বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মকর্তা নিয়োগে বিধিমালা হচ্ছে - Dainikshiksha

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মকর্তা নিয়োগে বিধিমালা হচ্ছে

বিভাষ বাড়ৈ |

দেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নকে সামনে রেখে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় আনা হচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন। এতদিন কোন নিয়মশৃঙ্খলা ছাড়া চললেও এবার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে করা হচ্ছে বিধিমালা। যেখানে নিয়োগ প্রক্রিয়া, বেতন কাঠামো নির্ধারণ, পদোন্নতি, অবসর সুবিধাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। নতুনভাবে সিলেবাস প্রণয়ন, সেমিস্টারের ক্রেডিট কমানো, বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে নতুন কারিকুলাম সংযোজন, অভিন্ন গ্রেডিং অনুসরণসহ বিষয়ভিত্তিক পাঠে অন্তর্ভুক্ত করা হবে মৌলিক বিষয়। উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের জন্য যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়নেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিষয় পড়ানো হলেও তাদের সিলেবাস নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ের সিলেবাসে অনেক পরিবর্তন জরুরী। এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার চেষ্টায় কাজ শুরু করেছি। দেশের সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের জন্য যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়নেরও উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলছিলেন, পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে একটি যুগোপযোগী ও মানসম্মত কারিকুলাম প্রণয়নের কোন বিকল্প নেই। দেশের আর্থ-সামাজিক চাহিদা, জাতীয় উন্নয়ন ও বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিষয়বস্তুসমূহ কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দেশের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ হচ্ছে যুবশক্তি। তাদের আধুনিক জ্ঞান ও দক্ষতায় গড়ে তুলতে হবে। বিষয়টি অনুধাবন করেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন হেকেপের অর্থায়নে যুগোপযোগী ও মানসম্মত কারিকুলামের রূপরেখা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

জানা গেছে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার একটি হচ্ছে প্রথমবারের মতো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে বিধিমালা প্রণয়ন। ইউজিসির সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়োগবিধির খসড়া প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেও অবসরে যাওয়ার সময় খালি হাতে বিদায় নিতে হচ্ছে তাদের। এখানে শিক্ষকদের পদোন্নতির সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই। নেই কোন বেতন স্কেল, ইচ্ছামতো বেতন নির্ধারণ, যথোপযুক্ত কারণ ছাড়া চাকরিচ্যুত, অর্থ আদায়ের মাধ্যমে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের মনোনীতদের নিয়োগে অগ্রাধিকার, তাদের অযাচিত ক্ষমতার অপব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে শিক্ষকদের অভিযোগ।

সম্প্রতি আশা ইউনিভার্সিটি, সোনারগাঁও ইউনিভর্সিটি, আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে। ইউজিসি কর্মকর্তারা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, নিয়োগবিধি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা ইচ্ছামতো নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে আনতে ইউজিসি উদ্যোগ নিয়েছে। তারা বলেন, ইতোমধ্যে খসড়া নিয়োগবিধি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তা পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন পেলে ইউজিসি থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। প্রজ্ঞাপনে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা বাধ্যতামূলক অনুসরণের নির্দেশনা দেয়া হবে। আশা ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে বলছিলেন, সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারীতেও শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা থাকা জরুরী। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে কোন বিধিমালা না থাকায় শিক্ষকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাদের সব সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। একই অভিযোগ তুলে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির একাধিক শিক্ষক ইতোমধ্যেই অভিযোগ তুলেছেন, মালিকপক্ষ কোন নিয়ম মানেন না। নিয়োগ বিধি না থাকায় তারা শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা তাই চাপিয়ে দিচ্ছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ও পদোন্নতির বিষয়টি সুস্পষ্ট করারও অনুরোধ শিক্ষকরা।

নিয়োগবিধি প্রণয়ন সম্পর্কে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এর ধারাবাহিকতায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধার্থে একটি নিয়োগবিধি তৈরির কাজ চলছে। দেশে বর্তমানে ৯৬টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষকের সংখ্যা (পূর্ণ ও খ-কালীন) প্রায় ১৬ হাজার। এছাড়া প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা এবং সাত হাজার কর্মচারী রয়েছেন।

এদিকে নিয়োগবিধি ছাড়াও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় আসছে নানা পরিবর্তন। যার মধ্যে আছে নতুনভাবে সিলেবাস প্রণয়ন, সেমিস্টারের ক্রেডিট কমানো, বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে নতুন কারিকুলাম সংযোজন, অভিন্ন গ্রেডিং অনুসরণসহ বিষয়ভিত্তিক পাঠে মৌলিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ। অভিযোগ আছে সারাদেশে ৯৬টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে মৌলিক বিষয়ের অভিন্নতা, নির্ধারিত গ্রেডিং অনুসরণ, বিজ্ঞান বিষয়ের বিভিন্ন কোর্সে সময় কমিয়ে আনা, ক্যামিস্টি, বায়োলজি, ফিজিক্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, অর্থনীতি বিষয়গুলোতে গবেষণা ও নতুন সিলেবাস প্রণয়নের নমুনা তৈরি প্রভৃতি। ইউজিসি কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের ইচ্ছামতো চলছে।

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032899379730225