ভর্তি জালিয়াতি ঠেকাতে অভিভাবকদের এনআইডি বাধ্যতামূলক - দৈনিকশিক্ষা

ভর্তি জালিয়াতি ঠেকাতে অভিভাবকদের এনআইডি বাধ্যতামূলক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি জালিয়াতি ঠেকাতে এবার শিক্ষার্থীর আবেদনে বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একটি এনআইডির বিপরীতে একাধিক আবেদন করা যাবে না। 

অভিযোগ রয়েছে, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের মার্ক শিট দেখে আবেদন করিয়ে রাখে। বিশেষ করে যেসব স্কুলে কলেজ শাখা আছে, সেখানে এ ধরনের কাজ বেশি হয়। আর নীতিমালায়, নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের কলেজ শাখায় ভর্তিতে অগ্রাধিকার রাখা হয়েছে। ফলে কলেজ শাখায় কেউ পড়তে না চাইলেও সে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়। শিক্ষার্থীরা যাতে কলেজের কাছে জিম্মি হয়ে না পড়ে সে লক্ষ্যে এবার আবেদনে এই নতুনত্ব আনা হয়েছে। একটি এনআইডি নম্বরের বিপরীতে একাধিক আবেদন করা যাবে না।

আগামী রোববার (১২ মে) থেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয়ভাবে এসএমএস ও অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। তিনটি ধাপে নেয়া হবে আবেদন। প্রথম ধাপে আবেদন করা যাবে ২৩ মে পর্যন্ত। এই পর্যায়ে আবেদনকারীদের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ জুন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন করা যাবে ১৯ ও ২০ জুন। ২১ জুনই এদের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে। তৃতীয় ধাপে আবেদন নেয়া হবে ২৪ জুন। ফল প্রকাশ করা হবে ২৫ জুন। ২৭ থেকে ৩০ জুন শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত কলেজে ভর্তি হতে হবে। ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করা হবে।

জানা গেছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ‘এ’ ক্যাটাগরির কলেজ আছে ৮২টি। আর ‘বি’ ক্যাটাগরির কলেজ আছে ৪৫টি। যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬ শতাধিক এবং পাসের হার ন্যূনতম ৭০শতাংশ, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়েছে। আর যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬০০ এবং পাসের হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ সেগুলোকে ‘বি’ ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়েছে। এই বোর্ডে মোট ১০২০ কলেজের বাকিগুলো ‘সি’ ক্যাটাগরিভুক্ত। শিক্ষার্থীদের আবেদন সংখ্যা এবং পাসের হার বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও শতাধিক কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয়। ওইসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ বিভাগীয় ও জেলা শহরে অবস্থিত। এগুলোর মধ্যে রংপুর বিভাগে রয়েছে ৩২টি, বরিশাল বিভাগে ১৪টি, রাজশাহীতে ৭, চট্টগ্রামে ১৯, খুলনায় ১৩ এবং সিলেট বিভাগে ২৩টি। এ ছাড়া সারা দেশে অর্ধশত মাদরাসা শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে আছে।

এসব কলেজ-মাদরাসায় স্ব স্ব বিভাগের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভিড় করলে সবার সংস্থান হবে না। শিক্ষার্থীদের অতীতের ভর্তির আবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের বাইরে মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরাও ভর্তির আবেদন করবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকট হয় ঢাকা মহানগরের প্রতিষ্ঠানে। ওইসব প্রতিষ্ঠানে সারা দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আবেদন করে থাকে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ঢাকায় এ ক্যাটাগরির কলেজগুলোতে সর্বমোট আসন আছে ৫৭ হাজার আর বি ক্যাটাগরির কলেজে আছে ৫২ হাজার। অতীতে দেখা গেছে, জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী আবেদনে বড় বড় কলেজ পছন্দের তালিকায় রাখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এত ভালো ফল করেও অনেকে প্রথম দফায় চান্স পায় না। এটা মূলত তাদের পছন্দের ভুলের কারণে ঘটে থাকে। এ কারণে ভালো কলেজের তালিকা তুলে ধরতে আমরা এবার কলেজ ক্যাটাগরি করে তুলে ধরেছি। তিনি আরও বলেন, গড়ে ৮০ শতাংশ করে নম্বর পেয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া যায়, আবার গড়ে ৯৫ শতাংশ করে পেয়েও জিপিএ-৫ হয়। কেননা, ৮০ থেকে ১০০ পর্যন্ত নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা জিপিএ-৫ ধারী হিসেবে বিবেচিত। সুতরাং কোনো কলেজে সব আসনের বিপরীতে যদি জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী আবেদন করে তাহলে উচ্চ নম্বর প্রাপ্তরাই চান্স পেয়ে থাকে। কম নম্বর পেয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা বাদ পড়বে। তালিকা প্রকাশের কারণে শিক্ষার্থীদের এখন কলেজ পছন্দ করা সহজ হবে। ক্যাটাগরি দেখে আবেদন করলে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।

সারাদেশে ৮ সহস্রাধিক কলেজ ও মাদরাসায় ভর্তি যোগ্য আসন আছে ২৯ লাখ। এর মধ্যে মাদরাসায় আসন ৮ লাখ। ঢাকা বোর্ডে আসন আছে ৬ লাখ। এবারও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদাভাবে ভর্তির আবেদন নেবে।

এবার মাদরাসা ও কারিগরিসহ ১০টি শিক্ষা বোর্ডে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমান পাস করেছে। এসব শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে থাকে। সাধারণত পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ শতাংশ প্রতি বছর ভর্তি হয় না। তবে ১ শতাংশ পুরনো শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করে থাকে। প্রচুর শিক্ষার্থী মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ড থেকে পাস করে কলেজে ভর্তি হয়। আবার স্কুল থেকে পাস করা অনেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও কারিগরি বোর্ডের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। সেই হিসাবে পাস করা শিক্ষার্থীর চেয়েও যেহেতু সাড়ে ১১ লাখ আসন বেশি আছে, তাই অনেক প্রতিষ্ঠানে আসন খালি থাকবে। আবার অন্যান্য ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার কারণে আরও কমপক্ষে ২ লাখ আসন শূন্য থাকবে। সব মিলে অন্তত ১৩ লাখ আসনই এবার খালি থাকবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ বলেন, অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর পর অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এক সময় এই বোর্ডের অধীন ১৩১০টি কলেজ ছিল। নানা অনিয়মের কারণে কিছু বোর্ড বন্ধ করেছে। বাকিগুলো শিক্ষার্থী না পেয়ে বন্ধ হয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, একই প্রতিষ্ঠানে অধিকসংখ্যক ভালো ফলকারী শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ায় অনেকে চান্স পায় না। তাই এই সংকট থেকে বাঁচতে শিক্ষার্থীকে নিজের মেধাক্রম ও কলেজের আসন বিবেচনায় রেখে কলেজের পছন্দক্রম তৈরি করতে হবে। এতে সহায়তার জন্য নতুন ব্যবস্থা থকবে। তা হচ্ছে, সফটওয়্যারে মেধাক্রম থাকবে। কোনো শিক্ষার্থী যখন অনলাইনে একটি কলেজ পছন্দ করবে, সঙ্গে সঙ্গে সফটওয়্যার শিক্ষার্থীকে তার মেধাক্রম জানিয়ে দেবে। পাশাপাশি কলেজটিতে বা পছন্দের বিভাগে কত আসন আছে তাও ওয়েবসাইটে থাকবে।

 

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054268836975098