দেশে প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে যে হারে যোগ্য শিক্ষার্থী বেরিয়ে আসছে, তাদের সবার জায়গা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না। আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলেও অনেকে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিষয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পায় না। এই শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই চলে যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শিক্ষার্থীদের চাহিদা সন্নিবেশ করে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠা শুরু হয় ১৯৯২ সাল থেকে। প্রায় সিকি শতাব্দীর পথপরিক্রমায় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারেনি।
এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনীহাই যে মূল কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে মেয়েদের আবাসন ব্যবস্থা করা গেলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর যেমন চাপ কমত, তেমনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ত।
এখন অনেকটা বাধ্য হয়েই অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে থাকেন। ২৫ বছরের পথপরিক্রমায় দেশে এখন ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে উচ্চতর আদালতের নির্দেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ আছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণার তেমন সুযোগ নেই। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, সব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে বলে মনে হয় না। শিক্ষা এখানে বাণিজ্য, এমন অভিযোগ অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।
ভাড়া বাড়িতে যত্রতত্র গড়ে ওঠা ক্যাম্পাস, লাইব্রেরি ও গবেষণাগারের সুযোগ না থাকা, শিক্ষকদের যোগ্যতায় ঘাটতি, এমন আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। মানসম্পন্ন লেখাপড়া নয়, সনদ বিক্রিই কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য, এমন অভিযোগও পাওয়া যায়।
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়মের মধ্যে আনতে ২০১০ সালে পাস হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন। এই আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে, যাত্রা শুরুর সাত বছরের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হবে।
এই আইন পাস হওয়ার পর ২০১২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এরপর দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন বিশ্ববিদ্যালয়েরও ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দেশের ৩৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পাঁচটির বেশি আগামী পাঁচ মাসে তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারবে না। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে না পারলে আইন অনুযায়ী এসব বিশ্ববিদ্যালয় আউটার ক্যাম্পাসে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবে না।
এদিকে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে না পারলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কী হবে? তখন কি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে?
আমরা মনে করি, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই আইন মেনে চলা উচিত। আইন অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার যোগ্যতা হারাতে যাচ্ছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক করতে পারে।
দৈনিক কালের কন্ঠের সম্পাদকীয়