মত ও পথের পার্থক্য থাকলেও, বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এক কাতারে দাঁড়িয়েছে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। জঙ্গিবাদের উত্থানের শঙ্কা জানিয়েছে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল। আর ডাকসুর ভিপি বলছেন, ছাত্র সংসদ কার্যকর থাকলে কমতো বিশেষ কারও দৌরাত্ম। বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী হাসানুল হক ইনুর অভিযোগ নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ছাত্র রাজনীতির কাঁধে বন্দুক রেখেছে প্রশাসন।
সহপাঠী হারানোর যন্ত্রণা, রূপ নিয়েছে দ্রোহ আর ক্রোধে। পায়ে পা মেলানো ঝাঁঝালো মিছিল আর দৃপ্ত স্লোগান মুখরিত শোকাবহ আবেগ। যেন প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক হয়ে জ্বলছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট। ভাই হারানো কণ্ঠের ঝাঁজ ঠাঁই পেয়েছে দশদফায়। নিহত আবরারের খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ছাড়াও, আরেকটা দাবি ছিল-ছাত্ররানীতি নিষিদ্ধের। যা নতুন করে উস্কে দিয়েছে তর্ক-বিতর্ক।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় ক্রিয়াশীল ও ছাত্র সংগঠন কার্যত অকার্যকর। তবে এর বিরোধিতা করেছে, বাম ঘরাণার প্রগতিশীল ছাত্রজোট, ছাত্রদল এমনকি ছাত্রলীগ। সবাই বলছে, বিশেষ কারও অপতৎপরতা ঠেকাতে ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ করলে, মাথাচারা দেবে জঙ্গিবাদ।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক নাসির উদ্দুন প্রিন্স বলছেন, আজকে বুয়েট শিক্ষার্থীদের যে ক্ষোভ ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে, তা আসলে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্যই। আমরা কোন ভাবের এটাকে স্বাগত জানাই না।
ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনও বলছেন একই কথা। তিনি বলেন, এভাবে যদি ছাত্র রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করা হয় তবে বাংলাদেশের যে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো আছে তারা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।
ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলছেন, প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই যেন তারা বিষয়টা বিবেচনা করে, কারণ ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি মাথাচারা দিয়ে উঠবে।
বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজগুলোর ভেতর এখন নির্বাচিত ছাত্র সংসদ রয়েছে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর ভিপি নুরুল হক নুরু বলছেন, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, বরং সচল করতে হবে ছাত্র সংসদগুলো।
পাকিস্তান আমলে চালু হওয়া এই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে আইয়ুব সরকার। তা উপেক্ষা করেই উনসত্তরের গণঅভ্যুথথান কিংবা স্বাধীনতা সংগ্রামে উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছিলেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। সে সময়ের ছাত্রনেতা ও সাবেক বুয়েটিয়ান হাসানুল হক ইনু। বলেন, মাথাব্যাথা বলে মাথা কাটা সমাধান নয়। আরও বলেন, শিক্ষকরা নিজেদের স্বার্থে ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার না করলেই অপরাজনীতি অনেকাংশে কমে আসবে।