বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ : ওয়াশিংটন টাইমসে জয়ের কলাম - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ : ওয়াশিংটন টাইমসে জয়ের কলাম

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মহামারীতে বিশ্বজুড়েই যখন কর্মসংস্থান হৃাস পাচ্ছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে, তখন ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

লকডাউনের মধ্যে নিজস্ব অফিসের বাইরে মানুষকে বাড়িতে বসে অফিস করতে হয়েছে, আর সেই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা কীভাবে দুনিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সে বিষয়েও বিস্তারিত উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টার লেখায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন টাইমসে মঙ্গলবার ‘ডিজিটাল লিপস হেলস্ বাংলাদেশ ন্যাভিগেইট দ্য প্যানডেমিক’ শীর্ষক জয়ের কলামটি প্রকাশিত হয়।

তিনি লিখেছেন, কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বজুড়ে শ্রমবাজারকে ব্যাহত করেছে এবং এই ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। এর স্বল্পমেয়াদী ফলাফল ছিল দ্রুত ও তীব্র। লাখ লাখ মানুষকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং আরও লাখ লাখ মানুষ বাড়ি থেকে কাজ শুরু করে। মহামারীর দীর্ঘমেয়াদী এই প্রভাব নিয়ে এখনো বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত; শ্রমের চাহিদা এবং আমাদের কাজ করার পদ্ধতি চিরতরে পরিবর্তিত হয়েছে।

“অনেক সরকার এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এই ধাক্কা মানিয়ে নিতে সংগ্রাম করছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবাখাতকে আধুনিক ও ডিজিটাল করার যে পরিকল্পনা, তার মধ্যে এ বিষয়ে কিছু ফলাফল মিলছে।”

পেশাদার তথ্য-প্রযুক্তিবিদ জয়ের লেখায় ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা এবং দেশের মানুষের ইন্টারনেট প্রাপ্তির সুবিধার কথা উঠে এসেছে।

সজীব ওয়াজেদ লিখেছেন, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরুর পর দ্রুত ইন্টারনেট অ্যাক্সেস বৃদ্ধি এবং বহুমুখী অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে। সংক্ষেপে, ডিজিটাল বাংলাদেশ ইন্টারনেটের ব্যবহার ও স্মার্টফোন-ভিত্তিক প্রোগ্রামগুলির ব্যবহার ধীরে ধীরে সহজ করে তুলেছে এবং কাগজ-ভিত্তিক সরকারি পরিষেবাগুলিকে প্রতিস্থাপন করেছে। 

“পরিকল্পনা অনুযায়ী, সরকার ৮হাজার ৫০০ টিরও বেশি ডিজিটাল সেন্টারের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে যা সর্বত্র অনলাইন পরিষেবা সরবরাহ করছে। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে এই পরিষেবাগুলির সবই ছিল সাধারণ মানুষের আওতার বাইরে। তখন মাত্র ৮ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন বাংলাদেশে ১২ কোটিরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। ইন্টারনেট আওতায় রয়েছে দেশের ৯৮ ভাগ অঞ্চল।”  

তিনি লিখেছেন, এছাড়াও, ডিজিটাল বিশ্বে সফল হওয়ার জন্য বাংলাদেশ লাখ লাখ মানুষকে প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে সজ্জিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সরকার ৮৬ হাজার ‘ডিজিটাল ক্লাসরুম’  তৈরি করেছে এবং ১৫ লাখ শিক্ষার্থীকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে (আইসিটি) প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ফলস্বরূপ, ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মিলিয়ন ডলারের তথ্য প্রযুক্তি রপ্তানি ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২০০০ মিলিয়নে (২ বিলিয়ন) পৌঁছেছে। 
মহামারীর মধ্যে ঘরে বসে কাজ করা এবং এই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের কাজের প্রসার বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা লিখেছেন, মহামারীর ফলে উত্থাপিত অনেক শ্রম ও অর্থনৈতিক বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর মিলছে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে। যখন বিশ্বজুড়ে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘যখন কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জমায়েতের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে তখন আমি কীভাবে জীবিকা অর্জন করব?’ বাংলাদেশিরা তাদের বাড়িতে কম্পিউটারে কাজ করেছে এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে দুরে বসেও কাজ করার সুবিধা গ্রহণ করেছে।

