বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন নীতিমালা - Dainikshiksha

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন নীতিমালা

ড. নিয়াজ আহম্মেদ |

সম্প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও আপগ্রেডেশনের জন্য ইউজিসি কর্তৃক প্রণীত অভিন্ন নীতিমালা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করা হয় এবং তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ইউজিসি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধি এবং সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মতামতের ভিত্তিতে এমন অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে। নীতিমালা প্রেরণের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি তা প্রত্যাখ্যান করা শুরু করে। স্বভাবতই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, শিক্ষক প্রতিনিধিদের মতামতের গুরুত্ব দিয়ে যদি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়ে থাকে, তাহলে কেন তা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। এখানে হয়তো কোনো গলদ থাকতে পারে। হতে পারে শিক্ষক প্রতিনিধিদের মতামতের পুরোটা এই নীতিমালায় প্রতিফলিত হয়নি। আবার অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের নিমিত্তে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতামত তাঁদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ইউজিসিতে প্রেরণ করা হয়েছিল কি না তা-ও আমাদের জানা নেই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান নীতিমালা অভিন্ন নয় বিধায় নিয়োগ ও প্রমোশনের ক্ষেত্রে সহজ-কঠিনের বিষয়টি থাকে।

মোটাদাগে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও আপগ্রেডেশনের জন্য অভিন্ন নীতিমালা একটি প্রশংসনীয় ও ভালো উদ্যোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালা থাকায় কেউ স্বল্প সময়ে এবং কম প্রকাশনা নিয়ে, আবার কেউ বেশি সময়ে এবং বেশি প্রকাশনা নিয়ে পদোন্নতি পাচ্ছেন। যতটুকু মনে পড়ে, ২০০৭ সালে তখনকার কেয়ারটেকার সরকার এমন অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছিল এবং যথারীতি বর্তমানের মতো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছিল।

ঠিক একইভাবে সেই নীতিমালাও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। দীর্ঘ সময় পর আবার একই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এমন নীতিমালায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষকের সমান মান বজায় রাখার এক ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। আমাদের বিশ্বাস, ইউজিসি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান মান বজায় রাখার জন্য এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি এমন নীতিমালা মেনে নিতে পারতাম, তাহলে সব বিশ্ববিদ্যালয় একই মানের দিকে ধাবিত হতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা মেনে নিতে পারছি না। বিভিন্ন কারণে আমরা ধরেই নিই, আমাদের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও তার শিক্ষকদের মান সমান নয়।

আমাদের রয়েছে বড়, মাঝারি ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবছর সরকার নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে। অপেক্ষাকৃত মাঝারি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত দক্ষ, অভিজ্ঞ শিক্ষক ও গবেষণাগার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে এমনটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিজ্ঞ ও সিনিয়র শিক্ষক নিয়োগদানের ক্ষেত্রে নীতিমালা একটু নমনীয় হয়তো করছে কর্তৃপক্ষ। না হলে ঢাকার বাইরের কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ক্যাটাগরির শিক্ষক পাওয়া দুরূহ। এখানে নমনীয় বলতে তাঁর অভিজ্ঞতা এবং প্রকাশনার কথা বোঝানো হচ্ছে। অনেক সময় কম অভিজ্ঞতা ও কম অথচ ভালো মানের প্রকাশনা দেখেও শিক্ষকদের মান সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা যায়। নীতিমালা কঠিন করলে সরাসরি সিনিয়র শিক্ষক পাওয়া হয়তো কঠিন হতে পারে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক থাকলে তাঁদের সংস্পর্শে এসে জুুনিয়ররা নিজেদের তৈরি করতে পারেন। শিক্ষকতাকে আকৃষ্ট করতে হলে যোগ্যতার মাপকাঠি এমন হওয়া উচিত, যাতে কেউ সহজে সুযোগ না নিতে পারে, আবার এমন কঠিনও করা ঠিক নয়, যাতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিনিয়র শিক্ষকদের ঘাটতি থেকে যায়। বাংলাদেশে এমনও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে এক কিংবা দুজন অধ্যাপক রয়েছেন। আমরা অনেকেই জানি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ কেউ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান, যখন তাঁদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো থাকে না।   প্রস্তাবিত নেত্রকোনা কিংবা জামালপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অভিজ্ঞ ও সিনিয়র শিক্ষক পেতে হলে নিশ্চয়ই কিছুটা নমনীয় হতে হবে। তবে এ কথা সত্য যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের একই মান বজায় রাখার জন্য অভিন্ন নীতিমালার বিকল্প নেই।

একটি নীতিমালার বড় যে দিক থাকে তা হলো, যে বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উল্লেখ। এটি বড় এই কারণে যে এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু মৌলিক বিজ্ঞানই পড়ানো হয় না, বিশেষায়িত বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে নতুন নতুন বিষয় খোলা হচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় কী হতে পারে তা নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান নীতিমালায় এ বিষয়টি ভালোভাবে উপস্থিত রয়েছে। নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল কিংবা কমিটির মাধ্যমে দীর্ঘ আলোচনায় এমন যোগ্যতা নিরূপিত হয়। আমার কাছে মনে হয়, ইউজিসি কর্তৃক প্রণীত নীতিমালায় বিষয়সংশ্লিষ্টতা ভালোভাবে গুরুত্ব পায়নি। অনুষদভিত্তিক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার কথা এখানে বলা হয়েছে। নীতিমালায় অতিরিক্ত ও ভালো প্রকাশনার জন্য শিক্ষকদের প্রণোদনা এবং ছাড় দেওয়া যেতে পারে, নইলে শিক্ষকদের উদ্যম হারিয়ে যেতে পারে।

অভিন্ন নীতিমালার বিপক্ষে আমরা নই। কেননা এর মাধ্যমে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একই মান বজায় রাখা সম্ভব। কিন্তু আমাদের বাস্তবতা ভিন্ন। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবহেতু মেধাবীরা বেশি মাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান না। এমন প্রেক্ষাপটে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করে শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার পরিবর্তে নিরুৎসাহিত করা হবে কি না তা ভেবে দেখতে হবে। শিক্ষকদের একমাত্র কাজ হলো ক্লাসে পড়ানো এবং গবেষণা-প্রকাশনা করা। রাষ্ট্রের কাজ হলো তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া এবং মানসম্মত জীবনযাপনের নিশ্চয়তা প্রদান করা। এমন জীবনযাপনের নিশ্চয়তার বিধান যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে বহাল থাকলে তার জন্য কঠিন শর্ত কিংবা কঠিন নীতিমালা কোনো বিষয় নয়। আমরা এমন নীতির সমর্থন করব, যেখানে সব শিক্ষকের অন্যান্য সব সুযোগ-সুবিধা সমান থাকে।

লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003831148147583