ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি প্রশাসন-ইকোনমিক ক্যাডারে - দৈনিকশিক্ষা

ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি প্রশাসন-ইকোনমিক ক্যাডারে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিসিএস প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে ইকোনমিক ক্যাডার। এটি হলে এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিসিএস প্রশাসনের সঙ্গে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি পাবেন। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পরই জনপ্রশাসনের মাধ্যমে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) তাদের পদোন্নতির কাজ চূড়ান্ত করবে। এর মাধ্যমে পদোন্নতি থেকে প্রায় ১০ বছর পিছিয়ে পড়া কর্মকর্তাদের ব্যবধান দূর হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্নিষ্টদের চাপের মুখে সরকার ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত করছে। এতে দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা লাভবান হলেও দক্ষতার অভাবে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যাপক ক্ষতি হবে। বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অভিজ্ঞ কর্মকর্তার  সংকট দেখা দেবে।

দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা দুই ক্যাডার একীভূত হওয়া-সংক্রান্ত প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রস্তাবটির সারসংক্ষেপ অধিকতর যাচাইয়ের (ভেটিং) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ভেটিং শেষে যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ অনুযায়ী পদোন্নতি নিয়ে আবারও জটিলতা দেখা দিয়েছে। সারসংক্ষেপে ব্যাচভিত্তিক একীভূতকরণের বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও প্রজ্ঞাপনে সেটি রাখা নিয়ে দুই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। তবে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ীই তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্নিষ্টদের বলে দিয়েছে।

এদিকে, প্রশাসন ক্যাডারের সমপদে পদায়ন, জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ ও একীভূতকরণের সব প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে সারসংক্ষেপে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক ও যুগ্ম সচিবকে (সিপি) সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হবে। তবে ১৪ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এই কমিটিতে ইকোনমিক ক্যাডারের প্রতিনিধি (যুগ্ম প্রধান) থাকবেন মাত্র একজন। বাকি ১৩ জন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।

প্রশাসন ও ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি দুই ক্যাডারের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে। উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য ইকোনমিক ক্যাডারের ১০টি ব্যাচের (১৬-২৫তম) কর্মকর্তাদের একসঙ্গে সুপারিশ করবে এসএসবি। যুগ্ম সচিব পদে ১৫তম ব্যাচ ও অতিরিক্ত সচিব পদে দশম ব্যাচ পর্যন্ত সুপারিশ করা হবে। সচিব হওয়ার ক্ষেত্রেও সমপর্যায়ের ব্যাচকে গুরুত্ব দেবে সরকার। একই 

সঙ্গে পুলভুক্ত (যারা ইকোনমিক ক্যাডার থেকে এসএসবির মাধ্যমে উপসচিব হয়েছেন) ৩৩ জন কর্মকর্তাকেও ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়া হবে। 

এসএসবির যাচাই-বাছাইয়ে রাজনীতিসহ নানা কারণে পদোন্নতি থেকে অনেকে বঞ্চিত হতে পারেন, যা ইকোনমিক ক্যাডারের ক্ষেত্রে হতো না। এ ছাড়া উভয় ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক জ্যেষ্ঠতা নিজ নিজ ব্যাচের সঙ্গে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সম্মিলিত মেধাতালিকা অনুসরণ, উভয় ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে যে তারিখ থেকে ওই পদে কর্মরত আছেন, সেই তারিখ থেকে ওই পদের সমপদে তাদের চাকরিকাল বিবেচনা করা হবে। পদায়নের ক্ষেত্রে বিকল্প রাখা, পদোন্নতির জন্য সিনিয়র স্কেল পদ ও এন্ট্রি পদে মোট চাকরিকাল গণনা, উভয় ক্যাডারে মৌলিক ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এই কমিটি।

