করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৭ মার্চ যে ছুটির ঘোষণা দেয়া হয়েছিল দিন, সপ্তাহ, মাসের গণ্ডি পেরিয়ে আজ তা বছর ছুঁইছুঁই। কর্মক্ষেত্র চালু হলেও আগের মতোই বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের জীবন চরম হতাশায়। একদিকে এই তরুণ প্রাণগুলো দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থেকে নিজেরা হাপিয়ে উঠেছে, পাশাপাশি রয়েছে তাদের পড়াশোনার চিন্তা। বুধবার (২৮ অক্টোবর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে আরও জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল দিতে অনেক সময় লেগেছে, তবুও দেয়া হয়েছে সেই ফল, কলেজ ভর্তি কার্যক্রম সহ অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। জেএসসি, পিএসসি বাতিল করা হলো। ১ম-৯ম শ্রেণী পর্যন্ত অটোপাসের সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাও বাতিল ঘোষণা করলো সরকার। কিন্তু কি হবে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের গতি?
তাদের কথা কেন ভাবছে না সচেতন মহল। এতগুলো দিন হল, ক্যাম্পাস থেকে দূরে বাড়ির মধ্যে তারা করেছে নিজেদের গৃহবন্দী। পাশাপাশি একাডেমিক পড়াশোনার চরম ক্ষতি। অনলাইন ক্লাস নাম মাত্র হলেও, শতকরা ৪০ জন শিক্ষার্থীও উপস্থিত থাকছে কিনা সে খবর কি কেউ রাখছে? বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট কেনার সুবিধাও দিতে ব্যার্থ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। দারিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিভাইস দেয়া হবে, এমন কথা শোনা গেলেও এতদিনেও নেই তার কার্যকারিতা। ইতোমধ্যে সেমিস্টার সেশন জোটের আশঙ্কা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনরূপ পরীক্ষা ছাড়াই অপর সেমিস্টারে উত্তীর্ণসহ পরবর্তীতে দুই সেমিস্টারের পরীক্ষা একসঙ্গে নেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব কতটুকু কার্যকর?
এসব গেল শুধু একাডেমিক দিক। এছাড়াও বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের খরচ নিজে চালানোর জন্য টিউশনি বা পার্ট টাইম জব করে। করোনাকালে তাদের সবার হল ছেড়ে নিজ বাড়িতে অবস্থান করায় আয়ের উৎস হারিয়ে ফেলছে। যারা নিজেদের কাজ বাঁচানোর তাগিদে শহরে অবস্থান করে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে বেশ অসুবিধায় পরতে হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না হলে প্রবেশের অনুমতি। অনেক ফর্মালিটি করে ঢুকতে পারলেও নিজেদের দরকারি জিনিস পত্র নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও প্রশাসনের বিভিন্ন প্রশ্ন ও বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এতদিন ধরে হল গুলো বন্ধ থাকায় বিভিন্ন জিনিসপত্র ও কাপড় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হলেই রেখে এসেছিল, কারণ কারো ধারণা ছিল না এই ছুটির মেয়াদ এত দীর্ঘ হবে।
এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর কি অতিদ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়? অন্তত পক্ষে হলগুলো খুলে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে তুলনা করা উচিত নয়। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সেশন জোট থেকে মুক্তি দিতে এবং তাদের অন্যান্য সমস্যার বিষয় বিবেচনা করে অতিদ্রুত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
লেখক : সানজানা হোসেন অন্তরা