বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারীতে প্রায় দেড় কোটি (১৫ মিলিয়ন) মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে আনুমানিক হিসাব দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও )।
গত দু’বছরে স্বাভাবিকভাবে যত মানুষ মারা যেতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল, এ সংখ্যা তার চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি।
ডব্লিউএইচও বিশ্বাস করে, অনেক দেশই কোভিডে মারা যাওয়া মানুষের সংখ্যা কম গণনা করেছে। বিশ্বে মাত্র ৫৪ লাখ মানুষের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভারতে ৪৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এই সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে দশগুণ বেশি। এ সংখ্যা বিশ্বে মোট মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশ।
তবে ভারত এই সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছে, এখানে পদ্ধতিগত ত্রুটি আছে। কিন্তু অন্যান্য গবেষণাতেও ভারতে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যার একইরকম পরিসংখ্যান এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে সেটি হচ্ছে বাড়তি মত্যু পদ্ধতি। এতে মহামারীর আগে একই এলাকায় মরণশীলতার ভিত্তিতে স্বাভাবিকভাবে যত মানুষের মৃত্যু হতে পারত বলে ধারণা করা যায় তার চেয়ে কত বেশি মানুষ মারা গেছে সেটি হিসাব করা হয়েছে।
এই হিসাবের মধ্যে ওইসব মানুষের মৃত্যুও গণনা করা হয়েছে যারা সরাসরি কোভিডের কারণে মারা যাননি বরং কোভিডের প্রভাবে মারা গেছেন। যেমন: হাসপাতালে যেতে না পেরে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদেরকেও এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তাছাড়া, যেসব অঞ্চলে মৃত্যুর রেকর্ড তেমনভাবে নেই এবং সংকটের শুরু থেকেই কোভিড পরীক্ষার সুযোগ কম সেসব জায়গাও এই হিসাব থেকে বাদ যায়নি। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অতিরিক্ত ৯৫ লাখ মৃত্যুর মধ্যে ৫৪ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে সরাসরি ভাইরাসের কারণেই।
বিশ্বব্যাপী কোভিডে মৃত্যুর মোট সংখ্যার প্রকাশ করতে গিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বিভাগের ডা. সামিরা আসমা বলেন, “এটি একটি ট্র্যাজেডি।”
তিনি বলেন, “এ সংখ্যা বিস্ময়কর। যারা এই মহামারীতে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য আমাদের নীতিনির্ধারকদেরকেই দায়ী করতে হয়। আমরা যদি সঠিক সংখ্যার হিসাব রাখতে না পারি, তবে পরবর্তী সময়ের জন্য আরও ভাল প্রস্তুতি আমরা রাখতে পারব না।”
ভারতের পাশাপাশি কোভিডে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখেছে রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, মেক্সিকো এবং পেরু।
ডব্লিউএইচও যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে রাশিয়ায় রেকর্ড করা মৃতের সংখ্যার চেয়ে মৃত্যু সাড়েতিনগুণ বেশি। তাছাড়া, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে প্রতিটি দেশের জনসংখ্যার আকার অনুপাতে বাড়তি মৃত্যুর হারও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
২০২০ এবং ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন এবং জার্মানির মতো যুক্তরাজ্যেও বাড়তি মৃত্যুর হার বিশ্বের গড় মৃত্যুর চেয়ে বেশি দেখা গেছে।
বাড়তি এই মৃত্যুর হার যেসব দেশে কম দেখা গেছে তার মধ্যে আছে চীন। দেশটি এখনও ‘জিরো কোভিড’ নীতি অনুসরণ করছে। তারা গণহারে কোভিড পরীক্ষা করছে এবং কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা চালু রেখেছে। ওদিকে, অস্ট্রেলিয়াও ভাইরাসকে দূরে রাখতে ভ্রমণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। একই পদক্ষেপ নিয়েছে জাপান এবং নরওয়েও।
আর সাব সাহারা আফ্রিকার দেশগুলোর ক্ষেত্রে ডব্লিউএইচও মৃত্যুর যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তা আরও অনুমাননির্ভর বলে স্বীকার করেছেন সংস্থাটির প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্য করা গবেষকরা। কারণ, ওই অঞ্চলে মানুষের মৃত্যু সম্পর্কে তথ্য খুব কমই আছে। আফ্রিকার ৫৪ টি দেশের মধ্যে ৪১ টিরই নির্ভরযোগ্য কোনও পরিসংখ্যান নেই।
ওয়াশিংটনের সিয়াটল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যানের অধ্যাপক জন ওয়েকফিল্ড ডব্লিউএইচও’র গবেষণায় সহায়তা করেছেন। বিবিসি-কে তিনি বলেন, “আমাদের জরুরি ভিত্তিতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের আরও ভাল ব্যবস্থা থাকা দরকার।”
“মানুষ জন্মাতে পারে, মরেও যেতে পারে- অথচ তাদের মৃত্যুর কোনও রেকর্ড আমাদের নেই, এটি লজ্জার বিষয়। তাই আমরা যাতে সময়মত নির্ভুল তথ্য পেতে পারি সেজন্য আমাদের আসলেই বিভিন্ন দেশের নিবন্ধন ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করা দরকার।”