ইকোনমিক ক্যাডারে এখন কর্মরত আছেন ৪৬৫ জন ও প্রশাসনে পাঁচ হাজার ১৫০ জন। দুই ক্যাডার একীভূত হলে কর্মকর্তার সংখ্যা হবে পাঁচ হাজার ৬১৫ জন। তবে প্রশাসনের তিন স্তরে (উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব) অনুমোদিত পদের সংখ্যা এক হাজার ৩৬৭টি। এতে একীভূত হয়ে পদোন্নতি পাওয়া অধিকাংশ কর্মকর্তাকে আগের পদেই (ইন সিটু) কাজ করতে হবে অথবা ওএসডি থাকতে হবে। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচ পর্যন্ত উপসচিব রয়েছে। শিগগির ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা উপসচিব হবেন। ইকোনমিক ক্যাডারের ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা উপপ্রধান হিসেবে আছেন। এ ছাড়া প্রশাসনের ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা যেখানে যুগ্ম সচিব, ইকোনমিকের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তারা সেখানে যুগ্ম প্রধান। প্রশাসনের দশম ব্যাচ যেখানে অতিরিক্ত সচিব, ইকোনমিকের ১৯৮৫ (সপ্তম) ব্যাচের কর্মকর্তারা সেখানে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, দেশ এখন মহাপ্রকল্পের যুগে। উন্নয়নের বিশেষ ধাপে পৌঁছে গেছে। মেগা ও ট্রান্সফরমেশন প্রজেক্ট আসছে। এ মুহূর্তে ইকোনমিক ক্যাডারের প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি। এ ছাড়া বর্তমান সময়ের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ার অন্যতম কারণ দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব।

ড. শামসুল আলম আরও বলেন, পাতাল রেল, নদীর তলদেশে প্যানেল, গভীর সমুদ্রবন্দর, মাল্টিলেয়ার ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে ইত্যাদি বৃহৎ প্রকল্পের জন্য অবশ্যই দক্ষ ও বিশেষায়িত ক্যাডার বা সাব-ক্যাডার প্রয়োজন, সেটা যে নামেই হোক। এজন্য একটি শক্তিশালী প্রশিক্ষিত দক্ষ ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। কারণ ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রকল্প প্রণয়ন, বাছাই, মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণসহ সব ধরনের কাজ করতেন। এগুলো বিশেষায়িত কাজ। এজন্য বিশেষ দক্ষতারও প্রয়োজন। দুই ক্যাডার একীভূত হলে কী হবে- এটা বুঝি না। তবে সরকার যদি মনে করে, এটা একীভূত করবে, তাহলে আর করার কী। 

নানা বঞ্চনা থেকে মুক্তি পেতে ইকোনমিক ক্যাডাররা প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত হতে সম্মত হলেও তাদের একটি অংশ প্রশাসনের সঙ্গে যেতে চায় না। এদিকে, ইকোনমিক ক্যাডাররা উন্নয়ন প্রকল্পে নেতৃত্ব দেওয়ায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতো। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাদের নেতৃত্ব মেনে নিতে নারাজ ছিলেন। ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একীভূত হওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হন। এসব বিষয় নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অনেক অনানুষ্ঠানিক অভিযোগও রয়েছে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, দুই ক্যাডার একীভূত হলে নতুন পদও সৃজন করা হবে। নতুন পদ বাড়ানোর সময় তা প্রশাসন ক্যাডারের পদ হিসেবে ধরা হবে। ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত হলে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রশাসন ক্যাডারে যাদের অর্থনীতি বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে, তাদের সেখানে দেওয়া হবে।

বিসিএস ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও পরিকল্পনামন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) ফরিদ আজিজ বলেন, দুই ক্যাডারের সম্মতিতেই একীভূত হচ্ছি। এজন্য উভয় ক্যাডারের মধ্যে একটা সমঝোতা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখনকার প্রশাসন উন্নয়নমুখী। ফলে একীভূত হওয়াতে কোনো সমস্যা হবে না। 

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সাল থেকে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি, পদের নাম পরিবর্তনসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়ে আসায় শেষ পর্যন্ত দুই ক্যাডার একীভূত হয়ে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার পুনর্গঠন করা হচ্ছে। এর ফলে ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা যেমন ইউএনও, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনার হতে পারবেন, তেমনি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বড় প্রকল্পগুলোর পরিচালকও হতে পারবেন।

স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031390190124512