বুয়েটে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারকেই চ্যালেঞ্জ মানছে ছাত্রলীগের নেতারা - দৈনিকশিক্ষা

বুয়েটে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারকেই চ্যালেঞ্জ মানছে ছাত্রলীগের নেতারা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য শীর্ষ দুই নেতাকে অপসারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) সহসভাপতির (ভিপি) ওপর হামলা, বিভিন্ন দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন দমন—এমন সব বিতর্কিত ঘটনায় জড়িয়ে গত বছর বেশ সমালোচিত হয়েছে দেশের অন্যতম প্রাচীন ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মধ্যেও কিছু কিছু ভালো কাজ যেমন—জেলা পর্যায়ে মাদকবিরোধী কর্মসূচি, বইপড়া ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দরিদ্র ও অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য সংগঠনটি প্রশংসা কুড়িয়েছে। শনিবার (৪ জানুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রফিকুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, এই প্রেক্ষাপটে আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হবে ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। নানা চড়াই-উতরায় পেরিয়ে ৭৩ বছরে পদার্পণ করা সংগঠনের নেতারা মনে করছেন, ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত করা এবং সংগঠনের গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারই তাঁদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সংগঠনটির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বায়ান্নর ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, সাতান্নর শিক্ষক ধর্মঘট, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। স্বাধীন বাংলাদেশেও বিভিন্ন সময় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সংগ্রামী ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।

ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রধান। এ ছাড়াও ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর সমাগম হবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে।

ছাত্রলীগের দপ্তর সূত্র জানায়, ৭২ বছর পেরোলেও ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে ২৯টি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ দুই বছর। কোনো কমিটি দুই বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করায় যথাসময়ে সম্মেলন করতে পারেনি। বর্তমানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন লেখক ভট্টাচার্য।

সূত্র জানায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন হয়। এরপর ৩১ জুলাই উত্তরবঙ্গের সন্তান রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি আর মাদারীপুরের সন্তান গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বছর না গড়াতেই ক্ষমতার অপব্যবহার, মাদক সম্পৃক্ততা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে সংগঠন থেকে অব্যাহতি পান এ দুই নেতা।

গত বছরের মে মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন শোভন-রাব্বানী। তবে এই কমিটিতে ছাত্রদল, বিবাহিত ও অপরাধীদের স্থান দেয়ার অভিযোগ ওঠে। পদ না পাওয়া একটি অংশ আন্দোলনে নামে। দীর্ঘ প্রতিবাদ ও আন্দোলনের পর ২২ জন বিতর্কিত ও ১০ জন স্বেচ্ছায় সংগঠন থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন ৩২টি পদ শূন্য রয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, এই কমিটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের মে মাসে। সেই হিসাবে হাতে রয়েছে আর তিন মাস। তবে সংগঠনে পদবঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। আবার বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার পর তারাও গঠনতন্ত্র বহির্ভূতভাবে বাদ দেয়ার অভিযোগ তুলেছে।

ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা মনে করছেন, সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের পদায়ন এবং সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিগত সময়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের অগোছালো মনোভাবে ছাত্র অধিকার আদায়ে সোচ্চার না হয়ে নিজেরা টাকার কুমির হতে ব্যস্ত ছিলেন। নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর কারো ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হওয়ার ঘটনাও নতুন নয়। বরং বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়েছে ছাত্রলীগ। সেই বিতর্ক মুছে ফেলে সামনে এগোনোর বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে বলে মনে করছেন সংগঠনের এসব নেতা।

ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরিফ হোসেন বলেন, ‘অতি সম্প্রতি বেশ কিছু কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগের ইমেজ ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই সংকট থেকে উতরাতে সবাইকে একত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করতে হবে। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সংগঠনকে এগিয়ে নিতে সক্রিয় কর্মসূচি পালন করতে হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে আরো শক্তিশালী হবে। চেইন অব কমান্ড শক্তিশালী হবে। যে কোনো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে হাতিয়ার হয়ে উঠবে ছাত্রলীগ।’

শোভন-রাব্বানীকে অপসারণের পর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাওয়া দুই শীর্ষ নেতা বলছেন, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা এবং হারানো ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করাই এখন ছাত্রলীগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সংগঠনে বিভিন্ন সময় অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অনুপ্রবেশকারীরা বিতর্কিত কর্মাকাণ্ডে জড়িয়ে ছাত্রলীগকে কলুষিত করছে। দেশব্যাপী প্রতিটি ইউনিটে অভিযান চলছে। অভিযোগ পাওয়ার পর খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ‘ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রাধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে ছাত্রলীগ। বিতর্কিক কর্মকাণ্ড কিংবা অপরাধে জড়ালে কারোর রেহাই নেই। জিরো টলারেন্স নীতিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বৃহৎ ছাত্রসংগঠনে নেতাকর্মীর কোনো অভাব নেই। কেউ আদর্শ ধারণ করে সংগঠনে এসেছে আবার কেউ অন্যের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ঢুকে পড়েছে। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। কোনো অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের স্থান ছাত্রলীগে হবে না।’

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘ছাত্রলীগকে শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেবেন। আর সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করে সংগঠনকে গতিশীল করব। অতীতের হারানো ইমেজ ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করব। অনুপ্রবেশ ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড রুখে দিয়ে ভালো কাজে গণমাধ্যমে শিরোনাম হবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বের ওপর জোর দেয়া হবে।’

ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066461563110352