“প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং বুমিং হচ্ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অনলাইন ফ্রিল্যান্সার সরবরাহকারী দেশ এখন বাংলাদেশ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে রয়েছে ৫০ হাজার ফেসবুক-ভিত্তিক উদ্যোক্তা। বাংলাদেশে প্রায় ৪৩ মিলিয়ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই প্ল্যাটফর্মটি বিস্তৃত পরিসরে ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করে। এটি মহামারী চলাকালীন একটি স্থিতিস্থাপক কর্মসংস্থান মডেল হিসাবেও প্রমাণিত, কারণ কাজের ধরণ অফিসে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিতির পরিবেশ থেকে দূরে সরে গেছে।”

তিনি লিখেছেন, ফ্রিল্যান্স কাজের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ওয়েব ডিজাইন, ট্যাক্স প্রস্তুতি, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান ও মার্কেটিং। বিশ্বের আউটসোর্সিং সেবা প্রদানের জন্য এশিয়া এক নম্বর অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

“ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন শুরুর পর বাংলাদেশে বিজনেস প্রসেসিং আউটসোর্সিং (বিপিও) সেক্টর সমৃদ্ধ হয়েছে। বিপিও খাত বছরে প্রায় ২৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে এ খাতে প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলারের রাজস্ব রেকর্ড করে। আজ, সেক্টরটি বছরে ৬৮ মিলিয়ন ডলার আয় করে। এর আরও ভাল দিক যে, এই খাতে ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।”

আর এই তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ সরকার কীভাবে নীতি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সে বিষয়টিও উঠে এসেছে তার লেখায়।

জয় লিখেছেন, বাংলাদেশ সরকার তথ্য প্রযুক্তি খাতকে সহায়তা দেয় এমন নীতি তৈরি করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সম্প্রতি দেশে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ স্ব-নিযুক্ত পেশাদার ফ্রিল্যান্সার আইডেন্টিফিকেশন কার্ড দেয়া শুরু হয়েছে। আইডি দিয়ে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের সুবিধাগুলি উপভোগ করতে পারবে, যা আগে শুধুমাত্র যারা বেতনের চাকরিতে করতেন তাদের কাছে পরিচিত ছিল। ফলস্বরূপ, ফ্রিল্যান্সাররা তাদের উদ্যোক্তা প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে ক্রেডিট কার্ড ও ব্যাংক ঋণ পেতে পারেন। এছাড়াও তাদের জন্য রয়েছে অন্যান্য প্রণোদনা, বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য কর ছাড়ের বিষয়টি।

“বাংলাদেশের প্রথম জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ ডিজিটাল কাজের গতি বাড়িয়েছে। ২০১৮  খ্রিষ্টাব্দে চালু হওয়া স্যাটেলাইটটি বাংলাদেশের ইন্টারনেট কাভারেজ প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রসারিত করে, যেটির মাধ্যমে এমনকি গ্রামীণ বাংলাদেশিরাও টেলিমেডিসিন সহায়তা, ই-লার্নিং ও ই-ব্যাংকিং সেবা পেতে পারে।”

তিনি লিখেছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং এটি যে নতুন ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করে তার সুবিধা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের তরুণ জনসংখ্যা (প্রায় ৬৫ শতাংশ ২৫ বছরের কম বয়সী) উপযুক্ত অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে এবং এখন বছরে ৫ লাখ ডিজিটাল কর্মী গ্র্যাজুয়েট করছে।  

“কোভিড-১৯-এর অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবেলায় ডিজিটাল বাংলাদেশের ফল সঠিক সময়েই পেকেছে। নতুন কর্মক্ষেত্রটি দেখতে কেমন তা নির্ধারণ করার জন্য যখন বিশ্ব চেষ্টা করছে, তখন বাংলাদেশ তার দ্রুত ডিজিটাইজেশন ও দূরবর্তী কাজের স্থানান্তরের একটি মডেল প্রদান করেছে।”

সূত্র : বাসস

আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039968490600586