বেসরকারি শিক্ষকের বৈশাখ বন্দনা - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি শিক্ষকের বৈশাখ বন্দনা

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

দেশের পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর মনে এবার পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষকে ঘিরে অন্য এক আনন্দ। দিনটি নিয়ে গত চার-পাঁচ বছরে তাদের মনে যে কষ্ট সঞ্চারিত হয়েছিল, তা আপাত প্রশমিত হয়েছে। বাঙালি জাতির জনকের তনয়া শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবশেষে তারা এই ন্যায্য অধিকারটি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। সে কারণে শিক্ষা ও শিক্ষকদের দুর্দিন ঘুচাতে একজন শেখ হাসিনার ওপর শিক্ষক সমাজের যে আস্থা ও বিশ্বাস, সেটি অন্য কারো ওপরে নেই। একজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিক্ষা ও শিক্ষকদের প্রতি যে দরদ ও ভালোবাসা দেখিয়ে গেছেন, তা বিস্মৃত হবার নয়। শেখ হাসিনার বেলায়ও তাই। এ কারণে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের প্রাক্কালে দেশের পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অবিরত কৃতজ্ঞতা ও নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে মূলত এ লেখার সূত্রপাত।

জয়তু শেখ হাসিনা, পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী পরিবারকে প্রকৃত বাঙালিয়ানার স্বাদ পাইয়ে দেবার জন্য। সত্যি, আপনার অবদান ভুলবার নয়। পাঁচ লাখ পরিবারে কম করে বিশ লাখ মানুষের হৃদয় স্পন্দনে আলোড়িত হবে এবারের পহেলা বৈশাখ। বাঙালির চিরায়ত নববর্ষ। আর এ কারণে আপনি হাজার বছর ধরে তাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন।

বৈশাখি ভাতায় টাকার অঙ্ক তেমন কিছু নয়। কিন্তু মনস্তাত্বিক বিবেচনায় বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে এর গুরুত্ব অসীম। বেসরকারি শিক্ষকদের এ থেকে বঞ্চিত রেখে তাদের জাতীয়তাবাদের অঙ্গীকার থেকে দূরে সরিয়ে রাখার কূট-কৌশল যারা করেছিল তারা শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছে। জয় হয়েছে বেসরকারি শিক্ষক সমাজের। জয় হয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদের। জয় হয়েছে আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা গত চার বছর নিরামিষ ও নিরানন্দ বৈশাখ পার করেছেন। কী মনঃকষ্টেই না সে বৈশাখগুলো অতিবাহিত করেছেন তারা! সে আনন্দের বৈশাখগুলো কেউ কি তাদের ফিরিয়ে এনে দিতে পারবে? জানি না উৎসব ভাতা বকেয়া হয় কি-না ? যদি হয়ে থাকে তবে তাদের গত চারটে বৈশাখের বকেয়া ভাতা পরিশোধ করে নিজেদের দায়মুক্ত হবার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আহ্বান জানাই। সেটি করে দিলে তারা অন্তত হারানো বৈশাখের ব্যথা-বেদনা কিছুটা হলেও ভুলে যেতে পারবেন। ঐসব বৈশাখেও বৈশাখি ভাতা তারা আগেই প্রাপ্য হয়েছিলেন। আজ তারা যেটি পেলেন, সেদিন কেন সেটি পাননি-সে জবাবটুকু কার কাছে পাওয়া যাবে? বেসরকারি শিক্ষকদের এভাবেই বঞ্চিত করে বঞ্চনার এক বিশাল পাহাড়ের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। সে বঞ্চনার পাহাড়টিকে গুড়িয়ে দেবে? সকল বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী এক ও অভিন্ন দাবিতে একই প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সোচ্চার না হওয়া পর্যন্ত সে পাহাড়টি দিনে দিনে কেবল বড় হতে থাকবে। এর নিচে চাপা পড়া কষ্ট আর ক্ষোভকে সাথী করে বাঁচতে হবে তাদের। বাঁচাতে হবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ।

আরেকটি বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করি। সেটি হলো, এই পহেলা বৈশাখের আগেই যাতে শিক্ষক-কর্মচারীর হাতে ভাতার টাকা পৌঁছায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে পহেলা বৈশাখের পরে টাকা হাতে আসলে সে টাকার যেমন গুরুত্ব থাকে না, তেমন মজাও মিলবে না। বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ইদের পরে বোনাসের টাকা হাতে আসায় আনন্দের চেয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা কষ্টই বেশি পেয়েছেন। ইদের আনন্দের চেয়ে কষ্টটাই বহুগুণে বড় হয়ে উঠেছে। পহেলা বৈশাখকে ঘিরে এরকম কোনো কষ্টের যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। তাহলে নববর্ষের সব আনন্দ একেবারে মাটি হয়ে যাবে। ব্যাংকারদের সতর্ক করে দিতে হবে। এরা কিন্তু অযথা হয়রানি করে। সরকারের বেঁধে দেয়া শেষ সময়কে তারা তাদের শুরুর সময় মনে করে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতেও এরা সব সময় তা-ই করে। ঈদ বোনাসের বেলায়ও অযথা দেরি করে। বৈশাখি ভাতার বেলায় তাই করবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ছাড় হবার পরও দশ-পনের দিন সময় লাগে! এক টিপে দুনিয়ার এক মাথা থেকে আরেক মাথায় টাকা পাঠাতে দশ মিনিটও সময় লাগে না। অথচ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের টাকা ছাড় দেবার পরও দশ-পনের দিন লাগে। এটি আমার সহজে বোধগম্য হয় না। সবকিছু যেখানে অনলাইনে হয় সেখানে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের বেলায় অফলাইনের কায়-কারবার বন্ধ হওয়া চাই। সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় বেসরকারিরাও যাতে সময় মতো বেতন-বোনাস ও বৈশাখি ভাতা হাতে পান সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হতে হবে।

পহেলা বৈশাখে পান্তা ভাত ও ইলিশের মন কাড়া ঘ্রাণে ভরে উঠুক প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারীর পরিবার। বাঙালির আবহমান সংস্কৃতির ঢেউ খেলে যাক প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারীর ঘরে ঘরে, মন ও মননে। পহেলা বৈশাখের প্রাক্কালে সবার জন্য বাংলা নববর্ষের অন্তহীন শুভ কামনা।

লেখক: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট এবং দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।                                 

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041708946228027