এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ইতোমধ্যে ছাপানো হয়ে গেছে। এ কাজটি করেছে শিক্ষাবোর্ডগুলো। আর অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করেছে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। বোর্ডের তৈরি করা প্রশ্নের সঙ্গে অ্যাসাইনমেন্টের কিছুটা মিল থাকতে পারে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে এইচএসসির প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরিশোধন কাজ শেষ হয়েছে। শুধু মুদ্রণ বাকি। এই স্তরেও অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এবং প্রণীত প্রশ্নপত্র অগ্রাধিকার পাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, আজ রোববার সারা দেশে প্রায় ২২ লাখ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওয়েবসাইটে অ্যাসাইনমেন্ট আপলোড করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেখান থেকে ডাউনলোড করে তা শিক্ষার্থীদের দেবে। তবে কবে জমা দিতে হবে তা নিশ্চিত করে বলা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েই গেছে।
বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষা, সাধারণ বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মতো আবশ্যিক এবং চতুর্থ বিষয়ে কোনো অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে না। এসব বিষয়ে পরীক্ষাও দিতে হবে না। বিভাগভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক করে মোট ৯ বিষয়ে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। ১২ সপ্তাহ চলবে এই কার্যক্রম। প্রতিটি বিষয়ে আটটি করে ২৪টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। মধ্য অক্টোবরে এই কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর এক মাস থাকবে পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়। এর মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হলে মধ্য নভেম্বরে নেওয়া হবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮৪ কর্মদিবস ক্লাস করিয়ে এই দুই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ রোববার সকালে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘কাস্টমাইজড’ (সংক্ষিপ্ত) সিলেবাসের আলোকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হয়ে গেছে। প্রশ্নপত্র ছাপানো হওয়ায় বিকল্প সংখ্যা আগের মতোই থাকছে। এর ফলে আগের চেয়ে এখন ৫০ শতাংশ প্রশ্নের কম উত্তর লিখতে হবে। সব মিলে শিক্ষার্থীদের জন্য যতটা সহজ করা যায়, সেই দিকটি চিন্তায় রাখা হয়েছে। কিন্তু তাদের লেখাপড়া করতে হবে।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম নিয়ে অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। হাবিবুর রহমান নামে ঢাকার এক অভিভাবক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট কঠোর লকডাউন চলবে। বর্তমানে সংক্রমণ পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক পর্যায়ে আছে। এ অবস্থায় অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে স্কুল-কলেজে যাতায়াতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য অটোপাসের পরিবর্তে মূল্যায়ন করেই রেজাল্ট দেওয়া। এখন অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন চলতে থাকবে। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
ছাপানো প্রশ্ন হুবহু অ্যাসাইনমেন্টে দিয়ে দেয়া হবে মর্মে কোনো কোনো গণমাধ্যম লিখেছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে রোববার সকালে চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রশ্ন তৈরি ও ছাপানোর কাজ বোর্ডগুলোর আর অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করেছে এনসিটিবি। এনসিটি কিভাবে জানবে প্রশ্নে কী কী থাকছে? তবে, যেহেতু সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তাই খুব বেশি আনকমন প্রশ্ন করার সুযোগও তো থাকছে না। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মধ্য থেকেই তো প্রশ্ন করতে হবে।
চেয়ারম্যান আরো বলেন, আবশ্যিক বিষয়ে পরীক্ষা না নেওয়ার কারণ দুটি। প্রথমত, সংক্রমণ রোধের চেষ্টা। কেননা আবশ্যিক বিষয়ে শতভাগ শিক্ষার্থীই পরীক্ষার হলে আসবে।
তাদের সঙ্গে এক-দুজন করে অভিভাবক এসে থাকেন। সেই ক্ষেত্রে ঢাকা কলেজ কেন্দ্রের দৃষ্টান্ত দিলে বলা যায়, সেখানে পরীক্ষার্থী ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার হবে আর বাইরে আরও ৩-৪ হাজার অভিভাবক থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা খুবই কঠিন হতো। তাই এ বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে, এসব বিষয়ে ইতঃপূর্বে বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, পরীক্ষা নেওয়া হলে এক বেঞ্চে একজন করে এবং ‘জেড’ আকৃতিতে বসানো হবে। একেক দিন একটি করে গ্রুপের পরীক্ষা থাকবে। এরপরও যদি কোনো কেন্দ্রে আসনব্যবস্থার সংস্থান না হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠানে আসনব্যবস্থা করা যাবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্র সচিবদের স্বাধীনতা দেওয়া হবে বলে জানান আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, যেসব বিষয়ে ব্যাবহারিক আছে, সেগুলোয় ২৫-এর পরিবর্তে ৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে। ইতোমধ্যে এসব শিক্ষার্থীকে কাজ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যাবহারিক খাতা জমাও নিয়েছে। এছাড়া ১২ নম্বরের এমসিকিউ এবং ২০-২৫ নম্বরের সৃজনশীল প্রশ্নের (সিকিউ) অংশের পরীক্ষা হবে। তবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও ফল তৈরি করা হবে পূর্ণমান ধরে (১০০ নম্বরে)। সিকিউ অংশে ২-৩টি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা দেড় ঘণ্টা আর দুই ঘণ্টার পরীক্ষা এক ঘণ্টা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, ২৬ জুলাই এইচএসসি ও সমমানের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া শুরু হবে। ওই স্তরের শিক্ষার্থীদের ১৫ সপ্তাহে মোট ৩০টি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। এতেও গ্রুপভিত্তিক তিনটি করে নৈর্বাচনিক বিষয়ে মোট ছয়টি পত্রে (প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র) এই অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। প্রতি পত্রে পাঁচটি অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। তাদেরও সপ্তাহে দুটি করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা থাকবে।
সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে গত বছরের মতো এসএসসি থেকে ৭৫ আর জেএসসি থেকে ২৫ শতাংশ নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার ফল করা হবে। এসএসসির ক্ষেত্রে নম্বর প্রাপ্তির শতভাগই গুরুত্ব থাকবে জেএসসির ফলের ওপর। যদি পরীক্ষা হয়, তাহলে নৈর্বাচনিক বিষয়ে আগের (জেএসসি ও এসএসসি) ফলে নজর দেওয়া হবে না। অ্যাসাইনমেন্টের ওপর জোর দেওয়া হবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।