১৯ জুলাই সারাদেশে সকল বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা ও সমমান পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হয়েছে। ৫৫ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সকল বোর্ডের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে আরো বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আর যারা অকৃতকার্য হয়েছে, তাদের মনোবল না হারাতে এবং পরবর্তী পরীক্ষায় ভালো করার জন্য পরামর্শ দেন। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি আপনাদের ছেলে বা মেয়ে ফেল করে থাকে তাহলে তাদেরকে বকাঝকা করবেন না।’ এবার পাসের হার ৬৬.৬৪ শতাংশ। গতবারের তুলনায় রেজাল্ট একেবারেই ভালো নয়। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা একেবারেই কম। গত দুই বছর ধরে এইচএসসি’র রেজাল্ট মোটেই ভালো নয়।
বরাবরের মতো মেয়েরা রেজাল্টের দিকে এগিয়ে। তাই সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। এখনই তাদের সঠিক সময় সিদ্ধান্ত নেয়ার তারা কোন দিকে যাবে। তাই শিক্ষার্থীদের ভেবে-চিন্তে অতিদ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হবে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। তাই যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। আমরা উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালেই সেটা দেখতে পারি। তাই জাতির মধ্যে স্বপ্ন থাকতে হবে। সবারই একটি স্বপ্ন থাকে মানুষের মত মানুষ হওয়ার। স্বপ্ন দেখা সহজ কিন্তু বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। অসাধ্যকে সাধন করাই হলো শিক্ষার্থীদের আসল উদ্দেশ্য।
বিষয়টি হয়ত ৯৫% শিক্ষার্থী এবং তাদের পিতা-মাতার মনের গভীরে ঘুরপাক খাচ্ছে। এইচএসসি পরীক্ষা পাসের পরে ফলাফলের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আসলে তুমি কোন দিকে যাবে। যদি তুমি মানবিক বা ব্যবসা শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থী হও তাহলে তোমার সিদ্ধান্ত খুব সহজ আর তাহলো তোমাকে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে। আর তুমি যদি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হও তাহলে তোমাকে একটু টেকনিক্যালি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। খুব ভালো জিপিএ না থাকলে ইঞ্জিনিয়ারিং বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে লক্ষ্যস্থির করাই শ্রেয়। কারণ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষাতে এইচএসসি এবং এসএসসি-এর ফলাফলের ভূমিকা অনেক বেশি। প্রথম থেকেই এই সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে ফলাফল খারাপ হবার সম্ভাবনা বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা অনেকটাই বিগত ১২ বছরের শিক্ষা জীবনে বোর্ডের বইগুলো হতে তুমি কি শিখেছ এবং সাধারণ জ্ঞানের উপর নির্ভর করে। প্রশ্নগুলোর বেশিরভাগই খুব মৌলিক বিষয়ের উপর হয় যে বিষয়গুলো শিক্ষার্থীরা সহজেই এড়িয়ে যায়।
কারণ ‘এ+’ পেতে হলে এই বিষয়গুলোর খুঁটিনাটি না জানলেও চলে কিন্তু এই খুঁটিনাটি বিষয়গুলো উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক বেশি দরকারি। ফলশ্রুতিতে অনেক ‘এ+’ পাওয়া শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষাতে ফেল করে বসে। তাই এই ভর্তি হওয়ার আগের সময় টুকুর মধ্যে তোমাকে খুব সতর্কতার সঙ্গে এবং নিয়মিতভাবে চর্চা করে যেতে হবে। এই কাজ যদি তুমি বাসাতে বসে করতে পারো তাহলে শিক্ষার্থীদের কোনো কোচিং-এ যাওয়ার দরকার নেই। আর কেউ যদি তা করতে অসমর্থ হও তাহলে আমি তোমাকে পরামর্শ দিব এমন কোনো কোচিং-এ ভর্তি হও যাদের উদ্দেশ্য অর্থ নয় সেবা। যারা তোমার ভর্তি পর্যন্ত স্বযত্নে তোমাকে পথ দেখাবে। তবে এমন কোচিং খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যেখানেই ভর্তি (কোচিং) হও মনে রাখবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তোমার ভর্তি হবার জন্য যে জ্ঞান বা তথ্য জানা দরকার তা তাদের থেকে আদায় করে নিবে। বিশেষ করে মফস্বল বা গ্রামের ছেলেরা যারা এই কাজটুকু করতে পারবে তাদের চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। শহরের ছেলে-মেয়েরা এ ব্যাপারে অনেক সচেতন। অনেকেই এই সময়ে শহরে এসে বা স্কুল-কলেজের বাধ্যবাধকতা না থাকাতে কোচিং-এর ক্লাসের পরে ঘুরেফিরে সময় নষ্ট করে। তুমি যখন কোথাও চান্স পাবে না তখন চোখ বন্ধ করলেই দেখবে চান্স না পাওয়ার মূল কারণ হলো তোমার এই অকারণ সময় নষ্ট করা। আবার অনেকে এইচএসসি-এর ফলাফল আশানুরূপ না হলে হতাশ হয়ে পড়াশুনা কমিয়ে দেয় এটাও অনেক সময় তোমাকে তোমার কাঙ্ক্ষিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য বাধার সৃষ্টি করে।
লেখক:শিক্ষার্থী, জামালপুর ল কলেজ, জামালপুর
সৌজন্যে: ইত্তেফাক