বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও আমরা - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও আমরা

সৈয়দ মুহাম্মদ ইউসূফ সুমন |

UNESCO র তৎকালীন মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক মেয়র ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২৬ তম অধিবেশনে শিক্ষক সমাজের সম্মানে ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা দেন। তাঁর এ ঐতিহাসিক উদ্যোগের ফলশ্রুতিতেই বাংলাদেশে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে থেকে এ দিবস যথাযথভাবে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রতিবছরের মত এবারও - “the right to education means the right to a qualified teacher” প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

এবারের প্রতিপাদ্য “ শিক্ষার অধিকার মানেই যোগ্য শিক্ষকের অধিকার “ যথোপযোগী হয়েছে । বাস্তবিকভাবেই শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের জন্য একজন যোগ্য শিক্ষকের বিকল্প নেই। কথাটি আরো নিদিষ্ট ভাবে বলতে গেলে বলতে হয় শিক্ষার অধিকারের পূর্বশর্ত হলো যোগ্য শিক্ষকের অধিকার। একজন যোগ্য শিক্ষকই তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মেধাবী ও মানবিক গুণাবলী সম্পর্ক সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন যাতে করে দেশ ও জাতির উন্নয়ন হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা এ প্রতিপাদ্যের কতটুকু অর্জন, অনুসরণ বা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি? এ প্রশ্ন শিক্ষা ব্যবস্থাপনার কর্তা ব্যক্তিদের কাছে,সরকারের কাছে ,শিক্ষকদের কাছে তথা সামাজের বিবেকবান ব্যক্তিদের কাছেও। আমরা কি আজও যোগ্য শিক্ষকদের অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছি? পেরেছি কি টেকসই শিক্ষা নিশ্চিত করতে ? শিক্ষকদের কাছে প্রশ্ন – একজন যোগ্য শিক্ষক হতে আমরা কতটুকু চেষ্টা করছি? যেহেতু ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ বিনির্মানে একজন যোগ্য শিক্ষকের ভূমিকা সর্বাধিক তাই শিক্ষকদের সর্বদাই মানসম্মত শিক্ষাদান বিষয়ে সচেতন থাকা বাঞ্চনীয়। সুইস মনোবিজ্ঞানী কার্ল জং যথার্থই বলেছেন - ব্রিলিয়ান্ট শিক্ষকদের প্রতি লোকেরা সম্মানের দৃষ্টিতে তাকায়, কিন্তু কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায় তাদের প্রতি, যারা আমাদের মানবিক অনুভূতিকে স্পর্শ করে। পাঠ্যক্রমটি নিতান্তই প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, কিন্তু আন্তরিকতা একটি ক্রমবর্ধমান উদ্ভিদ এবং একটি শিশুর আত্মার জন্য আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আশাকরি আমরা সকলেই আমাদের শিক্ষকদেরও এ গুরু দায়িত্বের প্রতি সচেষ্ট থাকবো।

এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বও কম নয়। পুরো বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষকদের অধিকারের বিষয়ে সরকারের এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি সময়ের দাবি রাখে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনিস্টিটিট মিলনায়তনে বাংলাদেশ এডুকেশন এসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রি Quality Education এর বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষকরা হলেন নিয়ামক শক্তি আর আমরা সকলে শিক্ষকদের পাশে থেকে একটু সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আসলে প্রাইমারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যে শিক্ষকদের উপর ভরকরে শিক্ষার গুনগত মানের যেটুকু উন্নতি হয়েছে বা হচ্ছে সে শিক্ষকদের জীবন যাত্রার মানের কতটা উন্নত হয়েছে তা ভাবনার বিষয়। দেশের বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। আর এ বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীরা এখনো ন্যূনতম অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিনিয়িতই আন্দোলন করে যাচ্ছে। এজন্য তাদেরকে কখনো কখনো piper spray, জল-কামান ,কাঁদুনে গ্যাস , লাঠিচার্জ এবং গ্রেফতারের the right to education means the right to a qualified সম্মুখিন হতে হয় । ৮ম জাতীয় পে-স্কেল অনুযায়ী সরকার ঘোষিত ৫% প্রবৃদ্ধি ও বৈশাখী ভাতাসহ বেসরকারি শিক্ষিকরা নানাভাবে আর্থিক বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছেন। পূর্নাঙ্গ ঈদ বোনাস, মেডিকেল ভাতা, বাড়ী ভাড়া প্রাপ্তির বিষয়টি আদৌ সোনার হরিণের মতই রয়ে গেছে।

প্রভাষক থেকে অনুপাতিক হারে (৭:২ ) সহকারী অধ্যাপক, একটি মাত্র প্রমোশনই চালু থাকায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষক প্রমোশন না পেয়ে প্রভাষক পদে থেকেই মৃত্যু বরণ করেন। ইদানীং রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ। দেশে প্রায় ২৮ হাজার এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন যাদের দ্বারা প্রায় ৯৫ ভাগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তাদেরকে বঞ্চিত করে টেকসই শিক্ষা উন্নয়ন সম্ভব নয়। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে বেসরকারি অচিরেই সুসংবাদ পাবে। শিক্ষকদের জন্য বছরের শেষে সে শুভক্ষণের আসায় রইলাম।

 

লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি

যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002936840057373