ব্রিটিশ রাজ পরিবার ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রিন্স হ্যারি এবং ডাচেস মেগান মার্কেল। শুধু রাজ পরিবারই নয়, আর্থিকসহ রাজকীয় সব সুবিধাও না নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন প্রিন্স চার্লস ও ডায়ানার দম্পতির দ্বিতীয় ছেলে সন্তান ও পূত্রবধু। বুধবার (৮ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন, আগামী দিনগুলোতে তারা বছরের কিছুটা সময় যুক্তরাজ্যে এবং বাকিটা সময় উত্তর আমেরিকায় কাটাতে চান।
তবে রাজ পরিবার ছেড়ে তারা কোথায় থাকবেন? কোথা থেকে টাকা আসবে? রাজ পরিবারের বাকি সদস্যদের সাথে তাদের সম্পর্ক সামনে কেমন হবে? অথবা এরপর তাদের কোন ভূমিকায় দেখা? এমন নানা প্রশ্ন সামনে এসেছে।
বিবিসির একজন সাংবাদিক লিখেছেন, হ্যারি-মেগানের এই ঘোষণা বাকিংহাম প্রসাদকে বেশ বড় ধাক্কা দিয়েছে। রাজপরিবার তাদের সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছে। আর আলোচনা না করে তারা যেভাবে রাজ পরিবার ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন, তা নিয়ে বেশি আহত হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হ্যারি ও মেগান এই সিদ্ধান্ত জানানোর আগে রানি বা প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করেননি এবং বিষয়টি নিয়ে বাকিংহাম প্যালেস অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েছে। রাজ পরিবারের অন্য জ্যেষ্ঠ সদস্যরাও আহত হয়েছেন ওই ঘোষণায়।
বিবৃতিতে হ্যারি ও মেগান লিখেছেন, বহু মাস ধরে চিন্তাভাবনা আর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। গত অক্টোবরে তারা বলেছিলেন, রাজ পরিবারের সদস্য হিসেবে সারাক্ষণ গণমাধ্যমের নজরে থাকতে হয় বলে ব্যক্তিগত জীবন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তার তিন মাসের মাথায় তারা নিজেদের ইনস্টাগ্রামে রাজ পরিবার ছাড়ার ঘোষণা দিলেন। ঘোষণায় ব্রিটিশ রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের দায়িত্ব থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার কথাও বলেছেন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, আর্থিকভাবে নিজেদের স্বনির্ভর করতে এবং যুক্তরাজ্য ও আমেরিকায় তাদের সময় ভাগ করে নিতে চাই আমরা। গত কয়েক মাসের প্রেক্ষাপট ও নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর আমরা এ বছর নিজেদের নতুনভাবে তুলে ধরতে এ পরিকল্পনা নিয়েছি। আর এজন্যই রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের দায়িত্ব থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতে চাই। আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি রাণীর প্রতিও আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সন্তান আর্চির বেড়ে ওঠার পাশাপাশি নতুন একটি দাতব্য সংস্থা খোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের সিদ্ধান্ত সহায়ক হবে বলে যুক্তি দিয়েছেন তারা।
প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেলের আকস্মিক ঘোষণায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ রাজপরিবার। বাকিংহাম প্যালেস এ বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানতো না বলে জানিয়েছেন রাজপরিবারের মুখপাত্র জনি ডিমন্ড। হ্যারি ও মেগানের বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা পরেই বাকিংহাম প্যালেস থেকেও বিবৃতি দেয়া হয়। রাজপরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা বুঝতে পারছি তারা আলাদা জীবন চাইছেন, তবে এটি জটিল বিষয় এবং এটি নিয়ে কাজ করতে সময় লাগবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অভিনেত্রী মেগান তার কাজের সূত্রে এক সময় টরন্টোতে কাটিয়েছেন। সেখানে তার বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব আছে। আর রাজ পরিবারের জীবনে অনেক কিছুর সঙ্গেই তারা মানিয়ে নিতে পারছেন না। অনেক মানুষের মধ্যে এলে হ্যারি ও মেগান দুজনকেই দারুণ প্রাণবন্ত দেখায়। কিন্তু মিডিয়ার ক্যামেরা আর রাজ পরিবারের গুরুগম্ভীর আচার-অনুষ্ঠানগুলো হ্যারির অপছন্দ।
মেগান এর আগে একটি পেশার জীবন কাটিয়ে এলেও প্রাসাদের জীবনে প্রতিদিনের রুটিন মানতে গিয়ে মেজাজ হারাতে দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, বোবা পুতুল হয়ে তিনি থাকতে চান না। কিন্তু যখনই সোচ্চার হয়েছেন, তাকে সমালোচনার মূখে পড়তে হয়েছে।
অবশ্য তারাই প্রথম নন, হ্যারির মা প্রিন্সেস ডায়ানাও প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিচ্ছেদের আগে ১৯৯৩ সালে রাজকীয় দায়িত্ব কমিয়ে নিজের মত জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার আগে ১৯৩৬ সালে রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড তো মার্কিন নারী ওয়ালিস সিম্পসনকে বিয়ে করার জন্য সিংহাসনই ত্যাগ করেছিলেন। এছাড়া হ্যারির চাচা প্রিন্স অ্যান্ড্রু গতবছর শেষ দিকে এপস্টেইন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে রাজকীয় দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আর অ্যান্ড্রুর সাবেক স্ত্রী সারাও তাদের বিচ্ছেদের পর রাজকীয় দায়িত্ব থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন।