বিশ্ববিদ্যালয় হোক জ্ঞান সৃষ্টির আঁতুড়ঘর - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় হোক জ্ঞান সৃষ্টির আঁতুড়ঘর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কবি হেলাল হাফিজ তার ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ নামক কবিতায় লিখেছেন, ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাওয়ার তার শ্রেষ্ঠ সময়’। কবির এ কথার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণের সুযোগ কারো আছে বলে মনে হয় না। যৌবন হচ্ছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি, যা আমাদের জীবনকে করে তোলে গতিশীল ও প্রত্যাশাময়। সোমবার (২৮ অক্টোবর) ইত্তেফাকের এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

সমস্ত জীর্ণ পুরোনো সংস্কারকে ধ্বংস করে মনের মতো নতুন জগত্ রচনার সাধনায় অগ্রসর হতে এক দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ দুর্বার শক্তি এই যৌবন। যৌবন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। সেই শ্রেষ্ঠ সময়টি কাজে লাগাতে তত্পর থাকে ব্যক্তি স্বয়ং, সমাজ ও রাষ্ট্র। আমি আমার লেখার শুরুতেই যৌবনের স্তুতিবন্দনা করছি এই কারণে যে, আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় আর যৌবনের ধর্ম এক ও অভিন্ন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যৌবনের প্রতীক। বিশ্বের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় চিরযৌবনা। যৌবনের ধর্ম যেমন সৃষ্টিশীলতা, আমি মনে করি সৃষ্টিশীলতার মিছিলে অংশগ্রহণ করা যে-কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কাজ। প্রকৃতপক্ষে, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির আঁতুড়ঘর।

নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি অর্থাত্ গবেষণায় যে বিশ্ববিদ্যালয় যত বেশি অভ্যস্ত, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান তত বেশি উন্নত। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পশ্চাত্পদতা বেশ স্পষ্ট। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান যে ক্রমেই নিচের দিকে যাচ্ছে, তা জানতে বিদেশি গবেষণা-প্রতিষ্ঠানের জরিপের প্রয়োজন হয় না। প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার নামে যেসব অনাচার ঘটে চলেছে, তা শিক্ষার পরিবেশের পরিপন্থি। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নামেই বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি যৌবনের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধক্যর কঙ্কালমূর্তি দৃশ্যমান। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে বিশ্বের বিদ্যার আলয় বা নিকেতন। স্বাধীন জ্ঞানচর্চা, সৃজনশীলতা ও মুক্তচিন্তার উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে—কলেজে কাঠামোবদ্ধ পড়ালেখা হয়, সেখানে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি ও জ্ঞান বিকাশের সুযোগ থাকে সীমিত। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান বিতরণ করে না, জ্ঞান সৃষ্টিও করে।

উন্নত দেশে বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান সৃষ্টি করে, আর স্কুল-কলেজ সেই সৃষ্ট জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। যে কাজ সারা দুনিয়ায় করে স্কুল কলেজ, আমাদের এ অভাগা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা বুকে ঝুলিয়ে গর্বে মরে! সত্যি কথা বলতে কি, আধুনিক কোনো সংজ্ঞানুযায়ী বাংলাদেশের কোনো উচ্চতর প্রতিষ্ঠানই বিশ্ববিদ্যালয় নাম ব্যবহারে যোগ্য নয়। আফসোস, এদেশে শিক্ষার এই অধোগতি যারা নিশ্চিত করেছে তারাই আবার বুক ফুলিয়ে কীর্তন গায়। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের ব্যর্থতাকেই অস্বীকার করছে না, সত্যকেও তেমন আড়াল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এটা আত্মঘাতী প্রবণতা।

‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, ‘এ যৌবনের কপালে রাজটিকা দিতে আপত্তি করবেন, এক জড়বাদী আর-এক মায়াবাদী; কারণ এঁরা উভয়েই একমন। এঁরা উভয়েই বিশ্ব হতে অস্থির প্রাণটুকু বার করে দিয়ে যে এক স্থিরতত্ত্ব লাভ করেন, তাকে জড়ই বল আর চৈতন্যই বল, সে বস্তু হচ্ছে এক, প্রভেদ যা তা নামে।’ চিরযৌবনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের স্বধর্মে চলতে দেওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টিশীলতায় পথের কাঁটা হয়ে যারা দাঁড়াবে আমি মনে করি তারা জড়বাদী ও মায়াবাদী।

একটা দেশের সবচেয়ে বড়ো সম্পদ হলো সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে পণ্ডিত জওহর লাল নেহেরু বলেছিলেন ‘একটি দেশ ভালো হয় যদি সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো হয়।’ বিশ্বে যেসব দেশ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি করেছে, তার মূলে রয়েছে উন্নত শিক্ষা।

পৃথিবীতে এমন একটি দেশ পাওয়া যাবে না যে শিক্ষায় পিছিয়ে থেকে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে। দুর্ভাগ্য হলো, আমাদের নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়াতে যতটা সক্রিয়, শিক্ষার মান ধরে রাখতে ততটাই নিষ্ক্রিয়। ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো যায়, কিন্তু যারা জেগে ঘুমানোর ভান করে, তাদের জাগানো দুঃসাধ্য ব্যাপার। আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ঘুম যত দ্রুত ভাঙবে ততই জাতির মঙ্গল।

লেখক :  কাজী আশফিক রাসেল,শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌন হয়রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির - dainik shiksha অভিযুক্ত শিক্ষা সাংবাদিকদের পক্ষে জোর তদবির কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি - dainik shiksha যৌ*ন হয়*রানি: ঢাবি শিক্ষক নাদির জুনাইদকে অব্যাহতি নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ - dainik shiksha বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী আজ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035350322723389