারম্যান শান্তি রাজ চাকমা বলেন, ৩ বছর ধরে বিনা বেতনে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার আলো দিয়ে যাচ্ছেন রিটন চাকমা। সরকারিকরণ তালিকায় তার নাম না থাকা খুবই দুঃখজনক ও অমানবিক। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বিশেষ বিবেচনায় দেখার আনুরোধ জানাচ্ছি।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রিটন চাকমা বলেন, কর্মরত শিক্ষকের নাম জাতীয়করণ তালিকায় না থাকা অন্যায়।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও তৎ সময় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আশিষ কুমার ধর উপজেলা শিক্ষা কমিটি দুলুছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিটন চাকমাকে জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণে সিদ্ধান্তর কথা নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কৌশিক চাকমা বলেন, যেহেতু পূর্বে প্রেরিত জাতীয়করণ তালিকায় তার নাম নেই, সে ক্ষেত্রে তার নাম অন্তর্ভুক্তকরণে আমি অসহায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহফুজুর রহমান জানান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।