ভর্তি পরীক্ষার আগে ১০ ভুল - দৈনিকশিক্ষা

ভর্তি পরীক্ষার আগে ১০ ভুল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

উচ্চমাধ্যমিকের পর শিক্ষার্থীরা সাধারণত কোন ভুলগুলো করে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা বলেছেন, এই সময়টাতে কোন কোন বিষয় ছাত্রছাত্রীদের বিভ্রান্ত করে। ছাত্রছাত্রীদের বলা ভুলগুলো থেকে বাছাই করা ১০টি তুলে ধরা হলো। রোববার (১৬ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন তাহমিদ উল ইসলাম।

১. লক্ষ্য নির্ধারণে ব্যর্থতা

এইচএসসি পরীক্ষার পর সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণে ব্যর্থ হন অনেক শিক্ষার্থীই। তাঁরা তাঁদের নিজেদের ভালো লাগার জায়গাটি বুঝতে পারেন না। সিদ্ধান্ত নেন পরিবারের চাপে পড়ে। অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে একাধিক জায়গার প্রস্তুতি একসঙ্গে নেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাওয়াদ আবদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘অনেকেই একসঙ্গে একাধিক নৌকায় পা দেয়। এর ফলে কোনো প্রস্তুতিই তারা ভালোভাবে নিতে পারে না। এটাই পরে ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

২. অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কিংবা আত্মবিশ্বাসের অভাব

অনেকের মধ্যে দেখা যায় অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস; আবার অনেক শিক্ষার্থীই পর্যাপ্ত আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভালো করতে পারেন না ভর্তি পরীক্ষায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আদহাম হোসেনের ভাষায়, ‘ভর্তি পরীক্ষায় অনেক প্রতিযোগী দেখে অনেকেই ভয় পেয়ে যায়, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এই আত্মবিশ্বাসহীনতা তাদের হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। আবার মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও ক্ষতিকর। ভালো ফলের জন্য দরকার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচেষ্টার সংকল্প।’

৩. না বুঝে মুখস্থ করার প্রবণতা

ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে বিষয়ভিত্তিক গভীর জ্ঞান অর্জন না করে মুখস্থ করার ঘোর বিরোধী ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারী স্বপ্নীল আবদুল্লাহ, ‘না বুঝে মুখস্থ করে সাময়িকভাবে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু পুরো বইয়ের ওপর পরীক্ষা হলে অথই জলে পড়তে হয়। তখন আর মুখস্থ করে পার পাওয়ার সুযোগ থাকে না। যদিও একবার ভালোভাবে বিষয়টি বুঝে নিলে তা সহজেই মনে পড়ে যায়।’

৪. দীর্ঘসূত্রতা

‘ভবিষ্যতে পড়ব বলে পড়া জমিয়ে রাখা এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার না করা একটি বদ অভ্যাস। এর ফলে শিক্ষার্থীদের শেষ সময়ে অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না।’ বলছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক হৃদয়। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সময় থাকে সীমিত। এবং এই সীমিত সময়ের সদ্ব্যবহার করাটা সফলতার জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তিনি। 

৫. গ্যাজেটের অতি ব্যবহার

সময় যেহেতু সীমিত, তাই এর সঠিক ব্যবহারের দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। অনেকেই এই সময়টা অপচয় করে থাকেন স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্র ব্যবহারে, যা তাঁদের সফলতার পথে একটি বড় বাধা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইজুন নাহারের মত, ‘এটা সত্যি যে গ্যাজেট ব্যবহার করে পড়াশোনার অনেক ব্যাপারে সাহায্য নেওয়া যায়। কিন্তু গ্যাজেটের অতিরিক্ত ব্যবহার মনোযোগের বিঘ্ন ঘটায়, নষ্ট করে সময়ও।’ তিনি মনে করেন, গ্যাজেটের ব্যবহার একদম বন্ধ করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং এর পরিমিত ব্যবহার শিক্ষার্থীদের নতুন তথ্য জানার মাধ্যমে সচেতন হতে সহায়তা করে। 

৬. অতিমাত্রায় কোচিং নির্ভরতা

শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ মনে করে, শুধু একটি ভালো কোচিংয়ে পড়তে পারাটাই যথেষ্ট। কিন্তু ভর্তিযুদ্ধে ভালো করতে হলে নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রমের দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মীর আকিব জাওয়াদের মতে, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলে কোচিং করতেই হবে, এমন কোনো কথা নেই। কোচিং মূলত একটি নির্দেশনা দেয়। তবে পড়ার কাজটা নিজেরই।’ 

৭. অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা

সত্যিকারের প্রতিযোগিতা মূলত নিজের সঙ্গে। অথচ অনেক শিক্ষার্থীই অন্যের সঙ্গে অতিমাত্রায় তুলনা করেন নিজেকে; এর ফলে হতাশা ঘিরে ধরে তাঁদের। এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রূপন রেশাদ মনে করেন, অন্যদের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করাটা বোকামি, কেননা এটি হাল ছেড়ে দেওয়ার পর্যায়ে নিয়ে যায় মানুষকে। তাঁর মতে, নিজের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করাটাই উত্তম। 

৮. পর্যাপ্ত অনুশীলনের অভাব

ভর্তি প্রস্তুতিতে প্রয়োজন প্রচুর অনুশীলন। অনুশীলনের মাধ্যমে কেটে যায় আত্মবিশ্বাসহীনতা, বাড়ে দক্ষতাও। আর এ বিষয়ে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আসিমা কামাল শোনান তাঁর গল্প, ‘ভর্তি মৌসুমে আমি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের জন্য। কিন্তু পর্যাপ্ত অনুশীলন করতে পারিনি। আর এর ফলাফল মোটেও ভালো হয়নি। তাই ভর্তি-ইচ্ছুকদের জন্য আমার পরামর্শ হলো, এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই পড়া শুরু করতে হবে। অনুশীলন শুরু করতে হবে প্রথম দিন থেকেই। প্রতিটি বিষয়ে দিতে হবে পর্যাপ্ত মনোযোগ।’ 

৯. অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে মনোযোগ বেশি দেওয়া

ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে হাতে সময় থাকে সীমিত। তাই পড়তেও হয় বাছাই করে। এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায় পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্ন দেখলে, যা অনেক শিক্ষার্থীই করে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারহানা রশিদ বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় কিছু বিষয় ঘুরেফিরে আসে। সেগুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। আর মৌলিক ধারণাগুলোও থাকা চাই পরিষ্কার।’

১০. অন্যের পছন্দে বিষয় মনোনীত করা

অনেক ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় অন্যের পছন্দ অনুযায়ী বিষয় বেছে নেন। বিষয়টির প্রতি তাঁর ভালোবাসা আছে কি না, সেদিকে নজর দেন না। এর ফলে কয়েক সেমিস্টার পরেই দেখা যায় হতাশা। আশানুরূপ ফল অর্জন করাও হয়ে ওঠে কঠিন। এ বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম বলেন, ‘এখন অনেকেই গতানুগতিকতার বাইরের বিষয়গুলো পড়তে চান। অনেকের পছন্দের বিষয় থাকলেও দেখা যায় তা অভিভাবকদের প্রত্যাশার সঙ্গে মিলছে না। এ রকম পরিস্থিতিতে সাধারণত মানুষ নিজের পছন্দের বিষয় বেছে না নিয়ে অন্যের মত দ্বারা প্রভাবিত হয়।’

আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029399394989014