দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. বোরহান উদ্দীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষা অফিসের একজন কর্মচারী। তিনি এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগের ওই কর্মচারী দুদককে বলেছেন, শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দীন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে থাকেন। ঘুষ নিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২০ ডিসেম্বর হাকিমপুর শিক্ষা অফিসের একজন কর্মচারী দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবরে ওই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে দুদক এখনো এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, হাকিমপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. বোরহান উদ্দীন প্রায় দুইবছর ধরে কর্মরত আছেন। এর অধিকাংশ সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেছেন। সে কারণে উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তিনি স্কুলের বিভিন্ন নিয়োগে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে থাকেন। বোরহান উদ্দীন হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে দাপটের সাথে চলাফেরা করেন। কাউকেই তিনি পরোয়া করেন না। বেশীর ভাগ সময়ই তিনি ঢাকা ও পঞ্চগড়ে অবস্থান করেন। ঘুষ বাণিজ্য ও ঢাকাতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দালালী করে বিপুল পরিমান অর্থ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি।
অভিযোগে দাবি করা হয়, পঞ্চগড়ে কয়েকটি চা বাগান (নিজামাবাদ, চাকলাহাট ও ভিতরগড় মৌজা), গরুর খামার (মাধুইপাড়া), মৎস্য খামার, নামে বেনামে অনেক জমিজমাসহ ঢাকাতে কয়েকটি ফ্লাটের (ফ্লাট ১# ২৫২/২/এ ২য় ৩লা পূর্ব পাশ, রোড নং-৬, মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটি লিঃ, ঢাকা এবং ফ্লাট ২# ১/১২ ইকবাল রোড, ব্লক-এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা), সাভারে জমি ও বিপুল অর্থসম্পদ বানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা বোরহান উদ্দীন।
অভিযোগে আরও জানানো হয়, তার স্ত্রী ও সন্তানেরা বিভিন্ন ব্রান্ডের নামি দামী গাড়ীতে রাজকীয়ভাবে চলাফেরা ও জীবন যাপন করেন। বোরহান তার নামে ও বেনামে পঞ্চগড়ের ইসলামী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকসহ ঢাকার ন্যাশনাল ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংকে একাধিক অ্যাকাউন্টে রয়েছে প্রচুর টাকা। ‘বোরহান একজন নারী লিপ্সু ব্যাক্তি’ বলেও অভিযোগে দাবি করা হয়। বোরহান উদ্দিনের স্বেচ্ছাচারীতা ও দুর্নীতির হাত থেকে হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দুদক উপ-পরিচালকের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে অভিযোগে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত বোরহান উদ্দীনের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছুটা ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ সকল অভিযোগ মিথ্যা। যে অভিযোগ করেছে তার কাছে জিজ্ঞেস করুন।
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আশিকুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে অফিস স্বাভাবিক না থাকায় নথি না দেখে এ অভিযোগের ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। অভিযোগ আসলে প্রথা অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। যে কোন অভিযোগের ব্যাপারে আমাদের এ নীতি বিদ্যমান রয়েছে।
জানা গেছে, বোরহানউদ্দিন দুই বছর আগে পঞ্চগড় সদর উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা ছিলেন। তার স্ত্রী ও ছেলেকে তিনি পঞ্চগড়ের উত্তরা গ্রিন টি ইন্ড্রাজট্রিজের যৌথ মালিক বানিয়েছেন। পঞ্চগড়েও তার বিরুদ্ধে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিলো। পঞ্চগড়েও অফিসে নিয়মিত উপস্থিত না থাকার কারনে তার বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ উঠেছে।