যৌন হয়রানির অভিযোগে রাজধানীর বনানীর প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে হুমকির মধ্যে পড়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী কর্মকর্তা। গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে মুক্তি পেয়েই বাদীকে নানা রকম ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করছেন মামলার আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এ কে এম আশরাফুল হক। বাদীর অভিযোগ এ অবস্থায় তিনি তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। শনিবার (১১ জানুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আশরাফ-উল-আলম।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গত বছর ২৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী কর্মকর্তা রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত-২০০৩)-এর ১০ ধারায় মামলা দায়েরের পর ওই দিনই আশরাফুল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয় তাঁকে। ২৬ নভেম্বর আদালত আসামিকে জামিন দেন।
আদালতের জামিন আদেশে বলা হয়, আসামি প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আসামিকে জামিন মঞ্জুর করা হলো।
বাদী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, তিনি প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা হিসেবে ছয় বছর কর্মরত। আসামি এ কে এম আশরাফুল হক ওই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। সেই সুবাদে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে কোষাধ্যক্ষ বাদীকে নক করেন। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ কথাবার্তা চলে। কিছুদিন পর কোষাধ্যক্ষ বাদীকে বাইরে কোথায়ও দেখা করার প্রস্তাব দেন। বাদী বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। চাকরি করার সুবাদে ভদ্রভাবে কথাবার্তার মধ্যেই কোষাধ্যক্ষ বাদীকে নামিদামি হোটেলে নিয়ে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। এতে সাড়া না দিলে বাদীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ারও হুমকি দেন। এরই একপর্যায়ে গত বছর ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের (স্টার টাওয়ার, বনানী) কাজ শেষে লিফটে নামার সময় বাদীর সঙ্গে আশরাফুল হকের দেখা হয়। লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার পরপরই বাদীর হাত ধরে টানাটানি করেন ও যৌন কামনা চরিতার্থ করতে চান। পরে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ও পরামর্শ করে তিনি (ওই নারী) মামলা করেন।
জামিন পাওয়ার পর হুমকি : ওই নারী কর্মকর্তা গত ৩ ডিসেম্বর বনানী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর ১৭২) করেন। সাধারণ ডায়েরিতে অভিযোগ করে বলা হয়, এ কে এম আশরাফুল হক মামলায় জামিন পেয়েই লোক মারফত বাদীকে হুমকি দিতে শুরু করেন। অফিসে আসা-যাওয়ার পথে এ ধরনের হুমকি দিয়ে বাদীকে অশালীন কথাবার্তা বলা হচ্ছে। তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করারও হুমকি দেয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে যৌন হয়রানির শিকার ওই নারী কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ ডায়েরি করার পরও তাঁকে রেহাই দেয়া হচ্ছে না। তাঁকে এখন বাধ্যতামূলক ছুটি নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। মামলা তুলে নেয়া না হলে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হবে বলে সরাসরি হুমকি দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও কোষাধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে বাদীর ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। ওই নারী বলেন, ‘এমন একটি অভিযোগ পাওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে পদে পদে হয়রানি করছে।
জামিন বাতিলের আবেদন : এদিকে আশরাফুল হক জামিন পাওয়ার পর এ ধরনের হুমকি দেয়ায় গত ১৮ ডিসেম্বর বাদী ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির হয়ে জামিন বাতিলের আবেদন করেন।