বিয়ের বয়স না হওয়ায় ছাত্রীর খোলা তালাক - দৈনিকশিক্ষা

বিয়ের বয়স না হওয়ায় ছাত্রীর খোলা তালাক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সার্টিফিকেট অনুযায়ী বয়স ১৭ বছর। বাবা-মায়ের সঙ্গে আজিমপুরের নিজেদের বাসায় থাকেন। একটি নামকরা কলেজের শিক্ষার্থী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড়। সম্প্রতি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হয় পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে। তবে বিয়ে মেনে নেননি ওই শিক্ষার্থী। পরে ওই বিয়ে আর টেকেনি। মেয়ের ইচ্ছায় বর-কনের উপস্থিতিতেই খোলা তালাক হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে জোর করে পুলিশের এক এএসপির সঙ্গে গত ১৫ই জানুয়ারি বিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ৬ দিনের মাথায় গত ২১শে জানুয়ারি তাদের দুই পরিবারের উপস্থিতিতে কাজী অফিসে বসে খোলা তালাক দেন ওই শিক্ষার্থী। সূত্র জানায়, গত বছর ওই শিক্ষার্থী রাজধানীর একটি খ্যাতনামা স্কুল থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি বিয়েই করতে চাননি এখন। তার দু’চোখে স্বপ্ন মেডিকেলে ভর্তি হবেন। ভবিষ্যতে একজন যোগ্য চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবেন- এমনটিই ব্রত। পরিবারের সদস্যরা তার মতামতে গুরুত্ব না দিয়ে ইতিপূর্বে অনেকবার বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে মেয়েটি তার বিয়ে ভেঙে দেন। সর্বশেষ সেনাবাহিনীতে কর্মরত একজন তরুণ মেজরের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করলে সেটাও ভেঙে দেন ওই শিক্ষার্থী। আবারো তার বিয়ের প্রস্তাব আসে। ছেলেপক্ষ নাছোড়বান্দা।

সূত্র জানায়, ওই শিক্ষার্থী বিয়েতে রাজি ছিলেন না। ওই শিক্ষার্থী জানান, এসএসসি’র সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার বয়স এখনো ১৮ হয়নি। কিন্তু ছয় মাস আগে তার বাবা-মা এফিডেভিট করে জন্মসনদ দুই বছর বাড়িয়ে ১৯ বছর করে নেন। মেয়ের অভিযোগ, বিয়েতে তার অমত থাকার বিষয়টি পাত্রকে জানালেও তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি। সর্বশেষ গত ১৫ই জানুয়ারি সদ্য বিসিএস উত্তীর্ণ পুলিশের একজন এএসপি’র সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেন তার বাবা-মা। অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি। এক পর্যায়ে ৯৯৯-এ ফোন করেন। ততক্ষণে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়।

সূত্র জানায়, বিয়ের বয়স হতে এখনও দুই মাস বাকি তার। ৮ম শ্রেণি থেকেই ওই শিক্ষার্থীকে তার বাবা একাধিকবার বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। সর্বশেষ গত বুধবার রাত থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেন ওই শিক্ষার্থী। এ সময় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) একজন প্রতিনিধি তাকে আইনি সহযোগিতা দিতে ঘটনাস্থলে যান। বাসার নিচে বন্ধুদের দেখে আবারও নিজের বাল্যবিয়ের প্রতিবাদ করেন ওই শিক্ষার্থী। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, জোর করেই তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি এই বিয়েতে রাজি নন। তার এখনও বিয়ের বয়স হয়নি। বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে থানায় চলে যান ওই শিক্ষার্থী।

তদন্ত সূত্র জানায়, মেয়েটির স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন, মেয়ের পরিবার থেকে যে বায়োডাটা দেয়া হয়েছে সেখানে তার বয়স ১৮ বছরের বেশি। তিনি সার্টিফিকেটের বয়সের বিষয়টি জানতেন না। যদিও মেয়েটির পরিবারের দাবি, স্কুলে ভর্তির সময় তারা বয়স কমিয়ে দিয়েছেন। পরে এফিডেভিট করে আবার বয়স বাড়িয়ে নেন জন্মসনদে। মেয়েটির বাবা বলেন, মেয়ে আমাদের মান-সম্মান যা নষ্ট করার ইতিমধ্যে করেছে। বিয়ের আগে সে জানালে আমরা তাকে এভাবে বিয়ে দিতাম না। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করেই ভালো এবং প্রতিষ্ঠিত পাত্রের সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বলে জানান তিনি। পরবর্তীতে ছয়দিনের মাথায় তাদের মধ্যে খোলা তালাক হয়ে যায়। ছেলে ও মেয়ের উভয়পক্ষ তালাকের জন্য রাজি হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাতেই কাজী অফিসে তালাকের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি বলেন, প্রথমে রাগ করে তাকে বাসায় নিতে চাইনি। এখন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে বাসায় এনে কিছুদিনের জন্য ওর খালার কাছে পাঠিয়ে দেবো। গণমাধ্যমকর্মী ও নারী অধিকারকর্মী বীথি সপ্তর্ষি এই বিয়ের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পোস্টটি পরবর্তীতে সবার নজরে আসে। নাম না প্রকাশের শর্তে উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের এক সহকারী পুলিশ কমিশনার জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে মেয়েটিকে তাদের এখানে নিয়ে আসা হয়। তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গতকাল বিকালে লালবাগ থানা পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে খোলা তালাক প্রসঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডির বিয়ে রেজিস্ট্রি ও কাজী অফিসের কাজী মাসুম বলেন, খোলা তালাক হচ্ছে বর-কনে দু’জনে মিলে যে তালাক হয় তাকে খোলা তালাক বলে। অর্থাৎ উভয় কর্তৃক হওয়া তালাকটিকে বোঝানো হয়েছে। দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে কোনো কাজী অফিসে গিয়ে এটা সম্পন্ন করতে হয়।

লালবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কাদের বলেন, মেয়েটির বাবা এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের ব্যবসা করেন। নয়াপল্টনে তাদের নিজস্ব ফ্ল্যাট রয়েছে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে বড়। মেয়েটি থানায় এলে পরবর্তীতে থানা থেকে তার বাবা-মা’কে ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে তার দুই চাচা, মা, বাবা ও স্বামী আসেন। এক পর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে থানায় রেখে বাসায় চলে যান। এ সময় ওই শিক্ষার্থীও তাদের সঙ্গে যেতে সম্মত না হলে পরবর্তীতে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে আদালতের মাধ্যমে গতকাল মেয়েটিকে তার মায়ের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036358833312988